Post Thumbnail

চার কারণে নির্বাচন নিয়ে তোড়জোড় বিএনপির


গত ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য সময়সীমা ঘোষণা করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণা সন্তুষ্ট করতে পারেনি দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিকে। গত বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে হতাশা প্রকাশ করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুধু তাই নয়, গত বুধবার রাতে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির সভায়ও এ বিষয়ে নেতারা হতাশা প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে এতো তাগিদের পর প্রধান উপদেষ্টা শেষ পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন; কিন্তু এ বিষয়ে তিনি ‘রহস্য’ রেখে দিয়েছেন, যা বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নানা সংশয়-সন্দেহের উদ্রেক করছে বলে মনে করে বিএনপি। 

বিএনপির দলীয় সূত্রগুলো দাবি করছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান কাজ হলো দেশে একটি নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করে দ্রুত নির্বাচন দেয়া। এর জন্য যতটুকু সংস্কার না করলেই নয় সেটি করতে হবে। তাছাড়া অন্যান্য সংস্কার সাধন করবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সংসদ। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখন পর্যন্ত নির্বাচনের দিনক্ষণ বা রোডম্যাপ ঘোষণা করেনি। প্রশ্ন হচ্ছে নির্বাচন নিয়ে বিএনপির এতো তোড়জোড় কেন? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মূলত চারটি কারণে নির্বাচন নিয়ে বিএনপি এতো তোড়জোড় করতে থাকতে পারে বলে মনে করছেন। এর মধ্যে

১. জনসমর্থন হারানোর শঙ্কা: গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজি, দখলসহ নানা অনিয়ম অব্যাহত রয়েছে। অথচ যে কোনো বিশৃঙ্খলা রোধে কঠোর অবস্থানে বিএনপির হাইকমান্ড। যেখানেই যার বিরুদ্ধে বিশৃঙ্খলা ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, যাচাই সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবু থামছে না একশ্রেণির অসাধু নেতাকর্মী। তাদের অন্যায়-অপকর্মের গ্লানি টানতে হচ্ছে দলের নীতিনির্ধারকদের। স্থানীয়ভাবে এসব নেতাকর্মীর অপকর্মে বিব্রত দলটির শীর্ষ নেতারা। বিএনপি মনে করছে, নির্বাচন যত দেরিতে অনুষ্ঠিত হবে, ততই তাদের জনসমর্থন কমবে। কারণ ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। যদিও দলটির পক্ষ থেকে এব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে এবং ইতিমধ্যে শতাধিক নেতাকর্মীদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু এরপরও নেতাকর্মীদের এই প্রবণতা বন্ধ করা যাচ্ছে না। বরং নিজ দলের কর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে দ্বন্দ্ব বাড়ছে।

২. নতুন রাজনৈতিক দল গঠন: বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ধারা যুক্ত করতে শিগগির নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন হতে যাচ্ছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। ইতিমধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’ নামক একটি প্ল্যাটফর্ম গঠন করেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ সারাদেশ ব্যাপী সভা সেমিনার করছে। শিগগির তারা ‘জনশক্তি’ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছে বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে চাউর হয়েছে। যদিও ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’র পক্ষ থেকে এ ধরনের গুঞ্জনকে অস্বীকার করা হয়েছে। কিন্তু সরকারের পৃষ্টপোষকতায় যদি এ ধরনের ‘কিংস পার্টি’ গঠিত হয় তবে সেটি বিএনপির ওপর আলাদা একটি চাপ সৃষ্টি করবে এবং দলটি রাজনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক শীর্ষ নেতা সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আছেন এবং তাদেরকে প্রভাবশালী মনে করা হয়। যে কারণে বিএনপি যত দ্রুত সম্ভব একটি নির্বাচন করতে চায়।

৩. অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতা: বিএনপি মনে করছে, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করাসহ অর্থনীতিতে গতি আনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও প্রশাসনে স্থিতিশীলতা আনতে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হয়েছে। সরকার এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি ভালো ভাবে সামাল দিতে পারছে না। আর এতে মানুষের মধ্যে সরকার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে। দ্রুত নির্বাচনের দাবির পেছনে এ পরিস্থিতিকেও অন্যতম কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে। দলটি মনে করছে, নির্বাচন যত দেরি হবে, সংকট ততই বাড়বে।

৪. গণ-অভ্যুত্থানের স্মৃতি ভুলে যাওয়া: বিএনপির দ্রুত নির্বাচনের দাবির পেছনে আরেকটি অন্যতম কারণ হলো অন্তর্বর্তীকালীন যেভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হচ্ছে তাতে করে দ্রুত মানুষ গণ-অভ্যুত্থানের কথা ভুলে যেতে পারে। ইতিমধ্যে ‘আওয়ামী লীগের আমলই ভালো ছিলো’- এধরনের কিছু কথাবার্তা সাধারণ মানুষের মধ্যে ফিসফাস হচ্ছে। এরকম বাস্তবতায় যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচন দিতে দেরি করে সেক্ষেত্রে সংকট আরও বাড়বে। আর এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হলে ক্ষমতায় যাওয়ার বিএনপির জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। সে কারণে নির্বাচনের জন্য তোড়তোড় করছে বিএনপি।


Comments

Leave a Comment


Related Articles