বিনয়, শ্রদ্ধা, সম্মান- শব্দগুলোর যেভাবে মৃত্যু হচ্ছে
সৈয়দ বোরহান কবীর: আমার বয়স এখন ৬০ ছুঁই ছুঁই। এবয়সেও বাবার কোন বন্ধু যারা এখনো বেঁচে আছেন তাদের দেখলে পা ছুঁয়ে সালাম করি। কদিন আগে ক্যাডেট কলেজের এক শিক্ষকের সাথে দেখা হলো। তাকে দীর্ঘদিন পর দেখে যেমন আপ্লুত হলাম তেমনি শ্রদ্ধায় নত হলাম। শুধু আমি নই। আমাদের জেনারেশনের সবাই এখনো বয়স্ক মানুষ দেখলে সিগারেট ফেলে দেন অথবা লুকিয়ে ফেলে। কোন গুরুজন দেখলে চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে যান। গুরুজনকে সম্মান দিয়ে কথা বলেন। সম্মান, শ্রদ্ধা, বিনয় এগুলো আমাদের সমাজের একেকটি ভিত্তির মতো। এ ভিত্তির উপরই আমরা এখনো আমাদের দাঁড়িয়ে আছি। এখনো যে আমরা একটি নিবিড় সামাজিক সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ, একে অন্যের প্রতি সহানুভূতি দেখাই, একে অন্যের বিপদে ঝাপিয়ে পড়ি তা এসব কিছুই দীর্ঘদিনের চলে আসা রীতি মূল্যবোধের কারণে। এই রীতিগুলোই আমাদের শেকড়। এই শেকড় এতো গভীর যে, আমাদের সামাজিক বন্ধনগুলোকে কখনোই উপড়ে ফেলা যায় না। একারণেই আমরা পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত, সম্পর্কিত। বাংলাদেশে এজন্যই কিন্তু ইদানিং কেন যেন আমার মনে হচ্ছে আমরা সেই সামাজিক রীতি এবং ঐতিহ্যগুলোকে ইচ্ছে করে নষ্ট করে ফেলছি। গলা টিপে এ সমস্ত মূল্যবোধের মৃত্যু ঘটাচ্ছি। বদলে যাও, বদলে যাবো অথবা সবকিছু বদলে দেয়ার যে রীতি শুরু হয়েছে সেই রীতিতে শ্রদ্ধা, সম্মান, বিনয়ের মতো সামাজিক রীতি ও সংস্কৃতিগুলো যেন উপড়ে ফেলার চেষ্টা চলছে। এটি একটি ভয়ংকর প্রবণতা। গত কিছুদিন ধরে এই প্রবণতাটি আরো গভীরভাবে বেড়ে চলেছে। কিছুদিন আগে দেখছিলাম বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা শিক্ষককে টেনে হিচড়ে ক্লাসরুম থেকে বের করে দিচ্ছে। শুধু ছোট ছোট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষাঙ্গনগুলোতেও ঘটছে শিক্ষকদের অপমান, অপদস্ত করার ঘটনা। অনেককে শারীরিকভাবেও হেনস্তা করার ঘটনা ঘটছে।
আমার মা একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। দীর্ঘ ৩৭ বছর তিনি শিক্ষকতা করেছেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক যেন ছিলো অভিভাবকের মতো। তাদের বিপদে-আপদে তিনি যেমন ছুঁটে যেতেন তেমনি শিক্ষার্থীরাও তাকে শ্রদ্ধা করতো। এই শ্রদ্ধা আরোপিত নয়, হৃদয় থেকে উৎসারিত। এখন শিক্ষকরা কি সেই শ্রদ্ধা, সম্মান পান? এজন্য শিক্ষকদের দায় যে নেই তা না। কিন্তু তা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত তিনি একজন শিক্ষক। একজন শিক্ষককে আমরা কি লাঞ্ছিত করতে পারি? তাকে কি টেনে হিঁচড়ে নামাতে পারি? তার গায়ে কি আমরা হাত তুলতে পারি? এটা কি সম্ভব? বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কথাই ধরা যাক-ভিন্ন মত বা বিরুদ্ধ মত বা অন্য কোন কারণে বহু শিক্ষক এখন ক্লাস নিতে পারছেন না। তাদের ক্লাস শিক্ষার্থীরা বর্জন করছে। তাদের হুমকি দেয়া হয়েছে। তাদের কাউকে কাউকে ডিন, চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। অনেকটা হুমকি দিয়ে। এসব কিসের আলামত? এগুলো কি আমাদের সমাজের সাথে যায়? ‘বদলে যাও, বদলে দাও’ বললেই কি সব কিছু বদলে দেয়া যায় কিংবা দেয়া উচিত? ইদানিং আমরা লক্ষ্য করছি, মানুষের প্রতি বিশেষ করে প্রবীণ নাগরিকদের প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধার এক ভয়ংকর ঘাটতি। এই ঘাটতি আমাদের সমাজকে এক অন্ধকার দিকে নিয়ে যাবে।
সাম্প্রতিক সময়ে, রাষ্ট্রপতির অপসারণ নিয়ে রাজনীতিতে এক উত্তাপ চলছে। বিশেষ করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির অপসারণের বিষয়টি নিয়ে আওয়াজ উঠেছে। এনিয়ে তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা-বার্তা এরকম দাবি উচ্চারিত হতেই পারে। রাষ্ট্রপতির বিষয়ে শিক্ষার্থীদের নিজস্ব মতামত থাকতেই পারে। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ বা রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের দাবি যে কেউ করতেই পারে। এটি তার নিজস্ব ব্যাপার। কিন্তু রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তি। তিনি একজন বয়ঃপ্রবীণ মানুষ। এরকম একজন প্রবীণ, রাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তিকে তার ডাক নাম ধরে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে ডাকা কতটা শোভন? এটি কি আমাদের সংস্কৃতির অংশ? এই ঐতিহ্যে কি আমরা লালিত? আমাদের সমাজে এটি কেউ ভালো চোখে দেখে না। গুরুজনের নাম তাচ্ছিল্য ভরে ডাকা আমাদের চর্চা নয়। এধরনের সংস্কৃতিতে আমরা অভ্যস্ত নই। এটি আমাদের পারিবারিক, সামাজিক কিংবা বিদ্যালয়ের শিক্ষাও নয়।
শুধু রাষ্ট্রপতিকে নয়। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা কিছু অমানবিকতা, পাশবিকতা লক্ষ্য করছি। মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা এবং সম্মানের জায়গায় হিংসা-ঘৃণা এবং ক্ষোভগুলো যেন সহিংস এবং পৈশাচিক রূপ পেতে শুরু করেছে। এই রূপ যেন বাংলাদেশের নয়। আমরা একজন মানুষকে তার কর্মের জন্য অবশ্যই শাস্তি দিবো। তার কর্মের জন্য তার সমালোচনা করবো। কিন্তু সেই সমালোচনা করার ভাষায় হতে হবে শালীনতার মধ্যে। তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে তার নাম বিকৃত করে উচ্চারণ করার মধ্যে কোন বীরত্ব নেই। কাউকে ছোট করে, অপমানিত করে কিংবা অবজ্ঞা করে আমাদের প্রাপ্তি যোগ শূণ্যই থেকে যাবে এতে আমরাই ছোট হবো। এটি সমাজে একটি ভিন্ন ধরনের বার্তা দেবে। আজকে যদি সমাজ থেকে সম্মান, শ্রদ্ধাবোধ আর বিনয়ের চর্চাগুলো উঠে যায় তাহলে আমরা আগামীতে সামাজিক বন্ধনগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। সমাজটাই হবে প্রতিহিংসা এবং প্রতিশোধের রণক্ষেত্র।
চাইলেই সবকিছু বদলে দেয়া যায় না। একজন পিতা যত অক্ষম হোক না কেন তিনি পিতাই। পিতাকে কখনো অসম্মান করা যায় না। পিতাকে তাচ্ছিল্য করা যায় না। পিতার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা যায় না। একজন গুরুজনকে সম্মান দিতেই হবে। তার সাথে ভিন্ন মত থাকতে পারে। ভিন্ন মতের সংগ্রাম করাও অযৌক্তিক নয়। সেটা যুক্তি নির্ভর হতে হবে। অশ্রদ্ধা, বলপ্রয়োগ কখনো ভিন্ন মত দমনের অস্ত্র হতে পারে না। আমরা কিছুদিন আগে লক্ষ্য করলাম একজন প্রবীণ নারী নেতার বাড়ি তছনছ করে, তাঁর অন্তবাস নিয়ে উল্লাস করা হলো। এটি কি কেবলই বিক্ষোভ-ক্ষোভ? নাকি এক ধরনের বিকৃতি? এই বিকৃতি আমাদের সমাজ থেকে আমাদের হাজার বছরের মূল্যবোধ, চর্চা এবং রীতিগুলোকে খেয়ে ফেলতে উদ্যত। এর পরিণাম কারো জন্যই ভালো হবে না। সমাজ থেকে যদি বিনয়, শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসা, সম্মান বিলীন হয়ে যায় তাহলে এই সমাজ হয়ে যাবে হিংসার, হানাহানির। এই সমাজ হবে জিঘাংসার। এই সমাজে কেউই নিরাপদ থাকবে না। বল প্রয়োগের সংস্কৃতি সমাজকে জঙ্গলের শাসনের পথে নিয়ে যাবে।
আমরা যদি বড়দের সম্মান করতে না পারি তাহলে আগামীকাল আমরাও যখন বড় হবো তখন আমরা কি সেই সম্মান পাবো? আজ যাদের রক্তে তারুণ্য টগবগ করছে, আগামীকাল তারা প্রবীণ হবেন। সেই সময়ের তরুণরা তাদের সঙ্গে কি ভাষায় কথা বলবেন? তা ভাবতে হবে আমাদেরকে। আমরা আজ যা করবো কাল তার প্রতিদান পাবো। এই সত্যটিই চিরন্তন। এই সত্যটি যদি আমরা ভুলে যাই তাহলে ক্ষতি হবে আমাদেরই। তরুণরা একটি নতুন সমাজ বির্নিমাণ করতে চায়। আমরা অতীতের সবকিছু বদলে দিতে চাচ্ছি। রিসেট বাটন টিপে আমরা সব অপকর্ম, বঞ্চনা মুছে দিতে চাচ্ছি। ভালো কথা! কিন্তু সবকিছু বদলে দেয়া যায় না। শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, পারিবারিক সম্পর্ক, গুরুজনের প্রতি সম্মান ইত্যাদি রীতিগুলো কখনো বদলানো যায় না। সম্পর্ক কখনো বদলানো যাবে না। আমরা এক নিবিড় পারিবারিক বন্ধনে আবদ্ধ সমাজ। যে সমাজে ছোটরা বড়দের শ্রদ্ধা করে, বড়রা ছোটদের স্নেহ করে, অভিভাবকরা সারা জীবন পরিশ্রম করে ছোটদের জন্য এক বাসযোগ্য আবাস তৈরির উদ্দেশ্যে। এই সমাজের মূলভিত্তি হলো সহনশীলতা, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। আমরা যদি এই শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সম্পর্কগুলোকে নষ্ট করে ফেলি তাহলে আমরা যতোই বিজয়ী হয় শেষ পর্যন্ত আমরা তো পরাজিত।
সৈয়দ বোরহান কবীর, নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com
Comments
ফরিদুর রহমান
2 months ago১০০% খাঁটি কথা বলেছেন। আপনার মূল্যবান লেখনীর জন্য ধন্যবাদ। আরো লিখুন।
mahmudur rahman monzu
2 months agoঅত্যন্ত সুন্দর লিখেছেন তাই আপনাকে অন্তরের অন্তস্থল থেকেই অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার এই লেখার ভাষা যারা নতুন স্বাধীনতা বলে চিৎকার করে তারা বুঝবে না। কারণ তাদের মাথায় তো স্বাধীনতা বিরোধী চিন্তাধারা। নিজের মনকে প্রশ্ন করে পারছি না আসলে এদের হবে কি আর এরাও বা কি চায়। একটি সাজানো-গোছানো বাংলাদেশকে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নামে ধ্বংস করে দিয়ে কি মজা পেল। ওরা নাকি সমন্বয়ক কয়টা বাচ্চা ছেলে। যেভাবে বাংলাদেশের মধ্যে খবরদারি করে বেড়াচ্ছে। তা দেখলে মনে হয় পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র তাদের হাতেই। লক্ষ্য করে দেখেছিলাম মানুষকে সম্মান করতে জানে না সম্মান শ্রদ্ধা করে না।এদের মধ্যে আবার কেউ কেউ বলে তাও খুদ টেলিভিশনের ক্যামেরার সামনে মেট্রোরেলে আগুন না দিলে পুলিশ হত্যা না করলে এমনকি মানুষের বাড়ি ঘর জ্বালাও পড়াও না করলে তারা নতুন স্বাধীনতা পেতনা। আপনার মাধ্যমে আমার প্রশ্ন ওই কুলাঙ্গারদের কাছে স্বাধীনতা দেশে কয়বার হয়। যে দেশে ৩০ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়ে অফুরন্ত রক্তের বিনিময়ে লাল সবুজের পতাকা এনে দিয়েছিল আজ তোমরা সেই স্বাধীনতাকে অস্বীকার করো। এই প্রজন্মে অথবা এর পরের প্রজন্ম বুঝবে কি তোমরা দেশদ্রোহী তোমরা পাকিস্তানের প্রেতাত্মা অথবা বাংলাদেশ ধ্বংস করার জন্য কোন জঙ্গি সংগঠন।তোমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে যেভাবে হেনস্তা করে কথা বল তাতে তোমাদের বোঝার দরকার তোমাদের সামনের দিন মনে হয় ভালো যাবে না। আর এই সুন্দর লেখা যিনি লিখেছেন লেখককে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন আশা করি সামনের দিকে আরো ভালো ভালো লেখা আমরা পাব।
Amit Kumar Dey
2 months agoশ্রদ্ধা, সহনশীলতা, ভালোবাসা, সৌহার্দ্য, সহমর্মিতা, ঔচিত্যবোধ, বিনয়, সভ্যতা-ভব্যতা, মানবহিতৈষীতা, মননশীলতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, মানবিকতা, বোধশক্তি, সততা, ন্যায়পরয়ণতা (Honessty Integrity), মূল্যবোধ, মাতৃজাতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন আজ সবই নির্বাসিত! তদস্থলে স্থান নিয়েছে চরম উশৃংখলতা, প্রতিহিংসার রাজনীতি, বিদ্বেষ প্রবণতা, অমার্জিত আচরণ, - এ যেন আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির আপামর সাধারণ মানুষকে যাঁতাকলে যারপরনাই পিষে চলছে। আপনার সময়োচিত নিবন্ধের জন্য ধন্যবাদ এবং আপনার জন্য অন্তহীন শুভকামনা এবং অসীম শ্রদ্ধা। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন সবসময়। পরম করুণাময় মহান সৃষ্টিকর্তা সার্বক্ষণিক আপনার সহায় হোন।
শাহানা পারভীন
2 months agoঅসাধারণ লেখনি। সময় উপযোগি লেখাটির জন্য অসীম কৃতজ্ঞতা আর অগুনতি ধন্যবাদ । আপনার লেখা এই নষ্ট তারুণ্যকে পথ দেখাবে সে আশা রাখছি সেই সাথে অনুরোধ করছি লিখে চলুন ,আপনার লেখনির মাধ্যমে বাঙালীর কৃষ্টি কালচার ইতিহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ হোক এ তারুণ্য তবেই শান্তিতে বাঁচবে বাংলাদেশ ।
Ismail Hossain Badol
2 months agoমিঃ কবীর।শুভকামনা। আপনার লেখা পড়ি মাঝে মাঝে।আপনার ঠিকানা জানিনা।আপনি কি রংপরের ছেলে? যা'হোক আমার অনুমান আপনি ছাত্র জীবনে ছাত্র ইউনিয়নের কেউ ছিলেন।আপনার লেখায় তেমন গন্ধ পাই। আপনার এ লেখাটিতে আফসোস ফুটে উঠেছে।নষ্ট রাজনীতিকে যখন দেশ ভরে উঠে তখন এমনটা হয়।আমাদের চেতণার ভিত্তি মোটা দাগে ২১,৭১. একটি দল বা দলের নেতার কারণে জাতির মধ্যে যে চেতণা বাসা বাঁধে তা সে দল বা নেতা নেত্রীর নেতৃত্বসৃষ্ট সংস্কৃতির প্রতিফলন।আমরা ৫২ থেকে ৭১ পর্যন্ত যে রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চা করেছি তাতে দেশ,মাটি,মানুষের প্রতি ভালোবাসা,মমত্ববোধের অংশই সর্বাধিক ছিলো।স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বাঙালির বীরত্বের সাথে প্রগতির ভাবনা সমৃদ্ধ সংস্কৃতি লালন করতে ব্যর্থ হয়েছি রাজনৈতিক কারনেই। ২১ বছর পর মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় আনতে যারা নানাভাবে সমর্থন, সহযোগিতা করেছে তাদের সকলকেই বাতিল করে দেয়া হয়েছে।এমন সব ব্যাক্তি,সংগঠন,রাজনৈতিক শক্তিকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা হয়েছে।নানাভাবে অপদস্ত করা হয়েছে।মুক্তিযুদ্ধের সব ক্রেডিট শেখ পরিবার ও আওয়ামীলীগের মাঝে ভাগাভাগি করে নেয়া হয়েছে।এতদসত্ত্বেও অবমূল্যায়িত এসব অংশী মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের প্রশ্নে যা কিছু সেসব আওয়ামীলীগের ঘরে জমা হয়েছে।যেসব অংশী মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের সমান বাংলাদেশ গড়ার জন্য আকূল তারা সকলে গত ১৬ বছরে কোন সুবিধা না নিয়ে বরং বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলেছেন,সংগ্রাম করেছেন।আজও শেখ হাসিনা ও তার সরকারের নানা দুষ্কর্মের ফল তারা ব্যক্তিগত ও পরিবারিকভাবে ভোগ করে চলেছেন।অথচ,শেখ হাসিনা ও তার লোকজন যারা তাদের ক্ষমতা থেকে সরালো তাদেরই পৃষ্ঠপোষকতা করে গেছে। বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এসব অংশী আজও ক্ষমতাসীন মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তির দ্বারা নিগৃহীত হচ্ছেন,ঘুমহীন রাত কাটাচ্ছেন, জীবনের ঝুঁকিতে আছেন। শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতারা নিরাপদে পালাতে পেরেছেন। আপনি বা আপনার মতো অনেকে নিমগাছে পাকা আম চাইছেন। যারা,যুক্তিহীন,ধর্মান্ধ,বর্বর,হিংস্র তাদের কাছে শালীনতা,আদব ইত্যাদি মূল্যবোধ চর্চার আশা করছেন। এদেশের সকল স্বঘোষিত বামেরা তাদের হয়ে কাজ করেছে,ব্যবহৃত হয়েছে,ভাড়া খেটেছে।এসব কথিত বামেরা শেখ হাসিনাকে প্রধান শত্রু বিবেচনা করে মৌলবাদী,সাম্প্রদায়িক জঙি শক্তিকে তাদের আপন হতে চেয়েছে।এ জন্য এসব বামকেও পুরোপুরি দোষ দেয়া যায়না।এদের রাজনৈতিক,সামাজিক শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি।কাছে টেনে নেয়া হয়নি। আজ কোটি কোটি টাকা লুটপাট করার পরও বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুদিনের দোয়া মাহফিল করারও সাহস দেখা যায়নি যাতে টাকা খরচ না হয়। বাংলাদেশ জাসদ তাদের সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে দলীয় কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুকে সেদিন স্মরণ করেছে। লুটপাটের অংশীজনরা আজ কোথায়? তারা তো নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন।মাঝখান থেকে ইনু,মেননরা ধরা খেলো। আপনি যদি আওয়ামীলীগের গুরুত্বপূর্ণ কেউ হয়ে থাকেন তবে তাদের বলুন হুঁশ হতে। এরা এদের উদ্ধত,অহংকারী আচরণের কারনে দেশটাকে ২০০ বছর পিছিয়ে দিলো। ওরা মুক্তিযুদ্ধকেই বাতিল করে দিলো।বঙ্গবন্ধুকে অপমানিত করলো।রিসেট বাটন টিপে বাঙালির সব অর্জনকে মুছে ফেলতে ওরা মরিয়া। মহাত্মা গান্ধীর অহিংসবাদ এখন আর কার্যকরী নয়। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনতে গেলে এখন অনেক বেশি রক্তের প্রয়োজন হবে। তাই মরহুম মঈনুদ্দিন খাঁন বাদলের বক্তব্যই সঠিক মনে হচ্ছে।আর একটি সর্বাত্মক লড়াইয়ের বিকল্প নেই। পলিমাটির বাংলাদেশের মানুষকে সম্পূর্ণ বদলে দেবার পূর্বে বিনয়ের সাথে অপরাধ স্বীকার করে নিয়ে তাদের কাছেই ফিরে যেতে হবে বাংলাদেশ রক্ষার আবেদন নিয়ে। অহংকার পতনের মূল নীতি বাক্যটিকে আর ভুলে গেলে চলবে না। জয় হোক বাংলাদেশের।
Alfred daru
2 months agoi am appreciate for your excellent topics share with us .
Leave a Comment