Post Thumbnail

কোটা সংস্কার আন্দোলনের ঘটনা প্রবাহ


শান্ত সিংহ: সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রথম দফায় শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালে। সে বছরই প্রথম সরকারি চাকরিতে কোটার বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলন দেখেছিল মানুষ। হামলা, ভাঙচুরের পাশাপাশি সেবারের আন্দোলনে আহত ও গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটে।

এ সময় আন্দোলনকারীরা ‘মেধা মূল্যায়ন মঞ্চ’ নামে ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুর রহিম এই কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। সেই সময়ে আন্দোলনকারীরা ৩৪তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল পুনঃমূল্যায়ন এবং সব পাবলিক পরীক্ষায় কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবি জানায়। [সূত্র: ১৩ জুলাই, ডেইলি স্টার; ১৩ জুলাই, নিউ এইজ; ১০ জুলাই, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম; ১০ জুলাই, প্রথম আলো; ১৬ জুলাই, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম]

এক দশকের বেশি সময় আগে হওয়া সেই আন্দোলনে সফলতা মেলেনি। তবে পাঁচ বছর পর ২০১৮ সালে দ্বিতীয় দফায় আবার কোটা সংস্কার আন্দোলন ফিরে আসে। সে বছরের জানুয়ারিতে মানববন্ধন, মিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করে কোটাবিরোধীরা। সেবার মামলা-হামলা হলেও আন্দোলনে সফলতা পায় কোটাবিরোধীরা।

২০১৮ সালের আগ পর্যন্ত দেশ সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত ছিল। মুক্তিযোদ্ধা ৩০ শতাংশ (ছেলে-মেয়ে ও নাতি-নাতনি), নারী ১০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ ও ক্ষুদ নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ। এই ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে ১ শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী নিয়োগের বিধান ছিল।

২০১৮ সালের ওই আন্দোলনের মুখে সরকার কোটা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করতে তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নেতৃত্বে একটি কমিটি করে। ওই কমিটি সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোনও কোটা না রেখে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের নিয়ম চালু করতে সুপারিশ দেয়। এরপর প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে ওই বছরের ৪ অক্টোবর কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি হয়।
ওই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের নেতা অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন। এ রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ জুন হাইকোর্ট এক রায়ে কোটা বাতিল করে সরকারের জারি করা প্রজ্ঞাপন বাতিল করে দেন। ফলে চাকরিতে কোটা প্রথা আবার বহাল হয়। 

উল্লেখ্য, গত ১১ জুলাই আংশিক রায় প্রকাশের পর দেখা যাচ্ছে, হাইকোর্ট মুক্তিযোদ্ধা কোটাই শুধু নয়, জেলা, নারী, প্রতিবন্ধীসহ সব কোটাই পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়েছে। রায়ের এই আদেশ পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে কোটা পুনর্বহাল করতেও নির্বাহী বিভাগকে বলেছে হাইকোর্ট।


কোটা সংস্কার আন্দোলন-২০১৩ সাল

১০ জুলাই, ২০১৩

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের শত শত পরীক্ষার্থী সরকারি চাকরিতে নিয়োগে সব ধরণের কোটা অবিলম্বে বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। এদিন ৩৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়া কয়েক শতাধিক চাকরিপ্রার্থীরা উত্তরপত্র পুনঃমূল্যায়নের দাবিতে রাত ১০টা পর্যন্ত শাহবাগ চৌরাস্তায় জড়ো হয়ে রাস্তা অবরোধ করে রাখে। পরীক্ষায় ভালো করার পরও কেন অনির্বাচিত হয়েছে এই প্রশ্ন করে কোটা পদ্ধতি বাতিলের আন্দোলন শুরু করে। পরে সন্ধ্যায় বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন জানায় যে তারা বিসিএস প্রিলিমিনারী পরীক্ষার ফলাফল আবারো পর্যালোচনা করে দেখবে।

১১ জুলাই, ২০১৩

সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো শাহবাগ মোড়ে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়। পুলিশ তাদের উপর লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করায় শিক্ষার্থীরা স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই গোটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা এই অভিযোগও করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের সঙ্গে শাসকদল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যোগ দেয় এবং তাদের প্রাণঘাতী অস্ত্র, লাঠিসোঁটা ও লোহার রড দিয়ে মারধর করে। বিক্ষোভকারীরা বিক্ষুপ্ত হয়ে বেসরকারি টিভি চ্যানেলের দুটি গাড়ি, ঢাবি রেজিস্ট্রার ভবন, প্রক্টর অফিস, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দুটি প্রভৃতি ভাঙচুর করে।

প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন উপদেষ্টা প্রয়াত এইচ টি ইমাম গণমাধ্যমে বলেন, ‘সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি সংস্কারের কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।’

সংবাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী এই সংঘর্ষে ৫৫ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী আহত হয় ও প্রায় ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

১২ জুলাই, ২০১৩

এদিন বুয়েট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিসিএস চাকরিপ্রার্থীদের পূর্বনির্ধারিত মিছিল করার প্রচেষ্টা পুলিশ ও ছাত্রলীগ নস্যাৎ করে দেয়। রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় ১১ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় এক হাজার ৭০০ অজ্ঞাতনামা সরকারি চাকরিপ্রার্থীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি সিরাজুল ইসলাম জানান, পুলিশ বাদী হয়ে দণ্ডবিধি আইনে ৫০০ জনের বিরুদ্ধে একটি এবং ১২০০ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করে।

এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা এসএম কামরুল আহসান ক্যাম্পাসে ভাঙচুরের অভিযোগে ৫০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করেন। এতে সর্বমোট ২২০০ চাকরিপ্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহিংসতার ঘটনায় পুলিশ ৩৪ জনকে আটক করে।

কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে এক বিবৃতিতে বিএনপির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সরকার এতটাই মরিয়া হয়ে উঠেছে যে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি বিবেচনায় না নিয়ে পুলিশ ও যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডারদের দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালাতে দিতে দ্বিধা করে না।’

১৩ জুলাই, ২০১৩

কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে একদল শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে বিক্ষোভ করে। আন্দোলনকারীরা ক্যাম্পাসে সমাবেশ করার চেষ্টা করলে ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার নেতারা তাদের ভেঙে দেয়। প্রথম দলটি ছত্রভঙ্গ হওয়ার পরপরই আরেকটি দল ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ ব্যানার হাতে কোটা বাতিলের মিছিল করে। এদিকে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা বাতিলের জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থী শনিবার সকাল থেকে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে এবং মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়।

আন্দোলনকারীরা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সব সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল, মামলা প্রত্যাহার, আটক ও গ্রেপ্তারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং বিচারের দাবিতে আগামীকাল রোববার সারাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দেয়।

জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি রফিকুল ইসলাম খান বিক্ষোভের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, কোটা পদ্ধতি কার্যকর হওয়ায় দেশে মেধাবী শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে এবং মেধাবী ছাত্র-যুবকদের মধ্যে তীব্র হতাশা তৈরি হচ্ছে। আন্দোলনরত ছাত্র-যুবকদের দাবি মেনে নিয়ে দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করা উচিত, কিন্তু তাদের যৌক্তিক দাবি বিবেচনা না করে তাদের ওপর হামলা করা অত্যন্ত দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক নেতৃত্ব।

৩৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি রেজাল্টে কোটা নীতি প্রয়োগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে পিএসসি। তবে পরবর্তী পর্যায়ে কোটা প্রয়োগ করা হবে জানায় সংস্থাটি।

১৪ জুলাই, ২০১৩

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভৃতিতে কোটাবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত ছিলো। হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিক্ষোভে অংশ নেয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।

১৮ জুলাই, ২০১৩


আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি সভায় চলমান কোটা বিরোধী আন্দোলন নিয়ে কথা বলেন দলটির সভাপতি ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে যারা ভাঙচুর করেছে তারা যেন ভবিষ্যতে কোনো সরকারি চাকরি না পায় সেটা সরকার নিশ্চিত করবে। আমাদের কাছে ছবিগুলো আছে, ভাইভা পরীক্ষার আগে আমরা সেগুলো পিএসসির সামনে রাখব যাতে এই কুখ্যাত লোকগুলো সরকারি চাকরি পেতে না পারে।

কোটা সংস্কার আন্দোলন, ২০১৮

সব ধরনের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটার ভিত্তিতে নিয়োগের প্রচলিত ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে শুরু হয় এ আন্দোলন। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতৃত্বে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ধারাবাহিকভাবে বিক্ষোভ এবং মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। লাগাতার আন্দোলনের ফলে ৪ অক্টোবর প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে এক পরিপত্রের মাধ্যমে কোটাব্যবস্থা বাতিল ঘোষণা করে সরকার।

৩১ জানুয়ারি, ২০১৮

সরকারি চাকরিতে কোটাপ্রথা বাতিল করে পুনর্মূল্যায়ন চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র ও দুই সাংবাদিকের পক্ষে রিট দায়ের। রিট দায়ের করে আইনজীবী এখলাছ উদ্দিন বলেছিলেন, ১৯৭২ সালে এক নির্বাহী আদেশে সরকারি, বেসরকারি, প্রতিরক্ষা, আধা সরকারি এবং জাতীয়করণ করা প্রতিষ্ঠানে জেলা ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা ও ১০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের জন্য কোটা প্রবর্তন করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে কোটায় সংস্কার ও পরিবর্তন করা হয়। বর্তমানে সব মিলিয়ে ৫৬ শতাংশ কোটা বিদ্যমান। ফলে যারা কোনো কোটায় পড়েন না, তাদের প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে বাকি ৪৪ শতাংশের জন্য।

১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটাব্যবস্থা সংস্কারের পক্ষে-বিপক্ষে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করেছে দুটি পক্ষ। ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র সংরক্ষণ পরিষদের’ ব্যানারে কয়েক শ চাকরিপ্রার্থী কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। আর সংস্কার প্রস্তাবের নামে ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের’ প্রতিবাদে মানববন্ধন করেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের নেতা-কর্মীরা। তবে পুলিশ সেখানে কাউকেই দাঁড়াতে দেয়নি।

আন্দোলন চালিয়ে নিতে সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ৭১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।

২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন করা হয়।

৪ মার্চ, ২০১৮

দেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীরা কালো ব্যাজ ধারণ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। আন্দোলনকারীরা ১৩ মার্চ পর্যন্ত সরকারকে কোটা সংস্কারের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। আন্দোলনকারীদের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে কোটাব্যবস্থা সংস্কার করে ৫৬ ভাগ থেকে ১০ ভাগে নিয়ে আসা, কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে শূন্য থাকা পদগুলোতে মেধায় নিয়োগ দেওয়া, কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা না রাখা, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সবার জন্য অভিন্ন বয়সসীমা নির্ধারণ এবং চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা-সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার না করা।

৬ মার্চ, ২০১৮

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে জানানো হয়, আপাতত কোটা সংস্কার হচ্ছে না। তবে আদেশে উল্লেখ করা হয় যে, যদি কোটায় প্রার্থী না পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে মেধাতালিকা থেকে শূন্য পদ পূরণ করা হবে।

১৪ মার্চ, ২০১৮

ছাত্রছাত্রীরা হাইকোর্ট মোড়ে অবস্থান নিলে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ও ফাঁকা গুলি দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ সোহরাব হোসেনসহ আরও ২ জনকে আটক করে। মোঃ সোহরাব হোসেনসহ ২ জনকে আটক করার খবর ছড়িয়ে পড়লে আহ্বায়ক হাসান আল মামুনসহ ৬২ জন রমনা থানায় আটকদের ছাড়িয়ে আনতে গেলে, প্রশাসন কৌশলে ৬৩ জনকে আটক করে। রমনা থানায় ৬৩ জনকে আটক করার খবর ছড়িয়ে পড়লে চট্টগ্রাম মহাসড়ক, শাহবাগ, ঢাকা-আরিচা, ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনকারীরা৷ রাত ৯ টায় পুলিশ প্রশাসন বাধ্য হয়ে আন্দোলনকারীদের ছেড়ে দেয়৷

৮ এপ্রিল, ২০১৮

ঢাকার শাহবাগে কোটা সংস্কারের পক্ষে বিক্ষোভ শুরু হলেও আস্তে আস্তে সেটি বাংলাদেশের প্রায় সবকটি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছড়িয়ে পড়ে এবং শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন।

৯ এপ্রিল, ২০১৮

এদিন কেন্দ্রীয় কর্মসূচি হিসেবে বেলা দুইটার পরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে হাজারো শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থী গণপদযাত্রা করে বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে বেলা তিনটায় শাহবাগ মোড়ে এসে অবস্থান নেন। আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দেন, জাতীয় সংসদের অধিবেশন থেকে ঘোষণা না আসা পর্যন্ত অবরোধ চালিয়ে যাবেন। রাত পৌনে আটটায় আকস্মিকভাবে শিশুপার্কের দিক থেকে ১৫-২০ প্লাটুন দাঙ্গা পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করতে করতে শাহবাগ মোড়ের দিকে আসতে থাকে। তারা আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটা শুরু করে। পুলিশের আকস্মিক হামলায় আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে দুই ভাগ হয়ে যান।

এরপর থেকেই মূলত আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা শুরু। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র সংরক্ষণ পরিষদের নেতাদের ওপর বারবার হামলা করে ছাত্রলীগ। ফলে আন্দোলন ক্রমশ সহিংস হয়ে ওঠে।

১১ এপ্রিল, ২০১৮

শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে জাতীয় সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

১৬ এপ্রিল, ২০১৮

কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহবায়ক রাশেদ খান সহ তিন শীর্ষ নেতাকে ডিবি পুলিশ প্রচলিত আইন বহির্ভূতভাবে চোখ বেধে তুলে নিয়ে যায়। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় যে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে নিয়েছিলো।

২ মে, ২০১৮

গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা বাতিলের কথা পুনর্ব্যক্ত করে।

১৪ মে, ২০১৮

কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে।

১৯ মে, ২০১৮

রমজান মাস ও সেশন জট বিবেচনা করে পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করে কোটা আন্দোলনকারীরা। 

২৭ মে, ২০১৮ 

কোটা নিয়ে আন্দোলনের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক এ পি এম সুহেলের ওপর হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার চেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে এক সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

৩০ জুন, ২০১৮ 

সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নেতা-কর্মীদের ওপর বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হামলা করে। সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় সেখানে অবস্থান নেওয়া ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা একযোগে ‘শিবির ধর’, ‘শিবির ধর’ বলে আন্দোলনকারী নেতাদের ধাওয়া করে। তাদের মারধর করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

১ জুলাই, ২০১৮

১ জুলাই সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ছাত্রলীগের এক নেতার করা মামলায় রাশেদকে গ্রেপ্তার করা হয়।

৩ জুলাই, ২০১৮

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দের’ ব্যানারে এই মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। একই সময়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীর’ ব্যানারে পাল্টা আরেকটি মানববন্ধন করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ও বিভিন্ন হল কমিটির নেতারা।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে প্রেসক্লাবের সামনে ‘উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিক সমাজের’ কর্মসূচি ছিলো বিকেল চারটায়। তবে তারা ঘটনাস্থলে আসার আগেই প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেয় পুলিশ। কর্মসূচি শুরুর আগে সোয়া চারটার দিকে জড়ো হওয়া প্রতিবাদকারীদের ধাক্কা মেরে, ধস্তাধস্তির মাধ্যমে সরানোর চেষ্টা করে পুলিশ। পরে প্রায় এক ঘণ্টা পর তারা প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ শুরু করে।

১২ জুলাই, ২০১৮

সংসদে ভাষণকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন যে, সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ করা নিয়ে উচ্চ আদালতের রায় আছে। সরকার এই রায় অমান্য করতে পারছে না।

৪ অক্টোবর, ২০১৮

কোটা প্রথা বাতিল প্রসঙ্গে সরকারের পরিপত্র জারি। এরপর ২০২১ সালে এই পরিপত্র বাতিল চেয়ে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রিট দায়ের করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে ওই পরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়।

কোটা আন্দোলন, ২০২৪

তৃতীয় দফায় কোটা আন্দোলন শুরু হয় গত ১ জুলাই থেকে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে তারা আন্দোলন করতে থাকে। অহিংস এই আন্দোলন সহিংস হয় ১৫ জুলাই থেকে। এই আন্দোলন ধীরে ধীরে রূপ নেয় গণআন্দোলনে। গণঅভ্যূত্থানের মাধ্যমে এই আন্দোলনে চূড়ান্ত পরিণতি ঘটে গতকাল ৫ আগস্ট। জাতিসংঘের হিসেবে মতে, কোটা সংস্কার আন্দোলনে এরই মধ্যে ঝরে যায় ৬৫০ মানুষের প্রাণ। পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালানোর মাধ্যমে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলের অবসান ঘটে।

কোটা সংস্কার আন্দোলন: ২০২৪

৫ জুন, ২০২৪

চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় প্রদান। এই রায়ের ফলে চাকরিতে কোটা বহাল হয়ে যায়।

৬ জুন, ২০২৪

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা (মুক্তিযোদ্ধা কোটা) পুনর্বহালে আদালতের দেওয়া রায় বাতিলের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ’-এর ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী অংশ নেন।

৯ জুন, ২০২৪

হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন। কোটাব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রতিবাদে আবারও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি মানতে সরকারকে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। 

এদিকে কোটা বাতিল-সংক্রান্ত হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ৪ জুলাই দিন নির্ধারণ করা হয়।

১ জুলাই, ২০২৪

শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আন্দোলন শুরু। কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ছাত্রসমাবেশ ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশে ৪ জুলাইয়ের মধ্যে দাবির বিষয়ে চূড়ান্ত সুরাহার আহ্বান জানানো হয়। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে তিন দিনের কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।

২ জুলাই, ২০২৪

আন্দোলনকারীরা এই দিন বেলা পৌনে তিনটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মিছিল করে নীলক্ষেত, সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও বাটা সিগন্যাল মোড় ঘুরে শাহবাগে গিয়ে থামে। সেখানে তারা এক ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। একই দিন বিকেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী ঢাকা-আরিচা ২০ মিনিটের জন্য অবরোধ করেন।

৩ জুলাই, ২০২৪

এই দিন আন্দোলনকারীরা ঢাকার শাহবাগ মোড় দেড় ঘণ্টার মতো অবরোধ করে রাখেন। একই দাবিতে আরও ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও অবরোধ করেন। এর মধ্যে ময়মনসিংহে রেললাইনে ট্রেন অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার মোড়ে সড়ক অবরোধ করেন। বেলা তিনটা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত এই অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়।

৪ জুলাই, ২০২৪

এ দিন শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন মহাসড়ক অবরোধ করেন। আর ঢাকায় শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখেন ৫ ঘণ্টা। এ দিন ছাত্র সমাবেশ থেকে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়।

৫ জুলাই, ২০২৪

ছুটির দিন শুক্রবারেও বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনকারীরা। চট্টগ্রাম, খুলনা ও গোপালগঞ্জে সড়ক অবরোধ।


৬ জুলাই, ২০২৪

দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আগের দিনের মতোই বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় আন্দোলনকারীরা সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, ছাত্র ধর্মঘট এবং সারা দেশে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধের ডাক দেন। এর নাম দেওয়া হয় ‘বাংলা ব্লকেড’।

৭ জুলাই, ২০২৪

এদিন ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে স্থবির হয়ে পড়ে রাজধানী। অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

৮ জুলাই, ২০২৪

ঢাকার ১১টি স্থানে অবরোধ, ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ, ৩টি স্থানে রেলপথ অবরোধ এবং ৬টি মহাসড়ক অবরোধ। সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে শুধু সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যূনতম কোটা রেখে সংসদে আইন পাসের দাবি।

৯ জুলাই, ২০২৪

হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে দুই শিক্ষার্থীর আবেদন। শুনানি হবে পরদিন। অবশ্য ওই দুই শিক্ষার্থীর আবেদন করার সঙ্গে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

আন্দোলনের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা চার ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নেন। আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে পরদিন সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।

১০ জুলাই, ২০২৪

সরকারি চাকরিতে সরাসরি নিয়োগে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) কোটার বিষয়ে পক্ষগুলোকে চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ আপিল বিভাগের। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। শুনানির জন্য আগামী ৭ আগস্ট দিন রাখা হয়।

শুনানির একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘আমরা এই সমাজের মানুষ, কিছু কথা বলতেই হয়। সেটি হচ্ছে যে একটা রায় হাইকোর্টে হয়ে গেছে। ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলন করছে। সেখানে তারা যেটা করেছে, এটা অ্যাপ্রিশিয়েট (প্রশংসা) করার মতো না। মনে হয়, তারা ভুল বুঝেই করেছে। যা-ই হোক যেটিই করেছে, তারা আমাদেরই ছেলে-মেয়ে।’

প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘আমি প্রথম দিনই বলেছিলাম, রাস্তায় স্লোগান দিয়ে রায় পরিবর্তন হয় না। এটা আজকে না, আমি যখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ছিলাম, তখন একটি মামলায় বলেছিলাম, রাস্তায় স্লোগান দিয়ে রায় পরিবর্তন করা যায় না। এটি সঠিক পদক্ষেপ না।’

১১ জুলাই, ২০২৪

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা সর্বোচ্চ আদালতের বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শন করছেন। এটি অনভিপ্রেত ও সম্পূর্ণ বেআইনি। ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।

সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, শিক্ষার্থীরা ‘লিমিট ক্রস’ করে যাচ্ছেন। এ দিন পুলিশের বাধার মুখেই দেশের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ পালন করেন আন্দোলনকারীরা।

১২ জুলাই, ২০২৪

কোটা সংস্কারের দাবিতে শুক্রবার ছুটির দিনেও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। রেলপথ অবরোধ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

১৩ জুলাই, ২০২৪

সব গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা। পরের দিন রোববার গণপদযাত্রা করে রাষ্ট্রপতি বরাবর এ স্মারকলিপি দেবেন আন্দোলনকারীরা।

বগুড়ায় এক অনুষ্ঠানে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, কোটা সরকার পুনর্বহাল করেনি। সরকার বরং শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে কোটা বাতিল করেছিল। বাতিলের পর কোটাহীনভাবে সরকারি ও অন্যান্য চাকরিতে নিয়োগ হচ্ছে। হাইকোর্ট রায় দিয়েছে কোটা পুনর্বহালের জন্য। সুপ্রিম কোর্ট সেটি স্থগিত করেছে। বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে বা বিচারাধীন বিষয়ে সরকার কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারে না। তাহলে আদালত অবমাননা হবে। এসব বুঝেও যারা জনভোগান্তি ঘটাচ্ছেন, সেই ভোগান্তি যাতে না ঘটে, সে জন্য সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বদ্ধপরিকর এবং আশা করব শিক্ষার্থীরা সুপ্রিম কোর্টের রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন।

তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, বিচারাধীন বিষয়ে সরকারের এখন কিছু করার নেই।

১৪ জুলাই, ২০২৪

দুপুর বেলা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ঢাকায় গণপদযাত্রা করে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে।
বিকালে গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে?’ ২০১৮ সালের আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জানান, সে সময়ে তিনি বিরক্ত হয়ে কোটা বাতিল করে দিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল কোটা বাতিল হলে কী হয় সেটি দেখা। এদিন সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংস্কার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মধ্যরাতে উত্তাল হয়ে উঠেছিল দেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। 

রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও তালা ভেঙে বেরিয়ে আসেন। সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ৪–জি নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দিতে অপারেটরদের নির্দেশনা দেয়। চট্টগ্রামে রাত সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীদের উপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসের আবাসিক হলগুলো থেকে দলে দলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। এ সময় কোথাও কোথাও ছাত্রলীগ কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের কথাও শোনা গেছে। তিন-চার ঘণ্টা বিক্ষোভের পর ভোরের দিকে তারা ক্যাম্পাসে ফিরে যান।

১৫ জুলাই, ২০২৪

বেলা দুইটায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দুপুর দুইটায় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকার’ স্লোগানের জবাব ছাত্রলীগই দেবে বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আন্দোলন থেকে আত্মস্বীকৃত রাজাকার ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ মানসিকতা বা আচরণের প্রকাশ ঘটেছে। এর জবাব দেওয়ার জন্য ছাত্রলীগ প্রস্তুত।

এর পরে দুপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যারা ‘আমি রাজাকার’ স্লোগান দিচ্ছেন, তাঁদের শেষ দেখিয়ে ছাড়বেন বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।

বিকাল আড়াইটার দিকে আন্দোলনকারীদের মিছিলকে কেন্দ্র করে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সূত্রপাত হয়। দুপুর ৩টার দিকে বিজয় একাত্তর হলের সামনে মাইকিং করতে শুরুর করলে হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া দেন। এরপর কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরাও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের পাল্টা ধাওয়া দেন। অপরদিকে সূর্যসেন হলের আশপাশেও হামলা থেকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিকেল সাড়ে পাঁচটার পরও শহীদুল্লাহ হলের সামনে থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনের এলাকায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে। আন্দোলনকারীরা সরে যাওয়ার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের রড ও লাঠি নিয়ে মিছিল করতে দেখা যায়।

হামলার প্রতিবাদে আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগে উভয়েরই সমাবেশ করার ঘোষণা।

১৬ জুলাই, ২০২৪

সারা দেশে দিনভর ব্যাপক বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ। আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সরকার সমর্থকেরা। 
দুপুর আড়াইটা থেকে তিনটার দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে। পুলিশ গুলি চালালে আবু সাঈদ নামের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী নিহত হয়। 

বিকেলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আন্দোলন যাবে, আন্দোলন আসবে। কিন্তু ছাত্রলীগ থাকবে। সবকিছুই মনে রাখা হবে এবং জবাব দেওয়া হবে। একটি ঘটনাও জবাব ছাড়া যাবে না। রাজাকারদের ফাঁদে পড়ে ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করলে ভবিষ্যতে আমরা দেখে নেব, কত ধানে কত চাল হয়।’

কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ঘিরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান) এবং পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর শ্রেণি কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধের ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এছাড়া বাংলাদেশ আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় সব শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করে।

এদিন রাতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন ঘোষণা করে যে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সারাদেশে সকল সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। একই সময়ে, সমস্ত অধিভুক্ত মেডিকেল, টেক্সটাইল, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং অন্যান্য কলেজগুলিও বন্ধ থাকবে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আবাসিক হলগুলো খালি করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয় কমিশন।
রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিহতদের স্মরণে ১৭ জুলাই গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল আয়োজনের ঘোষণা দেয়। এক বার্তায় তারা জানান, ‘মঙ্গলবার পুলিশ ও ছাত্রলীগের যৌথ হামলা ও গুলিবর্ষণে শহীদ ভাইদের জন্য ১৭ জুলাই দুপুর ২টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল হবে।

১৭ জুলাই, ২০২৪

কোটাবিরোধী আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাণহানির ঘটনার পর আন্দোলনকারী ছাত্রীদের তোপের মুখে পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের নেত্রীরা। হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকা বিনতে হোসাইনসহ ১০ নেত্রীকে রাত ১২টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হল থেকে নিয়ে আসে প্রোক্টরিয়াল বডি। পরে রোকেয়া হলের ছাত্রীরা একটি বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করতে প্রাধ্যক্ষ নিলুফার পারভিনকে বাধ্য করেন। ওই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের অভ্যন্তরে সব ধরনের ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল‌, ফজলুল হক মুসলিম হল, অমর একুশে হল, রোকেয়া হল, মহসীন হল, কুয়েত মৈত্রী হল, জহুরুল হক হল, শামসুননাহার হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, সুফিয়া কামাল হলসহ বিভিন্ন হলে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।

ইউজিসি সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষনা দেয় এবং নিরাপত্তার স্বার্থে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে বলা হয়।

গ্রামীণফোন কোম্পানিসহ সকল মোবাইল কোম্পানীকে সকল ধরনের ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় সরকার।

পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলায় নিহত শিক্ষার্থীদের জন্য ২টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘গায়েবানা জানাজা ও কফিনমিছিল’ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীরা। তবে পুলিশের বাধায় সেখানে গায়েবানা জানাজা হয়নি। পরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে ক্যাম্পাসে কফিন নিয়ে মিছিল শুরু করলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এতে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান ও পরে সূর্য সেন হলের সামনে জড়ো হন। এরপর পুলিশ সদস্যরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। শিক্ষার্থীরা মাস্টারদা সূর্য সেন হলের সামনে অবস্থান নেন। পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করলে শিক্ষার্থীরা তার জবাবে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পুলিশের সঙ্গে টিকতে না পেরে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে শিক্ষার্থীরা ওই এলাকার হলগুলোর ভেতরে চলে যান। পরে পুলিশ সূর্য সেন হলের সামনে এসে অবস্থান নেয়। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাইফুল হক সেখানে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করা বন্ধ করে।

রাত সাড়ে সাতটায় জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ। ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ। একই সঙ্গে তিনি আন্দোলনকারীদের সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান।

প্রায় আট মিনিটের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, আমাদের ছাত্রসমাজ উচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচারই পাবে, তাদের হতাশ হতে হবে না।’

ঢাকায় সন্ধ্যা ৭টার দিকে আন্দোলনকারীদেরকে পুলিশ আক্রমণ করে এবং পুলিশের শটগানের গুলিতে ৬ জন আহত হন। ফলে, আন্দোলনকারীরা মেয়র হানিফ উড়ালসড়কের কাজলা অংশের টোল প্লাজায় আগুন ধরিয়ে দেন। সড়কের শনির আখড়া ও কাজলার মধ্যবর্তী স্থানে অন্তত ২০টি জায়গায় মধ্যরাত পর্যন্ত আগুন জ্বলে।

রাত আটটার দিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার সারা দেশে কমপ্লিট শাটডাউন (সর্বাত্মক অবরোধ) কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

রাত ১২টার দিকে রাতে বাসায় ফেরার পথে সিয়াম নামের এক তরুণ যাত্রাবাড়ীতে হানিফ ফ্লাইওভারে সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

১৮ জুলাই, ২০২৪

১৭ জুলাই রাতে আন্দোলনকারীরা ১৮ জুলাইয়ের জন্য ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির ঘোষণা করে।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায় যে, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ঘোষিত কমপ্লিট শাটডাউনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঢাকাসহ সারাদেশে ২২৯ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ সারা দেশ ছিল প্রায় অচল। রাজধানী ছাড়াও দেশের ৪৭টি জেলায় দিনভর বিক্ষোভ, অবরোধ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, পুলিশের হামলা-গুলি ও সংঘাতের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত দেড় হাজার। কোথাও কোথাও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের, আবার কোথাও সরকার-সমর্থক বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়।

মেরুল বাড্ডায় বেশ কিছু পুলিশ সদস্য অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন, পরে হেলিকপ্টারে উদ্ধার।

সকাল ১১টার দিকে সকাল থেকে আন্দোলনরত ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রামপুরা ব্রিজ থেকে মেরুল বাড্ডা এলাকায় সড়ক অবরোধ করায় তাদের ছত্রভঙ্গ করেতে কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোঁড়ে পুলিশ। একই সাথে তাদেরকে আক্রমণ করে ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগ কর্মীরা।

দুপুর ২টার দিকে পুলিশের গুলিতে নর্দান ইউনিভার্সিটির ২ শিক্ষার্থী নিহত ও শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। আহত শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে নেয়া হয়। 

দুপুর ৩টার দিকে পুলিশের ধাওয়ায় হ্রদে পড়ে মাদারীপুর সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এছাড়াও রামপুরায় পুলিশের সাথে বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় এক গাড়ি চালক পুলিশের গুলিতে নিহত হন। সংঘাতের সময় তিনি একটি হাইএস গাড়ি চালিয়ে ওই এলাকা পার হচ্ছিলেন।

আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনায় বসতে সরকার রাজি বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী। সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীকে আলোচনার দায়িত্ব দেয়া হয়। তবে আলোচনার প্রস্তাব নাকচ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের।

এদিন সরকারের নির্দেশে ৪জি মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। রাত ৯টার দিকে সরকার সারাদেশে সব ধরনের ইন্টারনেট সেবা বিচ্ছিন্ন করে দেয় সরকার। 

৫৬ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ কোটার প্রস্তাব করা হয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে।

এদিকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন বিটিভি, বনানীর সেতু ভবন, মিরপুর-১০ এর মেট্রো স্ট্রেশনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।

১৯ জুলাই, ২০২৪

ঢাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে ঢাকার সাথে সারাদেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। 

ঢাকার উত্তরা, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা পল্টনসহ কয়েকটি এলাকায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সারাদিন দফায় দফায় সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। মিরপুরে জুমার নামাজের পর বেলা তিনটার দিকে কাজীপাড়া, শ্যাওড়াপাড়া এবং মিরপুর - ১০-এর বিক্ষুব্ধ জনতা রাস্তায় বেরিয়ে আসে। সাভারে বিকাল তিনটা থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে হাজারো শিক্ষার্থী জড়ো হয়। বিকেল চারটার দিকে শিক্ষার্থীরা ঢাকার রামপুরা থানা ঘেরাও করে। বিকেল পাঁচটায় বিক্ষোভকারীরা মিরপুর ১৪ নম্বরে অবস্থিত বিআরটিএ ভবনে আগুন দেয়।

নরসিংদীতে দুই হাজারের মতো উত্তেজিত জনতা নরসিংদী কারাগার ভাংচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে কারাগার থেকে ৮২৬ জন কয়েদী পালিয়ে যান। কারা সূত্রমতে আন্দোলনকারী ও বন্দীরা মিলে অস্ত্রাগারের চাবি ছিনিয়ে ৮৫টি অস্ত্র, চায়নিজ রাইফেলের ৭ হাজার গুলি ও শটগানের ১ হাজার ৫০টি গুলি ছিনিয়ে নেন। পরবর্তীতে অনেক কয়েদী আত্মসমর্পণ করেন।

সারাদেশে কারফিউ জারি ও সেনা মোতায়েন করে সরকার। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কারফিউ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটা অবশ্যই কারফিউ। এটা নিয়ম অনুযায়ীই হবে এবং সেটা শুট অ্যাট সাইট (দেখা মাত্রই গুলি) হবে’।

মধ্যরাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে আটক করা হয়। এছাড়া গণঅধিকার পরিষেদের সভাপতি নুরুল হক নুরকেও আটক করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিনজন প্রতিনিধির সাথে সরকারের তিনজন প্রতিনিধির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় যেখানে তারা সরকারের কাছে 'আট দফা দাবি' জানান। সরকারের পক্ষে আলোচনায় অংশ নেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে আলোচনায় অংশ নেন সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং সহ-সমন্বয়ক তানভীর আহমেদ।

এদিন সহায়তা চেয়ে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে সবচেয়ে বেশি ফোন এসেছে। ১৬ জুলাই থেকে ৮ দিনে প্রায় ৩ লাখ ফোনকল আসে। সর্বোচ্চ ৪৮ হাজার ফোনকল আসে ১৯ জুলাই।

২০ জুলাই, ২০২৪

দেশজুড়ে কারফিউ জারি করে, সেনা মোতায়েন করা হয়। সাধারণ ছুটি ঘোষণা। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, ধাওয়া ও গুলি। উল্লেখযোগ্য স্থান হচ্ছে, যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, বাড্ডা ও মিরপুর। এ ছাড়া মোহাম্মদপুরেও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে এদিন শনিবার নিহত ২৬। সব মিলিয়ে চার দিনে নিহত ১৪৮। 

এদিন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ। অন্যদিকে আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক তিন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আট দফা দাবি পেশ করেন।

মন্ত্রীদের কাছে দেওয়া আট দফা দাবির মধ্যে রয়েছে নিহতদের ঘটনা তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করে গ্রেপ্তার ও বিচার। শহীদদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা, মাসিক ভাতা ও তাদের পিতামাতার মতামতের ভিত্তিতে একজন সদস্যকে চাকরির নিশ্চয়তা দেওয়া। সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে প্রশাসনিকভাবে সিট বরাদ্দ, সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ করা এবং ছাত্র সংসদ চালু করা, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে করা সব মামলা প্রত্যাহার, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত সব শিক্ষার্থীকে সব ধরনের রাজনৈতিক, আইনি বা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের মাধ্যমে একাডেমিক হয়রানি না করার নিশ্চয়তা দেওয়া।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কারফিউ চলবে। 

২১ জুলাই, ২০২৪

ভোরে ঢাকার পূর্বাচল এলাকায় আন্দোলের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে পাওয়া যায় ও পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন তাকে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে।

১৬ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিলের প্রেক্ষিতে সকাল ১০টার দিকে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে কোটা নিয়ে আপিল বিভাগের শুনানি শুরু হয়। 

সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পুনর্বহাল-সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় সামগ্রিকভাবে বাতিল (রদ ও রহিত) করে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় প্রদান। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সর্বসম্মতিতে এ রায় দেন। রায়ে বলা হয়, কোটাপ্রথা হিসেবে মেধাভিত্তিক ৯৩ শতাংশ; মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ; ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ নির্ধারণ করা হলো। তবে নির্ধারিত কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কোটার শূন্য পদগুলো সাধারণ মেধাতালিকা থেকে পূরণ করতে হবে। এই নির্দেশনার আলোকে সরকারের নির্বাহী বিভাগকে অনতিবিলম্বে প্রজ্ঞাপন জারি করতে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।

চার দফা দাবি পূরণের জন্য বৈষম্যবারোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা ৪৮ ঘন্টা সময় বেঁধে দিলেন। চার দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, ইন্টারনেট সংযোগ চালু করা, শিক্ষার্থীদের আসার ব্যবস্থা করে দিয়ে হল খুলে দেওয়া, আন্দোলনের সমন্বয়কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কারফিউ তুলে দেওয়া। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন চারজন সমন্বয়ক।

একই দিনে বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৫৬ সমন্বয়কের যৌথ বিবৃতি’ শিরোনামে একটি খুদে বার্তা গণমাধ্যমকর্মীদের মুঠোফোনে পাঠানো হয়। যৌথ বিবৃতিতে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ (সর্বাত্মক অবরোধ) কর্মসূচি আরও জোরদার করার আহ্বান জানানো হয়। এতে বলা হয়, শুধু আদালতের রায়ের মাধ্যমে হত্যার দায় এড়াতে পারে না সরকার। বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকার সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। ‘তিন শতাধিক’ ছাত্র-জনতাকে হত্যা করার অভিযোগ করা হয়েছে বিবৃতিতে।

সেতু ভবন ভাঙ্গচুর, রামপুরার বিটিভির ভবনে আগুন দেয়া ও বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ভিন্ন ভিন্ন মামলায় পুলিশ বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নিপুণ রায় ও গণঅধিকার পরিষদের নেতা নুরুল হক নুরকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয়।

২২ জুলাই, ২০২৪

কমপ্লিট শাটডাউন ৪৮ ঘণ্টার জন্য স্থগিতের ঘোষণা দেন কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। এই সময়ের মধ্যে তারা চার দফা দাবির বাস্তবায়ন দেখার জন্য সরকারকে আলটিমেটাম দিয়েছে। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ জানান, ‘আমাদের চার দফার মধ্যে রয়েছে - ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ইন্টারনেট চালু, ক্যাম্পাসগুলো থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রত্যাহার করে ক্যাম্পাস চালু, সমন্বয়ক ও আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা প্রদান এবং কারফিউ প্রত্যাহার ... যারা নয় দফা দাবি ও শাটডাউন অব্যাহত রেখেছে তাদের সাথে আমাদের নীতিগত কোন বিরোধ নেই। 

সাধারণ ছুটির মেয়াদ মঙ্গলবার পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা করা হয়। কারফিউও বাড়ানো হয় এদিন। 

দুপুরের দিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সাথে কিছু ব্যবসায়ী বৈঠক করেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও সহিংসতার জন্য বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, শিবিরকে দায়ী করেন ও ‘আরও শক্ত অ্যাকশন’ নেওয়ার কথা জানান। 

বৈঠকে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী, এপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসির মনজুর, এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম, বিজিএমইএ সভাপতি এস এম মান্নান (কচি), বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ হেলালউদ্দিন প্রমুখ। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন সেক্টরের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

২৩ জুলাই, ২০২৪

এদিন কোটা প্রথা সংস্কার করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। যাতে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক ৯৩ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ১ শতাংশ এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ কোটা নির্ধারণের কথা বলা হয়। এছাড়া এই প্রজ্ঞাপনে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবরে জারি করা প্রজ্ঞাপন রহিত করার কথা জানানো হয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে কারফিউর মেয়াদ আরও দুইদিন বাড়ানোর কথা জানায়।

এদিন রাতে সীমিত আকারে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালু করে।

২৪ জুলাই, ২০২৪

এদিন কোটা আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও রিফাত রশীদের খোঁজ পাওয়া যায়। নিখোঁজ থাকার পাঁচ দিন পর আসিফ ও বাকেরকে চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে যাওয়া হয়েছে বলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে দুজনই জানিয়েছেন। আর রিফাত আত্মগোপনে ছিলেন।

এর আগে গত ১৯ জুলাই রাত ১১টায় আসিফ মাহমুদকে হাতিরঝিলের মহানগর আবাসিক এলাকা এবং একই দিনে সন্ধ্যার পর আবু বাকের মজুমদারকে ধানমন্ডি থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বলে তারা জানান। 

এই দিনে বিক্ষোভের সময় সেনা মোতায়েন পর জাতিসংঘের লোগো সংবলিত যান ব্যবহৃত হলে জাতিসংঘ এই নিয়ে উদ্বেগ জানায়। এ নিয়ে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘জাতিসংঘের কোনো যান ব্যবহৃত হচ্ছে না। এগুলো জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। লোগোটা মোছা হয়নি, ভুলে। সেই লোগোগুলো এখন মুছে দেওয়া হয়েছে।’
এদিকে, এদিন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন দেশের শীর্ষস্থানীয় সাংবাদিকেরা। 

এতে উপস্থিতি ছিলেন ডিবিসি সম্পাদক জায়েদুল আহসান পিন্টু, ভোরের কাগজ সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ডিবিসির এডিটর-ইন-চিফ ও সিইও মনজুরুল ইসলাম, সিনিয়র সাংবাদিক আবেদ খান বলেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদ ইয়াসমিন, ঢাকা জার্নালের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, নাগরিক টেলিভিশনের হেড অব নিউজ ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব দীপ আজাদ, আমাদের সময়ের নির্বাহী সম্পাদক মাঈনুল আলম, বাংলাদেশ জার্নালের সম্পাদক শাহজাহান সরদার, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের হেড অব নিউজ আশিষ সৈকত, বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল, একাত্তর টিভির হেড অব নিউজ শাকিল আহমেদ, অ্যানার্জি অ্যান্ড পাওয়ার-এর সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ, কিংস নিউজের হেড অব নিউজ নাজমুল হক সৈকত এবং আরটিভি’র হেড অব নিউজ মামুনুর রহমান খান। 

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো. নাঈমুল ইসলাম খান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এবং স্বাগত বক্তব্য দেন এডিটরস গিল্ডের সভাপতি মোজাম্মেল হক বাবু।

২৫ জুলাই, ২০২৪

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলামের বক্তব্য- শিরোনামে এক বিবৃতি ফেসবুকে পোস্ট করেন আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও সহসমন্বয়ক রিফাত রশীদ।

বিবৃতিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও অন্য অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই কোটা সংস্কারের যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, সেটিকে তারা চূড়ান্ত সমাধান মনে করছেন না। যথাযথ সংলাপের পরিবেশ তৈরি করে নীতিনির্ধারণী জায়গায় সব পক্ষের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে প্রজ্ঞাপন দিতে হবে। এ ছাড়া কোটা সংস্কারের বিষয়ে সংসদে এখনো আইন পাস করা হয়নি। তাই কোটা সমস্যার এখনো চূড়ান্ত সমাধান হয়নি।

এদিন বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটি বলেছে, পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর আইনবহির্ভূতভাবে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার করেছে। বাংলাদেশে সহিংসতার তিনটি ভিডিও বিশ্লেষণ করে তারা এই প্রমাণ পেয়েছে বলে দাবি করা হয়।

এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দুর্বৃত্তদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত মিরপুর-১০ মেট্রো স্টেশন পরিদর্শন করেছেন সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে স্থাপনাগুলো মানুষের জীবনকে সহজ করে সেগুলো ধ্বংস করা আসলে কোনো ধরনের মানসিকতা। ঢাকা শহর যানজটে নাকাল থাকলেও মেট্রো স্বস্তি দিয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তির এ পরিবহন এভাবে ধ্বংস করেছে, বিষয়টা মানতে পারছি না।

২৬ জুলাই, ২০২৪

নাহিদ ইসলামসহ কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ককে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। অপর দুই সমন্বয়ক হলেন আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদার। একদল ব্যক্তি সাদাপোশাকে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ধানমন্ডির ওই হাসপাতাল থেকে তাদের তুলে নিয়ে যান। 

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনায় এক বিবৃতির মাধ্যমে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সরাসরি গুলি ব্যবহারের ঘটনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। 

২৭ জুলাই, ২০২৪

কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরও দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ হেফাজতে নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। 

নিরাপত্তা নিয়ে কোনো শঙ্কা থাকলে তাদের পরিবারের কাছে না দিয়ে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হলো কেন, সেটা জানতে ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য যান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি দল। তবে শিক্ষকদের সাথে দেখা করতে ডিবিপ্রধান অস্বীকৃতি জানান।

এদিন ঢাকায় ১১ ঘণ্টা কারফিউ শিথিল করে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২৮শে জুলাই থেকে ৩০শে জুলাই পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি অফিসের সময়সূচি ছয় ঘণ্টা করার সিদ্ধান্ত জানায়।
এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে ২৮ তারিখের (রোববারের) মধ্যে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামসহ, আসিফ মাহমুদসহ আটক সকল শিক্ষার্থীদের মুক্তি, মামলা প্রত্যাহার ও শিক্ষার্থী গণহত্যার সাথে জড়িত মন্ত্রী পর্যায় থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত সকল দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আল্টিমেটাম দেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। একই সাথে রোববার সারা দেশের দেয়ালগুলোতে গ্রাফিতি ও দেয়াল লিখনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়।

এদিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন আহত ব্যক্তিদের দেখতে গিয়েছেন। হাসপাতালে আহতদের দেখার পর সেতু ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ ও টোল প্লাজা দেখতে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী।

২৮ জুলাই, ২০২৪

কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুমকে হেফাজতে নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। ভোরে রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকার এক আত্মীয়ের বাসা থেকে তাকে উঠিয়ে নেওয়া হয়।
ডিবির হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয়জন সমন্বয়ক এক ভিডিও বার্তায় সব কর্মসূচি প্রত্যাহারের কথা বলেছেন। ডিবি কার্যালয়ে ধারণ করা একটি ভিডিও বার্তা রাত নয়টার দিকে গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। ভিডিও বার্তায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করতে দেখা যায়। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘আমাদের প্রধান দাবি ছিল কোটার যৌক্তিক সংস্কার। এটি সরকার ইতিমধ্যে পূরণ করেছে। এখন শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাই। সার্বিক স্বার্থে আমরা এই মুহূর্ত থেকে আমাদের সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করছি।’

এদিকে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ডিবির হেফাজতে নেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। পুলিশ যদি মনে করে তারা ঝুঁকিমুক্ত, তখনই তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে।

রাতে ছয় সমন্বয়কের ওই ভিডিও বার্তা আসার কিছুক্ষণ আগে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। তাতে লেখা হয়, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। তাই তাদের ডিবি কার্যালয়ে এনে কথা বললাম, কী কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাদের কথা শুনে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের নানা পরিকল্পনার কথা জানানোর পর তাদের উদ্বেগ দূর হয়েছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টিম ডিবি, ডিএমপি বদ্ধপরিকর।’
ওই পোস্টে সংযুক্ত পাঁচটি ছবিতে হেফাজতে থাকা সাত সমন্বয়কের সঙ্গে এক টেবিলে ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদকে খাবার খেতে দেখা গেছে।

ডিবি হেফাজতে থেকে ভিডিওবার্তায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক কর্মসূচি প্রত্যাহারের যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা আন্দোলনকারীদের প্রকৃত অবস্থান নয় বলে জানিয়েছেন এই আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক মাহিন সরকার, আব্দুল কাদের  ও আব্দুল হান্নান মাসুদ। তারা বলেছেন, গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কদের জিম্মি করে লিখিত বক্তব্য পাঠ করানো হয়েছে।

মধ্যরাতে ‘সমন্বয়কদের কাছ থেকে জোর করে আন্দোলন প্রত্যাহারের বিবৃতি আদায়, সারা দেশে বিনা বিচারে হত্যা, গুম-খুন, মিথ্যা মামলা ও গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে’ সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন মুক্ত থাকা কয়েকজন সমন্বয়ক। ঢাকার আটটি স্থানে বিক্ষোভ কর্মসূচি হবে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান সমন্বয়কেরা। এই স্থানগুলো হলো সায়েন্স ল্যাব, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ নম্বর গেট, জাতীয় প্রেসক্লাব, উত্তরার বিএনএস সেন্টার, মিরপুর-১০, মিরপুরের ইসিবি চত্বর, রামপুরা ও মহাখালী।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর বলেছে, বিভিন্ন বিদেশি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। ‘কিছু স্বার্থান্বেষী মহল’ এই অপপ্রচার চালাচ্ছে। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জনগণের স্বার্থে ও রাষ্ট্রের যেকোনো প্রয়োজনে সেনাবাহিনী সব সময় জনগণের পাশে আছে ও থাকবে।
এদিন সচিবালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছেন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাত-সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ১৪৭ জন মারা গেছেন।

মোবাইল ইন্টারনেট ১০ দিন পর সচল।

২৯ জুলাই, ২০২৪

কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজতে নিয়ে খাবার খাওয়ানো এবং সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। হাইকোর্ট বলেছেন, ‘জাতিকে নিয়ে মশকরা করবেন না।’ 

সহিংসতায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে পরের দিন মঙ্গলবার সারা দেশে শোক পালন করার সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে। সরকার ঘোষিত মঙ্গলবারের রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখ্যান বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের। এর বদলে একক বা ঐক্যবদ্ধভাবে লাল কাপড় মুখে ও চোখে বেঁধে ছবি তোলা এবং অনলাইনে প্রচার কর্মসূচির ঘোষণা।

রাজধানীসহ দেশের বেশ কিছু স্থানে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বাধা ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। সায়েন্স ল্যাবরেটরি, বাড্ডা, ইসিবিসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় আবারও বিক্ষোভ করার চেষ্টা করেছে কিছু শিক্ষার্থী। এ সময় ঘটে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও। বিক্ষোভের চেষ্টাকালে বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ৩০ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

চট্টগ্রামে সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়েছে। কুমিল্লায় আন্দোলনে যোগ দিতে যাওয়ার সময় এক শিক্ষার্থী পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। জাহাঙ্গীরনগর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে কয়েকজন শিক্ষকও যোগ দেন।

ডিবি হেফাজতে নেয়া সমন্বয়কারীদের ছেড়ে দেয়া ও আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি না করার নির্দেশনা চেয়ে দুপুরে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন দুইজন আইনজীবী।

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকে ঘিরে শত শত শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিক হত্যার বিচার দাবি করেছেন দেশের ৭৪ জন বিশিষ্ট নাগরিক। 

রাতে গণভবনে ১৪ দলের বৈঠকে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

৩০ জুলাই, ২০২৪

হত্যার বিচার চেয়ে মুখে লাল কাপড় বেঁধে মিছিল কর্মসূচি পালন করেন ছাত্ররা। জাতিসংঘ মহাসচিবের বিবৃতি, স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের প্রোফাইল লাল রঙের ফ্রেমে রাঙিয়েছেন অনেকে। এসব ব্যক্তির মধ্যে শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মী, সাংবাদিক, লেখক, শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ আছেন। অন্যদিকে সরকার-সমর্থকদের অনেকে ফেসবুক প্রোফাইলে কালো রঙের ফ্রেম জুড়েছেন।

এদিন ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের। ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে দেশের সব আদালত, ক্যাম্পাস এবং রাজপথে এ কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা করা হয়।

দুপুর ১২টায় ৬ সমন্বয়ককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দিতে আলটিমেটাম দেয় ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’। দুপুর সাড়ে ১২টায় মুখে লাল কাপড় বেঁধে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে মৌন মিছিল করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। 

দুপুরে দেশব্যাপী ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মুখে লাল কাপড় বেঁধে র‍্যালি ও সমাবেশ করেন নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষকবৃন্দ। এতে প্রায় ২০০ শিক্ষক অংশ নেন।

বিকেল ৩টায় উদীচীসহ ৩১টি সংগঠনের পদযাত্রা ও বিক্ষোভ করে। প্রতিবাদমুখর শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীরা বলেছেন, "ছাত্র ও জনসাধারণকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করায় এই সরকার নৈতিকভাবে ক্ষমতায় থাকার অধিকার হারিয়েছে। অবিলম্বে এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি জানিয়েছেন তারা। একই সঙ্গে এই সরকার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন।" এরপর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে প্রবেশের মুখেই পুলিশের বাধার মুখে পড়েন শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মীগণের মিছিল।

বিকেল সাড়ে ৪টায় চট্টগ্রামে বিক্ষোভ করতে বের হয় শিক্ষার্থীরা। তাদের উপর সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।

৩১ জুলাই, ২০২৪

এদিন ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন করা হয়। সারা দেশে ‘ছাত্র-জনতা হত্যা, গণগ্রেপ্তার, হামলা, মামলার প্রতিবাদে ও জাতিসংঘের অধীনে ঘটনার তদন্ত করে বিচার এবং ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এই কর্মসূচির ডাক দিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। এদিন আবার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা। কর্মসূচির নাম দেওয়া হয় ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোস’।

কর্মসূচি পালনের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘নির্যাতনের ভয়ংকর দিন-রাতগুলোর স্মৃতিচারণ, শহীদ ও আহতদের নিয়ে পরিবার এবং সহপাঠীদের স্মৃতিচারণ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হওয়া নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে চিত্রাঙ্কন/গ্রাফিতি, দেয়াল লেখন, ফেস্টুন তৈরি, ডিজিটাল পোর্ট্রেট তৈরি প্রভৃতি।’

এদিকে, সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের তোপের মুখে পড়েন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সাবেক ছাত্রনেতাদের মতবিনিময়ের জন্য ডেকে কথা বলতে না দেওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ সময় সাবেক ছাত্রনেতাদের কেউ কেউ ‘ভুয়া ভুয়া’ বলেও স্লোগান দেন।

বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতির আলোকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের সঙ্গে একটি অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তি নিয়ে আলোচনা স্থগিত করে।

১ আগস্ট, ২০২৪

সারা দেশে ছাত্র-জনতার ওপর হত্যা, গণগ্রেপ্তার, হামলা-মামলা, গুম-খুন ও শিক্ষকদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলার প্রতিবাদসহ ৯ দফা দাবিতে এদিন ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোস’ (আমাদের নায়কদের স্মরণ) কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এদিন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে ছেড়ে দেয়া হয়। 

বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্বাহী আদেশে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারা অনুযায়ী প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে সরকার। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ১৬ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত ঘটনায় মৃত্যু, সহিংসতা, নাশকতা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা তদন্তে হাইকোর্ট বিভাগের তিন বিচারপতির সমন্বয়ে তদন্ত কমিশন গঠন করে। 

২ আগস্ট, ২০২৪

এদিন আন্দোলনে ছাত্র হত্যার বিচারসহ ৯ দফা দাবিতে ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচি পালিত হয়। এই কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে খুলনায় এক পুলিশ সদস্য ও হবিগঞ্জে একজন নিহত হন।

গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজত থেকে ছাড়া পাওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, আন্দোলন প্রত্যাহার করে ডিবি অফিস থেকে প্রচারিত ছয় সমন্বয়ককের ভিডিও স্টেটমেন্টটি তারা স্বেচ্ছায় দেননি।

এদিন দুপুর ১২ টার পর থেকে মোবাইল নেটওয়ার্কে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক আবার বন্ধ করা হয়। একইসাথে মোবাইল নেটওয়ার্কে টেলিগ্রামও বন্ধ করা হয়। পরবর্তীতে ৫ ঘণ্টা পর ফেসবুক-মেসেঞ্জার আবার চালু করা হয়।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলা ও হত্যার প্রতিবাদসহ পূর্বঘোষিত নয় দফা দাবিতে শনিবার (৩ আগস্ট) সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল ও রোববার (৪ আগস্ট) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

রাতে গণভবনে জরুরি বৈঠকে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি দলকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনা করার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়।

৩ আগস্ট, ২০২৪

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘বিক্ষোভ মিছিল’ কর্মসূচি পালিত হয়। বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে দুজন নিহত হন। শিক্ষার্থী, পুলিশ, সাংবাদিকসহ শতাধিক মানুষ আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষক, অভিভাবক, শিল্পীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ আন্দোলনে অংশ নেন। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় কর্মসূচি পালিত হলেও এদিন বিকেলে আন্দোলনকারীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হন। এতে জনসমুদ্রে রূপ নেয় শহীদ মিনার এলাকা।

এদিন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের আলোচনার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেছেন, ‘গণভবনের দরজা খোলা। কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আমি বসতে চাই, তাদের কথা শুনতে চাই। আমি সংঘাত চাই না।’ তবে দুপুরে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম জানান সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। নাহিদ বলেন, তাদের (সরকার) সাথে আলোচনার কোন পরিকল্পনা আমাদের নেই। আমাদের দাবি অত্যন্ত সুস্পষ্ট, তাদের কোন বক্তব্য থাকলে দেশবাসীর সামনেই মিডিয়া মারফত তা রাখতে পারেন। আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার সিদ্ধান্তই আমাদের সিদ্ধান্ত। গুলি আর সন্ত্রাসের সাথে কোন সংলাপ হয় না।

সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাসায় হামলা হয়। এ সময় বাসার সামনে থাকা দুটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয় এবং এর একটিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এর আগে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজারে চট্টগ্রাম–১০ আসনের সংসদ সদস্য মো. মহিউদ্দিন বাচ্চুর কার্যালয়েও হামলা হয়। এ সময় কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়। গাজীপুরের শ্রীপুরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে একজন নিহত হন।

রাত সোয়া ৮টার দিকে শেখ হাসিনা পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষক ও কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

৪ আগস্ট, ২০২৪

এদিন সরকার পতনের ‘একদফা’ দাবিতে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। বেলা ১১টার দিকে শাহবাগ এলাকায় বিক্ষোভকারীরা জড়ো হন। এসময় ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সেখানে এলে লাঠিসোঁটা নিয়ে তাদের ধাওয়া দেন বিক্ষোভকারীরা। পরে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দৌড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে যান। পরে আন্দোলনকারীরা বিএসএমএমইউর ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেন। বেলা ১১টার দিকে এক দল লাঠিধারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পেছনের গেট দিয়ে চত্বরে আসে। সেখানে তারা আচমকা হামলা চালিয়ে ১০-১৫টি মোটরসাইকেল ও দুই-তিনটি অ্যাম্বুলেন্স পুড়িয়ে দেয়। চত্বরে থাকা ব্যক্তিগত গাড়িও পুড়িয়ে দিয়ে পেছনের গেট দিয়ে তারা পালিয়ে যায়। 

মুন্সিগঞ্জ শহরে সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে এদিন সকাল পৌনে ১০টা থেকে দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজন নিহত হন। আহত হন অর্ধশত। সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ চললেও সোয়া ১১টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীদের ওপর সিটি কলেজের দিক থেকে হামলা করেন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। এরপর দুপুর ১২টার দিকে পুলিশও বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।

দুপুর ১২টার পর সরকারি নির্দেশে মোবাইল ইন্টারনেটের ফোর-জি সেবা বন্ধ করা হয়। সাথে দেশের ইন্টারনেট সংযোগ থেকে (ব্রডব্যান্ডসহ) মেটা প্ল্যাটফর্ম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। এর ফলে এই প্ল্যাটফর্মের ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ হয়ে যায়।

দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সন্ধ্যা ৬টা থেকে সারা দেশে কারফিউ জারি করা হয়েছে বলে জানানো হয়। বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে সোমবার থেকে তিন দিনের (৫,৬ ও ৭ আগস্ট) সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নতুন কর্মসূচি লং মার্চ টু ঢাকা ঘোষণা করে। প্রথমে ৬ আগস্ট পালন করার কথা থাকলেও পরে তা ৫ আগস্ট করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘পরিস্থিতি পর্যালোচনায় এক জরুরি সিদ্ধান্তে আমাদের ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ৬ আগস্ট থেকে পরিবর্তন করে ৫ আগস্ট করা হলো। অর্থাৎ আগামীকালই সারা দেশের ছাত্র-জনতাকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

বিকেলে এক বিজ্ঞপ্তিতে সরকার শিক্ষার্থীসহ সব অভিভাবককে ঘরে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানায়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেস উইং থেকে এই বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিভিন্ন জায়গায় জঙ্গি হামলা হচ্ছে। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অসহযোগকর্মসূচি ঘিরে এদিন রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপক সংঘর্ষ ও হানাহানির ঘটনায় অন্তত ৯৮ জন নিহত হয়েছেন।এদের মধ্যে একজন সাংবাদিক রয়েছেন ও ১৪ জন পুলিশ রয়েছেন। 

৫ আগস্ট, ২০২৪

এদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লং মার্চ কর্মসূচি পালিত হয়। কারফিউয়ের ঘোঘণা থাকায় সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলে। সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত তারা রাজপথে কাউকে নামতে দেয়নি; কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজপথে বাড়তে থাকে গণমানুষের জমায়েত। দুপুর গড়িয়ে বিকেল নাগাদ রাজপথগুলো গণজোয়ারে পরিণত হয়। এরই মধ্যে আন্দোলনকারীদের ওপর বিভিন্ন জায়গায় নির্বিচারে গুলি করা হয়। এদিনও ৮৮ জন নিহতের খবর পাওয়া যায়। দুপুরে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যান। রাজপথে শুরু হয় বিজয় উল্লাস। 
এদিকে সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর বিকেল চারটায় জনগণের উদ্দেশে ভাষণ দেন সেনাপ্রধান।

এদিন সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যাব। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে ওনার সঙ্গে কথা বলব। তার সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করা হবে।’

বিকালে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে দেখা করতে বঙ্গভবনে যান বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, আসাদুজ্জামান রিপন, জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান, গণতন্ত্র মঞ্চের প্রধান সমন্বয়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, হেফাজত নেতা মাহমুদুল হক, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হক।

[তথ্য সূত্র: প্রথম আলো, বিবিসি বাংলা, ডেইলি স্টার, কালবেলা, আজকের কাগজ, উইকিপিডিয়া]


Comments

Leave a Comment


Related Articles