রাষ্ট্রপতির অপসারণ: হচ্ছে, হচ্ছে না?
সৈয়দ বোরহান কবীর: রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের অপসারণ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করার ব্যাপারে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং নাগরিক কমিটিসহ আরো কিছু সংগঠন এখন সোচ্চার। গত ২২ অক্টোবর তারা বঙ্গভবন ঘেরাও করে। তারা ৪৮ ঘন্টা আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন যে সময়ের মধ্যে অন্তবর্তীকালীন সরকারকে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের দাবি তোলা হয়। সেই ৪৮ ঘন্টা পেরিয়ে গেছে। রাষ্ট্রপতি স্বপদে বহাল আছেন। অন্যদিকে এই ঘটনার পর পরই বিএনপি’র পক্ষ থেকে ভিন্ন রকম অবস্থান গ্রহণ করা হয়। দেশের অন্যতম প্রধান এই রাজনৈতিক দলটি বলছে এই মুহূর্তে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি করবে। রাষ্ট্রপতির ব্যাপারে তাদের কোন সহানুভূতি নেই এটি যেমন তারা বলছে তেমনি এই মুহূর্তে রাষ্ট্রপতির অপসারণ তারা চাই না বলেও সাফ অবস্থান তাদের। ২৩ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করে দলটির মনোভাব জানিয়ে দেন শীর্ষ নেতারা।
গত ২৬ অক্টোবর শনিবার বিকেল ৫টায় বিএনপি’র সঙ্গে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং নাগরিক কমিটি মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ২ ঘন্টার বেশি সময় ধরে অনুষ্ঠিত এই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে তিনটি বিষয় তুলে ধরা হয়। তার মধ্যে রয়েছে- রাষ্ট্রপতির অপসারণ, বর্তমান সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান তৈরি করা এবং দ্বিতীয় রিপাবলিকের (Second proclamation) পথ পরিক্রমা। একই সঙ্গে তারা রাজনৈতিক সংস্কার এবং সাংবিধানিক সংস্কারের বিষয় নিয়েও কথা বলেন। এই বৈঠকের পর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলা হলেও বিএনপি কিছু জানায়নি। তবে আলোচনায় অংশগ্রহণকারী ছাত্র প্রতিনিধিরা বলেছেন, বিএনপি দলীয় ফোরামে এব্যাপারে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবে। তাই এই প্রশ্নটি ক্রমশঃ প্রধান হয়ে উঠছে, শেষ পর্যন্ত কি রাষ্ট্রপতির অপসারণ হচ্ছে, নাকি হচ্ছে না?
রাষ্ট্রপতির অপসারণ বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী এখন অসম্ভব। সংবিধানে রাষ্ট্রপতির অপসারণের একটিই পথ খোলা আছে আর তা হলো জাতীয় সংসদে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির অভিশংসন। কিন্তু যেহেতু সংসদ এখন বিলুপ্ত তাই এই প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতির অপসারণ অসম্ভব। রাষ্ট্রপতি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন তাহলেও রাষ্ট্রপতির পদ শূণ্য হতে পারে। সেক্ষেত্রে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা হলো স্পীকার হবেন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি। স্পীকার শিরিন শারমিন চৌধুরী ইতোমধ্যে পদত্যাগ করেছেন। ডেপুটি স্পীকার জেলে। তবে অবস্থা দৃষ্টে এটি সুস্পষ্ট যে, রাষ্ট্রপতি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করছেন না। এখন দেখার বিষয়, রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ কিভাবে করা হবে। আদৌ কি শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির অপসারণ বিষয়ে ঐক্যমত হবে? যদিও হয়, এতে সাংবিধানিক শূণ্যতা সৃষ্টি হবে কিনা। সেটিও এখন বড় প্রশ্ন।
বর্তমান যে অন্তবর্তীকালীন সরকার তা সংবিধান অনুযায়ী গঠিত সংবিধান সুরক্ষার জন্য তারা শপথ গ্রহণ করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে তিনদিন কোন সরকার ছিলো না। ৮ আগস্ট বর্তমান সরকার শপথ গ্রহণ করে। এই শপথ গ্রহণের আগে রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে একটি রেফারেন্স পাঠানো হয় এবং সুপ্রিম কোর্ট এ ধরনের পরিস্থিতিতে একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করা যায় মর্মে তাদের মতামত দেয়। সেই মতামতের প্রেক্ষিতেই বর্তমান সরকার শপথ গ্রহণ করেছে। কাজেই, বর্তমান সরকার সংবিধান মেনেই গঠিত একটি অন্তবর্তী কালীন সরকার। তাই এই মুহূর্তে যদি সংবিধান বাতিল করে দেয়া হয় তাহলে বর্তমান সরকারের বৈধতা বিশেষ করে এই সরকারের গত তিন মাসের কার্যক্রমগুলো প্রশ্নের মুখোমুখি হবে। শপথ ভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্যরা।
যারা এই গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে বিভিন্নভাবে জড়িত ছিলেন তাদের মধ্যে এই সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা এবং বিপ্লবী সরকার নিয়ে নানা রকম বিতর্ক রয়েছে। ইতোমধ্যেই ফরহাদ মাজহার বলেছেন যে, এই সংবিধানের অধীনে অন্তবর্তীকালীন সরকারের শপথ গ্রহণ ছিলো একটি ভুল সিদ্ধান্ত। অন্তবর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সাম্প্রতিক সময়ে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে স্বীকার করেছেন, এটি সম্মিলিত ভুল।
ভুল হোক, শুদ্ধ হোক। সংবিধান অনুযায়ী এই অন্তবর্তীকালীন সরকার কাজ করছে। কাজেই এখন সংবিধান মেনেই তাকে এগুতে হবে। সম্ভবত এখানেই বিএনপি রাষ্ট্রপতি’র অপসারণের ব্যাপারে আপত্তি প্রকাশ করছে। এখন যদি রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করা হয় তাহলে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হবে। এই সংবিধান বাতিল করলে গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী ৫ আগস্ট থেকে যে প্রক্রিয়াগুলো সংগঠিত হয়েছে তার সব কিছুরই আইনগত বৈধতা নিয়ে আজ অথবা কাল প্রশ্ন উঠবে। কাজেই বিএনপি তার রাজনৈতিক দৃষ্টি ভঙ্গি থেকে রাষ্ট্রপতির অপসারণের বিষয়ে তাদের নেতিবাচক অবস্থান গ্রহণ করেছে। বিএনপি নতুন বিতর্কে দেশকে নিতে চায় না।
গতকাল অর্থাৎ ২৬ অক্টোবর শনিবারের বৈঠকের পরদিন রোববার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, সংস্কার শেষে যত দ্রুত সম্ভব নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে হবে। অভ্যুত্থানের ফসল যেন নষ্ট না হয় সেজন্য জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন তিনি। তাছাড়া তিনি সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, রাষ্ট্রপতির পদ নিয়ে কোন হটকারী সিদ্ধান্ত ঠিক হবে না। এরকম একটি বাস্তবতায় বাংলাদেশ একটি জটিল সাংবিধানিক প্রশ্নে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দুই পক্ষ। যদিও অন্তবর্তীকালীন সরকারের একজন উপদেষ্টা বলেছেন যে, রাষ্ট্রপতির অপসারণের বিষয়টি সাংবিধানিক নয়, এটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। কিন্তু তার কথায় যতোটা আবেগ আছে ততোটা যুক্তি নেই। কারণ এই সরকার একটি সাংবিধানিক ভিত্তিতেই পরিচালিত হচ্ছে। এটি কোন বিপ্লবী সরকার নয়। এই সরকার সংবিধান মেনেই শপথ নিয়েছেন। এখন এই অন্তবর্তীকালীন সরকারের সামনে দ্বিমুখী সাংবিধানিক সংকট দেখা দিয়েছে।
প্রথমত তারা যদি সংবিধান মেনেই অন্তবর্তীকালীন সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সেক্ষেত্রে তাদেরকে সংবিধান মানতে হবে। এই সংবিধান যদি তারা মানেন তাহলে বেশ কিছু কর্মকান্ড এখন পরিচালিত হচ্ছে যেগুলো বর্তমান সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। অবশ্য এক্ষেত্রে একটি সাংবিধানিক প্রতিকারের ব্যবস্থা রয়েছে। যখন একটি নির্বাচন হবে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংসদ গঠিত হবে সেই নতুন সংসদ এই কার্যক্রমগুলোকে বৈধতা দেবে। এর আগে সংবিধানের পঞ্চম এবং সপ্তম সংশোধনীর মাধ্যমে সেনা শাসনকে বৈধতা দেয়া হয়েছিলো। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশে সকল কর্মকাণ্ডকে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বৈধতা দেয়া হয়েছিলো। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে সামরিক শাসন জারি করেছিলেন। তারপর তিনি যে কর্মকান্ডগুলো করেছিলেন তার সবকিছুই সংবিধানের আলোকে ছিলো না। কাজেই এই সমস্ত কার্যক্রমগুলোকে পরবর্তীতে সপ্তম সংশোধনীর মাধ্যমে বৈধতা দেয়া হয়। এখন যে প্রক্রিয়াই এবং যেভাবে সরকার গঠিত হয়েছে তাতে অবশ্যম্ভাবীভাবে নতুন সরকার গঠিত হলে সংবিধান সংশোধনীর প্রয়োজন হবে এবং এই সমস্ত কর্মকাণ্ডগুলোকে সাংবিধানিকভাবে বৈধতা দিতে হবে। তাছাড়া বর্তমান সংস্কার বিষয়ে ড. আলী রীয়াজের নেতৃত্বে যে সংবিধান সংস্কার কমিশন করেছে। তারা শুধু সুপারিশ করবে। সংবিধান পুনঃলিখন বা সংশোধন করতে পারে কেবল একটি নির্বাচিত সরকার- এরকম বক্তব্য ইতোমধ্যেই বিএনপি’র পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বেশ কিছু সংগঠনের পক্ষ থেকে সংবিধান বাতিল করে একটি বিপ্লবী সরকারের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এই রকম একটি সরকার গঠনের সময় বহু আগেই পেরিয়ে গেছে। ৫ আগস্ট যখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন তখনই একটি বিপ্লবী সরকার গঠন করা যেতে পারতো। সেই বিপ্লবী সরকার সংবিধানের আওতায় হতো না। জন আকাঙ্খার ভিত্তিতে হতো। সেই রকম একটি সরকার যদি গঠিত হতো তাহলে রাষ্ট্রপতির পদটি এমতিতেই অকার্যকর হয়ে যেত। কিন্তু বাস্তবতা হলো সেটি হয়নি। বরং রাষ্ট্রপতির তত্বাবধানেই এবং রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্তবর্তীকালীন সরকারের অন্যান্য উপদেষ্টারা শপথ গ্রহন করেছেন। তাই নতুন করে এই সরকারকে বিপ্লবী সরকার হিসেবে রূপান্তর অনেকগুলো জটিলতার সৃষ্টি করবে। দেশে একটি অনিশ্চয়তা ও শূন্যতা সৃষ্টি করবে।
অন্যদিকে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এবং যে কারণে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ চাইছেন সেটি হলো- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সত্যি সত্যি পদত্যাগ করেছেন কিনা এবং তাঁর পদত্যাগ পত্রটি কোথায় আছে?
মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছিলেন। এই সৌজন্য সাক্ষাতের আলাপচারিতার মধ্যে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ পত্রটি কোথায় রয়েছে সে বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। কিন্ত রাষ্ট্রপতি তাকে জানিয়েছেন তার কাছে পদত্যাগ পত্র নেই এবং উনি (সাবেক প্রধানমন্ত্রী) তাকে বলে যাননি। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এই পদত্যাগ ভবিষ্যতে জটিল রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করতে পারে বলে আশংকা করছেন অনেকে। বিশেষ করে এই গণঅভ্যুত্থানের সময়ে নেপথ্যে ভূমিকা পালনকারী অন্যতম ফরহাদ মাজহার দাবি করেছেন, যেকোন সময় শেখ হাসিনা বলতে পারেন, তিনি পদত্যাগ করেননি এবং তিনি বৈধ প্রধানমন্ত্রী। এই আশংকা থেকেই এটিকে একটি নতুন রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে মনে করছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ এবং আরো কিছু কিছু রাজনৈতিক দল। তারা মনে করছেন, এই ঘটনাটি এই সরকারকে বিপদে ফেলতে পারে। এই সরকারের বৈধতা নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্ন উঠতে পারে। ইতোমধ্যে এনিয়ে নানা গুঞ্জন শোনা যায়।
বিএনপি’র অবস্থান এক্ষেত্রে খুবই সুস্পষ্ট। বিএনপি মনে করছে, একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে সে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান কাজ হবে দ্রুত একটি নির্বাচন দেয়া। নির্বাচনের জন্য যতোটুকু সংস্কার দরকার ততোটুকু সংস্কার সাধন করেই এই সরকার যাতে নির্বাচনের পথে হাটে। বিএনপি’র পক্ষ থেকে একাধিকবার রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে নানারকম শঙ্কা এবং সন্দেহের কথা বলা হয়েছে। আকার ইঙ্গিতে তারা আরেকটি এক-এগারোর কথাও উড়িয়ে দেয়নি। বাংলাদেশে যে এই ধরনের সুশীল অধ্যুষিত সরকারগুলো এক-এগারোর মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে এমন শংকা বিএনপি’র মধ্যে আছে। কাজেই বিএনপি দ্রুত নির্বাচন চায় এবং সেই নির্বাচনের মাধ্যমে যারা বিজয়ী হবে তারা সংবিধান পুর্নলিখন বা সংশোধন যেটিই হোক না সেটিই করবে। পাশাপাশি বিএনপি এটিও মনে করে, যে জনগণের ভোটে নির্বাচিত ঐ সরকারই সংবিধান সংশোধনসহ রাষ্ট্র সংস্কারের কাজগুলো করবে। এনিয়ে ক্রমশঃ বিএনপি’র সঙ্গে আন্দোলনের প্রধানশক্তি ছাত্রদের একটি মত পার্থক্য এবং দূরত্ব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই দূরত্ব কোথায় গড়ায় সেটি একটি বড় বিষয়। এই দ্বন্দ্ব বাড়লে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়াও অসম্ভব নয়।
শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য যেসকল রাজনৈতিক শক্তি একাট্টা হয়েছিলো তাদের মধ্যে এখন বিভাজন খুবই সুস্পষ্ট। ৩ মাসের মধ্যেই সকল পক্ষের ঐক্যে একটি ভাটার টান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নানা ইস্যুতে আন্দোলনরত দলগুলো একে অপরকে দোষারোপ করছে তা দৃশ্যমান। এমনকি যারা আদা-জল খেয়ে শেখ হাসিনাকে উৎখাতের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবিরাম যুদ্ধ করেছিলেন তারাও এখন এই সরকারের সমালোচনায় মুখর। অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ইত্যাদি নানা কারণে সরকার যে বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলো তাতে এখন ভাটার টান। সবকিছু মিলিয়ে সরকারের যে মধুচন্দ্রিমার সময় তা কেটে যাচ্ছে। এখন সামনে এই সরকারের জন্য কঠিন পথ। তার মধ্যে এই সংবিধান বাতিল কিংবা দ্বিতীয় রিপাবলিক তৈরী করা, রাষ্ট্র সংস্কারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ এবং জন সম্পৃক্ত কর্মকান্ডগুলো করা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে কিনা এনিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
অন্যদিকে এই আন্দোলনে বিএনপি প্রধান শক্তি না হলেও তাদের সাংগঠনিক অবস্থা এবং রাজনৈতিক শক্তি প্রবল। ছাত্র আন্দোলনের সময় একটি আবেগ ছিলো সাধারণ মানুষের মধ্যে। সেই আবেগ এখন থিতিয়ে গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রদের সমাবেশগুলোতে আগের সেই জনস্রোত লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এরকম একটি বাস্তবতায় বিএনপি’কে অস্বীকার করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিছু করতে পারবে কিনা সেটি যেমন একটি প্রশ্ন। তার চেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, বিএনপি’কে মাইনাস করে কোন সিদ্ধান্ত নিলে রাজনীতিতে যে টালমাটাল অবস্থা তা নতুন আকার ধারন করবে কিনা তা ভেবে দেখতে হবে সকলকে। তাই রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে রাজনীতিতে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে সে অস্থিরতা কিভাবে প্রশমিত হবে এবং এই অস্থিরতা নতুন সংকটের দিকে বাংলাদেশকে নিয়ে যাবে নাকি সকল পক্ষের শুভ বুদ্ধির উদয় হয়ে একটি সমঝোতার পথ উন্মুক্ত হবে সেটিই এখন দেখার বিষয়।
সৈয়দ বোরহান কবীর, নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com
Comments
Leave a Comment