Post Thumbnail

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ: ৪ ফেব্রুয়ারীর পর কি হবে?


৫ আগস্ট একটি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। ৫ থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত দেশে কোন সরকার ছিলো না। ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নের্তৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে শপথ গ্রহণ করে। তার আগে রাষ্ট্রপতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের একটি মতামত গ্রহণ করেন এবং সুপ্রিম কোর্ট তাঁর মতামতে আপদকালীন সময়ের জন্য কাউকে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পালনের বৈধতা দেয়। আর একারণেই গণ আকাঙ্খার প্রতিফলন হিসেবে ছাত্র-জনতার সম্মিলিত আহ্বানে ড. ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। 

এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাংবিধানিক ভিত্তি হলো সুপ্রিমকোর্টের মতামত। কিন্তু প্রশ্ন হলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কতদিন মেয়াদে থাকতে পারে? সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত মেয়াদের সুস্পষ্ট কোন সময় সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। বরং সময়-সীমার ব্যাপারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সংস্কার কার্যক্রমগুলো সম্পন্ন হওয়ার পর একটি নির্বাচন হবে এবং নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ সম্পর্কে সেনা প্রধান একটি বিদেশী গণমাধ্যমের কাছে সাক্ষাৎকারে একটি রূপরেখা দিয়েছিলেন বেশ কিছুদিন আগে। ১৮ মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচন হবে তিনি সাক্ষাৎকারে আশা করেন। তবে, এই বক্তব্যের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেছিলেন, সংস্কারের পর ১৮ মাস। অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, “আমরা যখন বলবো তখন নির্বাচন হবে”। আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচন হবে বলে মন্তব্য করে পরদিন সেখান থেকে সরে আসেন। তিনি বলেন, এটা প্রধান উপদেষ্টার সিদ্ধান্ত। 

তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ নিয়ে ইতোমধ্যে বিএনপি’র অস্বস্তি প্রকাশ্য হয়েছে। বিএনপি এখন দ্রুত নির্বাচনের কথা বলতে শুরু করেছে। বিএনপি’র এই বক্তব্য শীঘ্রই আরো জোরালো হতে পারে। রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে বিএনপি’র ভিন্ন অবস্থান প্রমাণ করেছে, তারা সাংবিধানিক পথে দ্রুত একটি নির্বাচন চায়। এর ফলে সাংবিধানিক সময় সীমার মধ্যে নির্বাচন ইস্যুটি অচিরেই সামনে আসবে। বিএনপি সংবিধানের বাইরে না যাওয়ার ব্যাপারে মোটামুটি অনঢ়। বিলম্বে নির্বাচন বিএনপি’র সঙ্গে সরকারের টানা পোড়েন সৃষ্টি করবে। 

এই সরকার কতদিন মেয়াদে থাকবে বা কবে নির্বাচন হবে সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত সুস্পষ্ট কোন রূপরেখা ঘোষণা না করলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যে কিছু সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং নির্বাচন কমিশন, সংবিধানসহ কতগুলো ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য কমিটিও গঠন করেছে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এই কমিটিগুলো চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রদান করার কথা। এসমস্ত কমিশন গঠনের আগে ও পরে প্রধান উপদেষ্টা কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও বৈঠক করছেন।  

তবে মূল প্রশ্ন অন্য জায়গায়। যেহেতু এখন পর্যন্ত সংবিধান বহাল রয়েছে, সংবিধান বাতিল করা হয়নি। কাজেই সংবিধানে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদের ব্যাপারে কি ধরনের নির্দেশনা আছে তা জানা অত্যন্ত জরুরি। যদিও বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থার কোন উল্লেখ নেই। তারা সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতেই একটি বৈধ সরকার হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন। তবে সংবিধান বহাল থাকার কারণে সাংবিধানিক কিছু বিধি-নিষেধ এই সরকারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলেই কয়েকজন সংবিধান বিশেষজ্ঞ দাবি করেছেন। 

বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়সূচীর কথা বলা হয়েছে। সংবিধানের ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদ সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অর্থাৎ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে।  ১২৩ (৩খ)-তে বলা হয়েছে, মেয়াদ অবসান ব্যতিত অন্য কোন কারণে সংসদ ভেঙ্গে যাওয়ার ক্ষেত্রে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে হবে। তবে ১২৩ (৪) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মতে কোন দৈব দুর্দিনের কারণে এই দফা নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে যদি উক্ত নির্বাচন না হয় তাহলে শেষ দিনের পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে উক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।’ অর্থাৎ ৯০ দিন পর পরবর্তী ৯০ দিন নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আরো সময়-সীমা পাওয়া যাবে। 

৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সংসদ ভেঙ্গে দিয়েছেন। এক্ষেত্রে নতুন নতুন সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে সাকুল্যে ১৮০ দিন সময় পাওয়া যাবে। অর্থাৎ ৪ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে নতুন একটি নির্বাচন করা এখন সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে আগামী বছরের ৪ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে নির্বাচন করা প্রায় অসম্ভব বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কি করবে? সাংবিধানিক এই বাধ্যবাধকতা পূরণের ক্ষেত্রে তাদের করণীয় কি সেটি একটি বড় প্রশ্ন। একারণেই বর্তমানে সাংবিধানিক ইস্যুতে রাজনৈতিক অনৈক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল স্বীকার করেছেন বিপ্লবী সরকার গঠন না করাটা তাদের সম্মিলিত ভুল। এই ‘সম্মিলিত ভুল’ কি এখন শোধরানো যাবে? এটি এখন কোটি টাকার প্রশ্ন। 

তবে অনেক সংবিধান বিশেষজ্ঞ মনে করছেন এটি বড় সমস্যা নয়। যেভাবে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছিলো ঠিক একইভাবে আপদকালীন সময়ের জন্যও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ বা পরবর্তী নির্বাচনের জন্য সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা শিথিল করা যেতে পারে। 


Comments

Leave a Comment


Related Articles