Post Thumbnail

৭২’র সংবিধান বাতিল এই মুহূর্তে সম্ভব নয়


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’, বাহাত্তরের সংবিধান এবং নির্বাচন সহ বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একান্ত একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে দৈনিক যুগান্তর। বিষয়টির প্রাসঙ্গিকতা এবং পাঠকদের আগ্রহের কথা বিবেচনা করে এখানে হুবহু প্রকাশ করা হলো। 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিবর্তন এসেছে। নানা হিসাবনিকাশ কষতে শুরু করেছে রাজনৈতিক দলগুলো। নতুন এ পরিস্থিতিতে দীর্ঘ ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীরা এখন অনেক উজ্জীবিত। জাতীয় নির্বাচনের জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ২০২৫ সালের মধ্যেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়া সম্ভব। দ্রুত নির্বাচন হলে যে সংকটগুলো তৈরি হচ্ছে, তা অনেকাংশে কমে আসবে। দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে। ভোটের অধিকার যদি প্রতিষ্ঠিত না হয়, তাহলে রাস্তায় নামতেই হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’-এর খসড়া প্রস্তাবে বাহাত্তরের সংবিধান বাতিলের যে দাবি এসেছে, সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ দাবি এই মুহূর্তে বাস্তবায়ন করা সম্ভব না। ভবিষ্যতে যদি কখনো সুযোগ ও সময় আসে, তখন জাতির চিন্তা করে দেখা উচিত বলে তিনি মনে করেন।

সোমবার দুপুরে রাজধানী গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে যুগান্তরের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। তিনি জানান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলকে সুসংগঠিত করা এবং নির্বাচনের প্রস্তুতির নেওয়ার বার্তা দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও ভোটে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে বলেন, এ সিদ্ধান্ত আসবে জনগণের কাছ থেকে। এছাড়া দেশের চলমান পরিস্থিতি, জাতীয় নির্বাচন, রাষ্ট্র সংস্কার, যুক্তরাষ্ট্র-চীন-ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক, নতুন দল গঠন, জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রসঙ্গ, জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক, মাইনাস টু ফর্মুলা, চিকিৎসার জন্য চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরাসহ নানা বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।

যুগান্তর: সম্প্রতি লন্ডন সফরে গিয়েছিলেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছ থেকে কী বার্তা নিয়ে এসেছেন?

মির্জা ফখরুল: ভারপ্রাপ্ত চেয়াম্যান এখন দলের মূল দায়িত্বে রয়েছেন। তার সঙ্গে কথা বলেছি, উদ্দেশ্যও সেটা ছিল। সেখানে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা-সবকিছু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দল সুসংগঠিত করতে হবে এবং নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে-এটাই হচ্ছে প্রধান বার্তা।

যুগান্তর: ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে কবে ফিরবেন?

মির্জা ফখরুল: এখনো সময় নির্ধারণ হয়নি। তার অনেক মামলা আছে। বেশ কিছু মামলা শেষ হয়েছে, আরও কিছু বাকি আছে। মামলা শেষ হলেই উনি চলে আসবেন।

যুগান্তর: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য কবে নাগাদ লন্ডন যেতে পারেন?

মির্জা ফখরুল: তারিখ সুস্পষ্টভাবে বলতে পারব না। কারণ, ওনার শরীর মাঝেমধ্যে একটু খারাপ হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে বিলম্বিত হচ্ছে। এখন মনে হয়, নতুন বছরের প্রথমদিকেই যাবেন।

যুগান্তর: দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলে দেশের অস্থিরতা বা সংকট অনেক কমে যাবে বলে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল বলছে। একই সঙ্গে দলগুলো বলেছে এখনো সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়নি।

মির্জা ফখরুল: আমরা সুস্পষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছি। নির্বাচন হলে যে সংকটগুলো তৈরি হচ্ছে, তা অনেকাংশে কমে আসবে। নির্বাচিত সরকারে মানুষের যে আস্থা, সেই সঙ্গে নির্বাচিত সরকারের যে শক্তি তৈরি হয়, সেটা অনেক শক্তিশালী হয়। যে কারণে তারা অনেক কাজ করতে পারেন, যা অনির্বাচিত সরকারের পক্ষে সম্ভব হয় না।

যুগান্তর: যদি জানুয়ারির মধ্যেও নির্বাচনি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা না হয়, সেক্ষেত্রে দলের ভাবনা কী।

মির্জা ফখরুল: এটা ঠিক এ মুহূর্তে বলতে পারব না। এ মুহূর্তে কোনো বিরোধে কারও সঙ্গে যেতে চাই না। আমি মনে করি, এখন যেটা দরকার-সব বিষয়ে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা আমাদের একটা দায়িত্ব। সেভাবে আমরা কাজ করতে চাই।

যুগান্তর: ঠাকুরগাঁওয়ে জনসভায় বলেছেন ভোট-ভাতের অধিকার আদায়ে আবার রাস্তায় নামতে হবে। আন্দোলনে নামার কোনো পরিকল্পনা আছে কি না?

মির্জা ফখরুল: আমাদের ভোটের অধিকার যদি জনগণ ফিরে না পায়, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা যদি না হয়; তাহলে তো আমাদের রাস্তায় নামতেই হবে। এটা আমাদের কাজ।

যুগান্তর: আগামী জাতীয় নির্বাচন কবে নাগাদ চান?

মির্জা ফখরুল: আমরা সেভাবে কিছু বলিনি। তবে আমরা মনে করি, ২০২৫ সালের মধ্যেই নির্বাচন হওয়া সম্ভব। সেটা ২৫ সালের মধ্যেই সব ব্যবস্থাই নিয়ে নেওয়া যায়, যেগুলো প্রয়োজন নির্বাচনের জন্য।

যুগান্তর: জাতীয় প্রেস ক্লাবে একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন মানুষের মধ্যে ধারণা হচ্ছে সরকার ইচ্ছা করে নির্বাচন বিলম্ব করছে। কেন মনে হলো?

মির্জা ফখরুল: হঠাৎ করে দেখলাম ভোটারের ন্যূনতম বয়সসীমা ১৭ বছরের কথা বললেন প্রধান উপদেষ্টা। তো এটা স্বাভাবিকভাবে আমাদের নির্ধারণ করা তো আছেই ১৮ বছর। সেটা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো বা অন্য স্টেকহোল্ডাররা তো কেউ কথা বলেননি। সেখানে এটিকে আমাদের কাছে মনে হয়েছে, এই যে বিভিন্নভাবে ছাত্ররা মুভমেন্ট করছেন, সেই মুভমেন্টে বেশিদিন ধরে ক্ষমতায় থাকার জন্য একটা প্রবণতা দেখা যায়। এটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু বয়সটা যদি কমানো যায়, সেটা আরও সময় লাগবে। নতুন ভোটার তালিকা তৈরি করতে হবে। অনেক সময় লাগবে। তো সেই ব্যাপারটার কারণে আমি বলেছি।

যুগান্তর: সরকারের দুয়েকজন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা বলছেন, সংস্কার শেষে জাতীয় নির্বাচন। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?

মির্জা ফখরুল: বিএনপি সংস্কার চায় না, নির্বাচন চায়-এটা ঠিক নয়। বিএনপি প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নির্বাচন চায়। আমরা বারবার বলছি, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যেটুকু (সংস্কার) দরকার, সেটুকু শেষে নির্বাচনে যেতে চাই। নির্বাচন যত দেড়ি হবে, দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট তত বৃদ্ধি পাবে। সুতরাং আমরা বিশ্বাস করি, দ্রুত দ্রুত নির্বাচন সম্ভব করতে পারলে দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে।

যুগান্তর: আরেক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আমরা যেন একাত্তরকে ভুলে না যাই-হঠাৎ কেন এ কথা বললেন?

মির্জা ফখরুল: আমরা লক্ষ করছি কোনো কোনো ব্যক্তি মাঝেমধ্যে ভিন্নভাবে কথা বলার চেষ্টা করছেন। একাত্তর সালকে অনেকে কটাক্ষ করছেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিষয়কে তারা ইগনোর করছেন। সেক্ষেত্রে আমি এ কথা বলতে বাধ্য হয়েছি যে, একাত্তরকে বাদ দিয়ে আমাদের দেশের জাতির অস্তিত্ব আমরা চিন্তা করতে পারি না।

যুগান্তর: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা দল গঠনের কথা বলছেন। কীভাবে দেখছেন...

মির্জা ফখরুল: রাজনৈতিক সংগঠন করার অধিকার তো আমাদের সংবিধানেই দেওয়া আছে। এটা আমি মনে করি, সবাই করতে পারেন; কিন্তু সেটা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে তো। মানুষ গ্রহণ করলেই সেই দল কার্যকরভাবে কাজ করতে পারবে।

যুগান্তর: ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ দেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। নেতারা বলেছেন, ঘোষণাপত্রে বাহাত্তরের মুজিববাদী সংবিধানের কবর রচিত হবে। আপনি বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

মির্জা ফখরুল: ছেলেরা তো অনেক অবেগপ্রবণ। যুবক, তাদের তারুণ্যে সবকিছু মিলিয়ে তাদের তো একটা আকাঙ্ক্ষা থাকতেই পারে। সেভাবে তাদের মতো করে তারা বলেছে। আমি মনে করি, তারা তাদের আবেগ থেকেই বলেছে, তারুণ্য থেকে বলেছে। এটাকে (বাহাত্তরের সংবিধান বাতিলের দাবি) এই মুহূর্তে বাস্তবায়ন করা সম্ভব না। ভবিষ্যতে যদি কখনো সুযোগ আসে, সময় আসে, তখন জাতির চিন্তা করে দেখা উচিত বলে আমি মনে করি।

যুগান্তর: সংস্কার-নির্বাচনসহ নানা ইস্যুতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপির কোনো ধরনের দূরত্ব হয়েছে কি না?

মির্জা ফখরুল: কোনো দূরত্ব নেই। ছাত্রনেতাদের সঙ্গে বিএনপির একটা ভালো সম্পর্ক আছে। মতের আদান-প্রদানও হয়।

যুগান্তর: ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ নিয়ে আপনিও কথা বলেছিলেন। এমন কিছু কি সন্দেহ করছেন?

মির্জা ফখরুল: আমাদের তো একটা অভিজ্ঞতা আছে, খারাপ অভিজ্ঞতা। ‘ওয়ান-ইলেভেন’-এর সেই অভিজ্ঞতা আমরা দেখলাম যে সরকার এলো, এসে দুই বছর থাকল। দুই বছর থেকে তা হাইকোর্ট থেকে পাস করিয়ে নিল। আমি মনে করি, এ জিনিসগুলো দেখা উচিত। তবে এখন আর মাইনাস টু ফর্মুলা আছে বলে মনে করি না। কিন্তু তারপরও বলেছি, বিএনপিকে মাইনাস করার ক্ষমতা কারও নেই। সুতরাং মাইনাস টু ফর্মুলা এখন আর চলবে না।

যুগান্তর: জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির এখন সম্পর্ক কেমন চলছে, কোনো দূরত্ব আছে কি না?

মির্জা ফখরুল: তারাও (জামায়াত) একটা রাজনৈতিক দল, আমরাও একটা রাজনৈতিক দল। অনেক সময় হয় কী-একটি দল আরেকটি দলকে আক্রমণ করে কথা বলে। সেগুলো মাঝেমধ্যেই তো হয়ই। ওভারঅল সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই আমাদের সম্পর্ক ভালো, শুধু আওয়ামী লীগ ছাড়া।

যুগান্তর: একক নাকি জোটগতভাবে বিএনপি নির্বাচন করবে?

মির্জা ফখরুল: এটা এ মুহূর্তে বলা সম্ভব না। নির্বাচন এলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা হয়, তারপর সিদ্ধান্ত হয়।

যুগান্তর: আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে বিএনপির অবস্থান কী?

মির্জা ফখরুল: আমরা এর আগেও বলেছি, এ বিষয়ে জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে। এ সিদ্ধান্ত আসবে জনগণের কাছ থেকে।

যুগান্তর: বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কে একধরনের টানাপোড়েন চলছে। এ থেকে উত্তরণের পথ কী মনে করেন।

মির্জা ফখরুল: প্রথম যেটা হওয়া উচিত, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কটা পুরোপুরি নির্ভর করবে ভারতবর্ষের আচরণের ওপরে। সে কীভাবে বাংলাদেশকে দেখছে, কীভাবে সে ডিল করছে, এর ওপর। যদি ভারত মনে করে, বাংলাদেশ তার অধীনস্থ একটা রাজ্য, তাহলে ভুল হবে। আর বাংলাদেশে একটি দল থাকবে আওয়ামী লীগ, যাদের সঙ্গে তাদের (ভারতের) সম্পর্ক করতে হবে; তাহলে তারা (ভারত) ভুল করবে। সেই ভুলটা হয়েছে। এজন্যই আমি বরাবর বলে আসছি, আমাদের যেমন একক কোনো বন্ধু থাকা উচিত নয়, ঠিক একইভাবে ভারতবর্ষেরও একক একটা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা এখানে কোনোমতেই সমীচীন হতে পারে না। এখানে জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক হতে হবে।

যুগান্তর: আপনি কি মনে করেন বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের নীতির কোনো পরিবর্তন হয়েছে?

মির্জা ফখরুল: আমার মনে হয়, এখন পর্যন্ত আমি দেখছি না। এজন্য যে আমাদের সীমান্তে হত্যা তো বন্ধ হয়নি। ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে এবং নেগেটিভ একটা অবস্থানে আছে। ভারতের সেখান থেকে বেরিয়ে আসা দরকার।

যুগান্তর: শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছেন। সেখান থেকে ভার্চুয়ালি কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। বিষয়টি দুদেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়ছে কি না?

মির্জা ফখরুল: সম্পর্কে প্রভাব পড়ে গেছে অলরেডি। হাসিনাকে ফেরত চেয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে একটা অত্যন্ত বিরূপ প্রতিক্রিয়া আছে। সুতরাং এটা আমি মনে করি, ভারতের উচিত-বাংলাদেশের জনগণের যে ইচ্ছা, এর প্রতি সম্মান রেখে হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত দেওয়া।

যুগান্তর: যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক কেমন চলছে?

মির্জা ফখরুল: বিএনপির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ভালো। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক এখন তো ভালো। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কও আমাদের নেগেটিভ কিছু নয়।

যুগান্তর: প্রায় ১৬ বছরের সবচেয়ে বেশি নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সর্বশেষ গণ-অভ্যুত্থানেও প্রায় ৫০০ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। মামলা হয়েছে, বিচারকাজ চলছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত জড়িত অনেকেই গ্রেফতার হননি। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন।

মির্জা ফখরুল: গ্রেফতারের বিষয়টি তো পুলিশের ব্যাপার। তবে মামলাগুলো সঠিকভাবে হয়েছে বলে আমার কাছে মনে হয় না। কারণ, একটি মামলায় হাসিনা থেকে শুরু করে একশ থেকে দেড়শ জনের নামে আসামি করে তারপর আবার অজ্ঞাতনামা করা। সুতরাং এটা যারা করেছে, তাদের উচিত ছিল পরামর্শ করে মামলা করা।

যুগান্তর: বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে দু-একটি রাজনৈতিক দল বলছে, এখনো একটি দল চাঁদাবাজি ও দখলদারি করছে।

মির্জা ফখরুল: সব অভ্যুত্থানের পর সব দেশেই একটা টালমাটাল অবস্থা হয়। সেই অবস্থায় কিছু কিছু ঘটনা ঘটে। সেখানে গোটা দেশের মধ্যে এ ঘটনা ঘটেছে। বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল হিসাবে তা এতটুকুও সমর্থন করেনি। দেড় হাজার নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে, যারা কিছু কিছু ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল। সুতরাং এ ধরনের কর্মকাণ্ডে আমরা সব সময় বিরোধিতা করি। আর আমাদের দলের কেউ হলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। বিএনপির নামে কলঙ্ক দেওয়ারও চেষ্টা করা হচ্ছে।

যুগান্তর: পট পরিবর্তনের পর বিএনপিতে অনুপ্রবেশকারীরা এখন অনেকটা দাপটে, ত্যাগীরা কোণঠাসা-এমন একটি অভিযোগ আছে, কতটুকু সত্যি?

মির্জা ফখরুল: এটা সত্য নয়। আমি এরকম কোনো কিছু দেখিনি।

যুগান্তর: জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে আন্দোলনরত সব রাজনৈতিক দল নিয়ে ‘জাতীয় সরকার’ করবে বিএনপি।

মির্জা ফখরুল: আমরা যখন ৩১ দফা দিই, এরও আগে আমরা যখন ১০ দফা দিয়েছিলাম গোলাপবাগে; সেখানেও কিন্তু বলেছিলাম আমরা নির্বাচনে জয়ী হলে আন্দোলনরত সব দল নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করব। যাতে রে সব কাজ একসঙ্গে করতে পারি। ঠিক একইভাবে আমরা এখনো বলেছি, ভোটে যারা নির্বাচিত হয়ে আসবে অথবা আন্দোলনরত দলগুলোর মধ্যে যারা ছিলেন, তাদের সঙ্গে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে এই ৩১ দফা বাস্তবায়িত করার জন্য।

যুগান্তর: বর্তমান পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীদের প্রতি দলের কোনো নির্দেশনা আছে কি না?

মির্জা ফখরুল: নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলব, বিএনপির সুনাম যেন অক্ষুণ্ন থাকে। বিএনপি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং সব ভালো কাজের সঙ্গে থাকে-এ বিষয়টি যেন নেতাকর্মীরা নিশ্চিত করেন।

সৌজন্যে: দৈনিক যুগান্তর, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪।

 


Comments

Leave a Comment


Related Articles