Post Thumbnail

অস্থিরতা কাটছে না শিক্ষাঙ্গনে


৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এসে শিক্ষা প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল শুরু করে কিন্তু শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা যেন কাটছেই না। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত শৃঙ্খলার অভাব চরম আকার ধারণ করেছে। নিয়মিত আন্দোলন, সড়ক অবরোধ, সচিবালয় ঘেরাও এবং নানা দাবিতে শিক্ষার্থীদের সড়কে নামা যেন এক রোজকার ঘটনা। একদিকে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায়ে সংঘবদ্ধ, অন্যদিকে শিক্ষা প্রশাসন ও মাঠ পর্যায়ের ব্যবস্থাপনায় একের পর এক পরিবর্তন আসছে, যার ফলে শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা বেড়েই চলেছে। সর্বশেষ রাজধানীতে তিন কলেজের (ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ,  শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং কবি নজরুল কলেজ) শিক্ষার্থীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা শিক্ষাঙ্গনে নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এ সমস্ত কলেজগুলো ইতিমধ্যে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোলাটে হয়ে উঠছে।

সরকারের পতনের পর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের আওয়ামী লীগের দোসর অ্যাখ্যায়িত করে তাদের পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সর্বত্রই এই চিত্র দেখা গেছে। কোথাও কোথাও শিক্ষকদের কেউ কেউ শারীরিক ভাবে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এখন তাদের পদমর্যাদার ওপর দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের দাবির বিরুদ্ধে কথা বলতে ভীত, যার ফলে শিক্ষা ব্যবস্থায় আরও বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে। ফলে একদিকে শিক্ষার গুণগত মান প্রশ্নবিদ্ধ, অন্যদিকে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের মাঝে আস্থা হারানোর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময় যেখানে পারস্পরিক ভ্রাতৃবোধ নিয়ে বাস করার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল সেখানে এখন সমাজ যেন রীতিমতো বিভক্ত। তিন কলেজের সংঘর্ষের ঘটনা সেই সাক্ষ্য বহন করে। সামান্য একটি বিষয় নিয়ে রীতিমতো দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল, অটোপাস দাবি, নতুন ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা, তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করা, সাত কলেজকে পৃথক করে একটি বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শিক্ষাঙ্গনকে চরম অস্থির করে তুলেছে।

এদিকে নিজ নিজ দপ্তরে আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা রেষারেষিতে জড়িয়ে পড়ছেন বলে খবর চাউর হয়েছে। জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর বদলি বাণিজ্য, দপ্তরে দপ্তরে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন কিছু কর্মকর্তা। এ কারণে শিক্ষাবোর্ডসহ আরও কয়েকটি দপ্তরে ব্যাপক রদবদল হয়েছে। সামনের সপ্তাহে আরও বড় পরিবর্তনের আভাস দিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

বিশেষজ্ঞ বলছেন, সাম্প্রতিক সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সহিংসতার ঘটনায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়ই মানসিক ট্রমার মধ্যে রয়েছেন। ভীষণ অস্থির একটা সময় কেটেছে সবার। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন বেশি। অসংখ্য শিক্ষার্থী টিয়ার গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও সেসবের কষ্টকর প্রতিক্রিয়া, গোলাগুলি, আক্রান্তদের আর্তনাদ এসব খুব কাছ থেকে দেখেছেন, শুনেছেন, যার প্রভাব এখনও রয়ে গেছে তাদের মনে। এরকম পরিস্থিতির মধ্যেই তারা ক্লাসে ফিরেছে। এখন আবার নতুন করে অস্থিরতা বাড়ছে। যতই দিন যাচ্ছে, শিক্ষাঙ্গনে স্বস্তির পরিবর্তে পরিস্থিতি আরও কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীদের এই ট্রমা আরও দীর্ঘ মেয়াদী হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করছেন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এর চেয়েও বড় প্রশ্ন হলো এই অস্থিরতা কাটবে কবে?


Comments

Leave a Comment


Related Articles