‘জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে স্পষ্ট ঘাটতি দেখা যাচ্ছে’
হোসেন জিল্লুর রহমান বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান। ছিলেন ২০০৭-০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা। এছাড়া তিনি বিশ্বের বৃহত্তম এনজিও ব্র্যাকের চেয়ারপারসন। দায়িত্ব গ্রহণের ১০০ দিন পার করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ সরকারের কার্যক্রম ও সক্ষমতা মূল্যায়ন, তাদের করণীয়, অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিসহ নানা ইস্যুতে তিনি কথা বলেন বণিক বার্তায়। পাঠকদের আগ্রহের বিষয়টি বিবেচনায় এখানে তা হুবহু প্রকাশ করা হলো।
অন্তর্বর্তী সরকার ১০০ দিন পার করেছে। এ সময়কালে সরকারের অগ্রগতি কী এবং অপূর্ণতা কোথায় দেখছেন?
একটি সরকারের কার্যক্রম মূল্যায়নের জন্য একশ দিন এক অর্থে অল্প সময়। কিন্তু অভ্যুত্থান-উত্তর এ সরকারের টোন-সেটিং অবস্থান ও সফলতা জানান দেয়ার জন্য এ প্রারম্ভিক শতদিন আরেক অর্থে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। প্রথমেই বলা দরকার, এ অন্তর্বর্তী সরকারকে নানামুখী প্রতিকূলতা অতিক্রম করতে হয়েছে এবং হচ্ছে। প্রথমত, জনপ্রত্যাশার চাপ। সংগত কারণেই সরকারের কাছে জনগণের বিপুল প্রত্যাশা। কারণ গত ১৫ বছরের দুঃশাসন জনমনে একটা জগদ্দল পাথরের মতো বসে ছিল। সেই স্বৈরাচারী শাসনের পতন হয়েছে। জনমনে ন্যায্যতা, দাবি পূরণ ও অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি নিয়ে বিপুল প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ অবশ্য শুধু প্রত্যাশার চাপে সীমাবদ্ধ নয়। দ্বিতীয়ত, যে শাসক পালিয়ে গেছেন ও তার অনুগত গোষ্ঠীরা যারা কিছুতেই এ পরাজয়কে মেনে নিতে পারছেন না, তারা তাদের পাচার করা অর্থ ও বিভিন্ন ধরনের নেটওয়ার্ক দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে নানামুখী বিশৃঙ্খলা ও অপপ্রচারে লিপ্ত আছেন। এ অপতৎপরতা মোকাবেলা ও সামাল দেয়াও একটি বড় চাপের জায়গা। তৃতীয় চাপটি ভেতরের। অন্তর্বর্তী সরকার কতটুকু দক্ষতার সঙ্গে তার কার্যক্রম সম্পাদন করছে ও রাষ্ট্র প্রক্রিয়ায় তার নিয়ন্ত্রণের ছাপ রাখছে এ-সংক্রান্ত সমাজের বিভিন্ন স্তরের মূল্যায়ন ও আস্থার ঘাটতি তৈরি হচ্ছে কিনা, এটিও একটি চাপ হিসেবে কাজ করছে।
এ ত্রিমুখী চাপ বা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার শতের অধিক দিন পার করেছে। কোথায় তারা এগোতে পারলেন, কোথায় পারেননি তার একটি প্রাথমিক মূল্যায়ন অবশ্যই হতে পারে। ভঙ্গুর ব্যাংক খাতের নিম্নমুখী পতনে শক্তভাবে রাশ টেনে ধরা হয়েছে। সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলোও বিপদ সীমানার বাইরে নিয়ে আসা হয়েছে। দুর্নীতির অতি দৃশ্যমান ক্ষেত্রগুলোও নজরে আনা হয়েছে। যদিও সার্বিকভাবে দুর্নীতি কতটুকু কমেছে তা নিয়ে আস্থার ঘাটতি রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেল ত্বরিত চালু, আইসিটি ট্রাইব্যুনাল কার্যক্রমে গতি আনা ইত্যাদি অর্জনও প্রশংসিত হয়েছে।
এ সরকারের কাছে প্রত্যাশা অনেক। অতিরিক্ত প্রত্যাশার চাপকে কীভাবে দেখছেন?
জনমনে প্রত্যাশা তো অনেক কিন্তু এটাকে দোষ হিসেবে দেখা যাবে না। আমি বলি, প্রত্যাশা অনেক হওয়াই দরকার। অনেক কিছু করার আছে, করার সুযোগও তৈরি হয়েছে। সুতরাং প্রত্যাশার চাপকে দোষ হিসেবে দেখার অবকাশ নেই। প্রত্যাশা পূরণে কার্যকর ও জোরালো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে কিনা এটিই দেখার বিষয়। মোটাদাগে যদি বলি, অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের পদ্ধতিতে একটি বড় অসংগতি দেখছি, তারা ফাইল ও চার দেয়ালে বেশি সক্রিয়। মাঠে তারা যাচ্ছেন না। মাঠের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ তাদের মধ্যে সেই অর্থে নেই, এমনকি তাদের আগ্রহেরও ঘাটতি আছে। তারা জনগণের সঙ্গে সংযোগের বিষয়টি রাষ্ট্রযন্ত্রের মাধ্যমে অর্থাৎ আমলাতান্ত্রিকভাবে করার চেষ্টা করছেন। সম্প্রতি গাইবান্ধা, রংপুর ইত্যাদি জায়গায় মাঠ সফরে গিয়ে যেটি স্পষ্ট হয়েছে, তা হলো মাঠের আলাপ-আলোচনা প্রত্যক্ষভাবে শোনার আগ্রহ অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে চোখে পড়ার মতো অনুপস্থিত। সাম্প্রতিক সময়ে অনেকগুলো বন্যা হয়ে গেল, যা খাদ্যনিরাপত্তা বিষয়ে ঝুঁকি তৈরি করেছে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে দেখা গেল, ২৬ শতাংশ পরিবার অতিমাত্রায় খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাকের সামনে মানুষের সারি ক্রমে লম্বা হচ্ছে। খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়গুলোকে খুব জোরালোভাবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মোকাবেলার চেষ্টা দৃশ্যমান হচ্ছে না।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার হিমশিম খাচ্ছে। কেন এমনটা হচ্ছে বলে মনে করেন?
অন্তর্বর্তী সরকার এসব বিষয়ে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে বটে, তবে তিনটি বিষয়ে জোরালো মনোযোগের ঘাটতি দেখছি। প্রথমত, অলিগার্কদের প্রভাব নিয়ন্ত্রণে আনা। এখানে অলিগার্ক বলতে যারা স্বৈরাচারী সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় প্রবল আর্থিক ক্ষমতাশালী গোষ্ঠী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। এ অলিগার্ক বলয়কে কার্যকর ব্যবস্থাপনায় নিয়ন্ত্রণে আনা জরুরি ছিল। অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে এ প্রসঙ্গটি এসেছে বটে কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপের জন্য কৌশলী চিন্তার ছাপ দেখছি না। খাদ্য আমদানিতে যেসব গোষ্ঠীর বড় ভূমিকা ছিল এখন তারা অনুপস্থিত। তাদের শূন্যস্থানে অন্য ব্যবসায়ীদের (মার্কেট প্লেয়ার) নিয়ে আসা খুবই জরুরি ছিল। আবার অলিগার্কদের বিচারের আওতায় আনার পাশাপাশি তাদের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কীভাবে সচল রাখা যায়, সে বিষয়ে নেয়া পদক্ষেপগুলো আরো সুচিন্তিত ও জোরালো হওয়া দরকার ছিল। দ্বিতীয়ত, মানুষজন যে মূল্যস্ফীতির ধাক্কায় প্রতিদিন ধরাশায়ী হচ্ছে এটিও খুবই উল্লেখযোগ্য বিষয়। সরবরাহ শৃঙ্খলগুলো সচল রাখা যাচ্ছে কিনা। কোথায় ঘাটতি হচ্ছে এবং কীভাবে এসব ঘাটতি পূরণ করা যেতে পারে—এ বিষয়ে জোরালো মনোযোগ দৃশ্যমান নয়। বন্যায় ক্ষতি হয়েছে এটি স্বীকার করা হচ্ছে কিন্তু বন্যা-উত্তর পুনর্বাসন কর্মসূচিতে যে জোরালো পদক্ষেপের দরকার ছিল তার ঘাটতি চোখে পড়ার মতো। তৃতীয়ত, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি যখন আরো বেগবান করার দরকার ছিল, বিশেষ করে বাজার যাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে তাদের জন্য টিসিবির ক্রমবর্ধমান সারিতে দাঁড়ালেও পকেটে কিছু টাকা দরকার।
আর্থিক খাত ব্যবস্থাপনায় অন্তর্বর্তী সরকারের পারফরম্যান্স কীভাবে দেখছেন?
ভয়ানক অস্থিতিশীল অবস্থা থেকে দৃশ্যমান উন্নতি হয়েছে। রিজার্ভ তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল হয়েছে, তবে আমদানি চাহিদা বেড়ে গেলে রিজার্ভকে স্থিতিশীল রাখা চ্যালেঞ্জিং হবে। সামষ্টিক অর্থনীতির আর্থিক খাতের সূচক ঠিক করা একটি দিক। তবে অন্যতম ও সম্ভবত বৃহত্তর দিক হচ্ছে অর্থনীতির চাকাকে ঘোরানো। এখানে কার্যকর পদক্ষেপ কম এবং ফলাফলও দৃশ্যমান নয়। কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ এসব সূচক আশঙ্কাজনক পর্যায়ে থেকে যাচ্ছে। যেটা আমাকে কিছুটা বিস্মিত করেছে এবং করছে—বৃহত্তর ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের যোগাযোগে চোখে পড়ার মতো ঘাটতি। অর্থনীতিতে চাহিদার বড় শূন্যতা আছে। বিনিয়োগের চিত্র করুণ। অনিশ্চয়তার আমেজে অর্থনীতির চাকাও স্থবির হয়ে আছে। আর্থিক খাত ব্যবস্থাপনার এদিকটায় নজর দেয়া খুবই জরুরি। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পূর্বাভাসও একই বাস্তবতার জানান দিচ্ছে।
আপনি অর্থনীতির চাকা না ঘোরার ব্যাপারটা বলছেন। এ স্থবিরতা কেন?
চাকা একেবারে ঘুরছে না তা নয়। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ কোনো অবস্থাই বসে থাকতে চায় না। কিন্তু নিছক টিকে থাকার পর্যায় থেকে আরো অধিক ও উন্নত মানের প্রবৃদ্ধির জায়গায় যেতে হলে বিনিয়োগ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। অনেকের কাছে হয়তো পয়সা আছে কিন্তু বিনিয়োগে সাহস পাচ্ছে না। ব্যবসায় আস্থার জায়গা তৈরির কাজটা কিন্তু শুধু মনিটারি পলিসি ইত্যাদি দিয়ে হবে না। এখানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করার জোরালো বার্তা দিতে হবে, মাঝারি পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থার জায়গা তৈরি করতে হবে। এ ধরনের পদক্ষেপ বড় একটা দেখতে পাচ্ছি না অন্তর্বর্তী সরকারের একশ দিন পেরিয়ে গেলেও।
স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জনগণের মধ্যে যে ঐক্য ছিল তাতে কি ফাটল ধরেছে?
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা যখন দেশ থেকে জনরোষের মুখে ভারতে পালালেন, তখন সবার মধ্যে ঐক্য যেমন ছিল, তেমনি সাম্য, বৈষম্য নিরসন ও মর্যাদার আকাঙ্ক্ষা আকাশচুম্বী ছিল। আবালবৃদ্ধবণিতা সবাই দেশ ও রাষ্ট্রকে পুনর্গঠন ও পরিবর্তনের আওয়াজে শামিল ছিল। ১০০ দিন অতিক্রম করলেও আকাঙ্ক্ষা আছে ঠিকই, কিন্তু ঐক্যের সুর স্পষ্টতই ফিকে হয়ে এসেছে। এটি কিছুটা ঐক্যের ভাঙন, আবার কিছুটা আস্থার ধস। এক অর্থে, এটির দায় অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর বর্তায়। অন্তর্বর্তী সরকার তাদের দায়িত্বকে যেভাবে বুঝেছে, তারই প্রতিফলন হয়তো এ পরিবর্তনে। দাপ্তরিক কাজ ও সংস্কার প্রস্তাব টিম গঠনের বাইরে উদ্যোগী মানসিকতায় ঐক্যের জায়গাগুলোকে সংহত করার যে রাজনৈতিক কাজ ছিল, স্পষ্টতই অন্তর্বর্তী সরকার সেটিকে তার মনোযোগের বিষয় হিসেবে নেয়নি। মানুষের আশা যে হারিয়ে গেছে তা নয়, কিন্তু ১০০ দিন পেরিয়ে গেলেও বিভেদগুলোর সুরই বেশি বাড়ছে। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে স্পষ্ট ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।
উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও বাজারে অস্থিতিশীলতার মধ্যে সামাজিক সুরক্ষায় সরকারের পদক্ষেপ যথেষ্ট বলে মনে করেন? খাদ্যনিরাপত্তা হুমকিতে আছে কি?
খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে কয়েক দিন আগে জাতিসংঘের রিপোর্ট বেরিয়েছে তাতে বলা আছে, বাংলাদেশের এ মুহূর্তে ২৬ শতাংশ মানুষ অতি উচ্চমাত্রায় খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় আছে। তার মানে, এটা একটা বড় ধরনের সমস্যা। এটাকে কীভাবে মেটানো যেতে পারে? এখানে তিনটি পথ আছে। একটি হচ্ছে, মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল রাখার জন্য সরবরাহ শৃঙ্খলগুলো আরো জোরদার করা। নোয়াখালী ও গাইবান্ধাসহ বন্যাকবলিত অঞ্চল যেখানে সবজি উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে এগুলোকে সরকারিভাবে জোরালোভাবে সচল করা যাচ্ছে কিনা। যাতে সরবরাহ শৃঙ্খলগুলো ঠিকমতো পরিচালিত হয়। আমদানিনির্ভর সরবরাহ শৃঙ্খলগুলো আমরা সচল রাখার কথা ভাবতে পারি। অলিগার্কদের বিরুদ্ধে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি,
এতে যদি সরবরাহ শৃঙ্খলগুলো অচল হয়ে যায়, সেটা সচল করতে তো অন্যদের সচল করতে হবে। কীভাবে করব সেটা দেখার বিষয় আছে। তবে মানুষের পকেটে আয়টা আসাও জরুরি। কর্মসংস্থানের জায়গাটা দেখেন—ওই যে চাহিদা কমে যাওয়ায় কর্মসংস্থানের জায়গায়গুলো কিন্তু সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। সেগুলো এক ধরনের সমস্যার মধ্যে পড়েছে। এখানে জোরালোভাবে কী পদক্ষেপ নেয়া যায়। আমলাতান্ত্রিক প্রকল্প হাতে নিলাম, পাঁচ মাস পর আসবে দাতা সংস্থা, অনুদান পাওয়া যাবে তারপর করব এমন নয়। এখানে যে জোরালো একটা উদ্যোগ দরকার সেটাও এখানে নিশ্চিত করা আবশ্যক। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিও নজরে রাখতে হবে। এগুলোতেও উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। এখানে পতিত সরকারের একটা অন্যতম দুর্নীতির চেহারা ছিল। কিছু বিধবা, বয়স্ক, প্রাথমিক বা মাধ্যমিক পর্যায়ে বৃত্তি বা ভাতা দেয়া হতো। এগুলো কিছু আবার দেয়া হয় ব্যাংক বা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল ব্যবস্থার মাধ্যমে। শেখ হাসিনা সরকারের অন্যতম একটা দুর্নীতির জায়গা ছিল নগদ বলে পরিচিত একটা এমএফএস প্রতিষ্ঠান। সব সামাজিক নিরাপত্তাবিষয়ক অর্থ নগদ অ্যাপের মাধ্যমে ট্রান্সফার করতে সার্বিকভাবে রাষ্ট্রকে বাধ্য করা হয়েছিল। কতখানি দিয়েছে বা কতখানি রেখেছে তা পিপিআরসি থেকে আমরা গবেষণা করেছি। সেখানে দেখেছি, যারা অর্থ পাওয়ার কথা তারা পাচ্ছে না। শীতকাল শুরু হতে যাচ্ছে। সরকারের একটা প্রোগ্রাম আছে; ইজিপিপি নামে। চরম দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থানের এ ব্যবস্থার কলেবর বাড়িয়ে জোরালোভাবে মাঠে নামানো উচিত। মানুষের পকেটে কিছু পয়সা যাওয়া দরকার, না হলে তারা তো ভালো থাকবে না। ভাতাকেন্দ্রিক উদ্যোগ দরকার ঠিক আছে, তবে কর্মসংস্থান থেকে আয়টা আরো বেশি দরকার।
তরুণদের নেতৃত্বে আমরা একটা অভ্যুত্থান দেখতে পেলাম। তাদের মানবসম্পদে রূপান্তর করতে শিক্ষা ব্যবস্থাকে কীভাবে সাজানো উচিত?
শিক্ষার বাস্তবতাটা কী সেটা নিয়ে এখনো সমাজে কোনো বড় ধরনের সংলাপ হয়নি। শিক্ষা নিয়ে বড় ধরনের একটা সংলাপ দরকার। শিক্ষাঙ্গনে তিনটি স্তর—প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা রয়েছে। মাধ্যমিক স্তরকে আমি খুব গুরুত্ব দিতে চাই। কারণ এখানেই মানবসম্পদ তৈরি হচ্ছে কিনা সেটা নির্ধারণ হয় এবং এখান থেকে শ্রমবাজারে ঢোকে। এ জগৎটাকে পূর্ণাঙ্গভাবে দেখে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে সেই হিসেবে বড় ধরনের কোনো পরিকল্পনা এখনো দেখিনি। এখনো কিছু নিয়োগ, পদচ্যুতি ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত আছেন তারা। শিক্ষাকে যদি সত্যিকার অর্থে সংস্কার করতে হয় তবে সেটা প্রাথমিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত করতে হবে। শিক্ষাঙ্গনে আমাদের একটা স্বস্তির জায়গা তৈরি করা দরকার, বিভেদের জায়গা নয়। সুনির্দিষ্ট যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তাদের প্রতি কোনো দয়ামায়া নেই, সেটা যেকোনো পর্যায়ে হোক। তাদের চিহ্নিত করে দৃশ্যমান বিচার প্রক্রিয়ার আওতায় আনা দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ বা স্কুলের ভবন নির্মাণের দিকে যত নজর, মানসম্মত শিক্ষার দিকে অত নজর নেই। শুধু শিক্ষাঙ্গন নয় স্বাস্থ্য খাতেরও একই সমস্যা; নতুন ভবন নির্মাণ। নতুন ভবন নির্মাণ হলে বাজেট হবে, নতুন বাজেট থেকে শেয়ার পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। এই যে শিক্ষাঙ্গনে সার্বিকভাবে নতুন নির্মাণের প্রতি একটা আসক্তি তৈরি হয়েছে—এগুলো হচ্ছে গভীরতম সমস্যা।
আমাদের অবকাঠামো দরকার কিন্তু অবকাঠামোয় অযৌক্তিক আসক্তি অপ্রয়োজনীয়। শেখ হাসিনা সরকারের অবকাঠামোয় এক ধরনের অযৌক্তিক আসক্তি দেখা গেছে। এই যে কর্ণফুলী টানেল এত টাকা দিয়ে বানানো হলো তা দিয়ে কয়টা গাড়ি চলছে। পদ্মা সেতুতে রেল লাইন করা হয়েছে—কতটি ট্রেন যায়? অভিযোগ আছে, রেলমন্ত্রীর বাড়ি যাওয়ার জন্য রেললাইন বসানো হয়েছিল। অবকাঠামোয় আসক্তি আমাদের অর্থনীতির ক্ষয়ের কারণ হয়েছে। দেখা গেছে, শিক্ষকের চেয়ে শিক্ষা প্রশাসকের জায়গাটা অনেক ওপরে। শিক্ষক হচ্ছেন অধস্তন কর্মচারী, শিক্ষা প্রশাসক হচ্ছেন ছড়ি ঘুরানো হর্তাকর্তা। শিক্ষককে আমরা মর্যাদার আসন থেকে ফেলে দিয়েছি এবং অনেক শিক্ষক তাদের নিজেদের কর্মকাণ্ডের ফলে নিজেদের এ অবস্থায় নিয়ে গেছে। শিক্ষকদের জন্য মর্যাদার আসন তৈরি করতে হবে। প্রশাসক ও আমলাতান্ত্রিক সংস্কৃতির আবহ থেকে শিক্ষাকে উদ্ধার করতে হবে। সে উদ্ধারকার্যে আমি তেমন কোনো উদ্যোগ আসলেই দেখছি না।
নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা বলা হচ্ছে। পুরনো রাজনীতি ছিল অলিগার্ক তোষণমূলক। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত কেমন হওয়া উচিত বলে মনে করেন?
সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক বন্দোবস্ত শব্দযুগল বেশ চাউর হয়েছে। সাদামাটা অর্থে রাজনৈতিক শক্তি, ব্যবসায়িক শক্তি, সামাজিক শক্তি ও রাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি—এ বলয়গুলোর মধ্যে একটি কার্যকর বোঝাপড়ায় উন্নীত হওয়াই নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ইঙ্গিত করে। অবশ্যই এ বোঝাপড়া হতে হবে ইনসাফ, কার্যকর রাষ্ট্র পরিচালনা ও টেকসই রাজনৈতিক অংশগ্রহণের কাঠামোর নিশ্চয়তা বহনকারী। কেতাবি শব্দগুলোর দিকে না গিয়ে আমি যদি মূল বিষয়টার কথা বলি, তবে বলা যায় যে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া, রাজনৈতিক কাঠামো ও রাজনীতির সঙ্গে সমাজের আন্তঃসম্পর্ক—এ তিন বিষয় নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত নির্দেশ করে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব তৈরির পথরেখাগুলো কোন চ্যানেলের মধ্য দিয়ে হবে বা রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিকাশ কীভাবে ঘটবে—এ বিষয়গুলোও আলোচনায় আসতে হবে। তবে এখনো আমি এদিকে জোরালো অগ্রগতি দেখছি না।
রাজনৈতিক সমঝোতা ও বন্দোবস্তের বিষয়টি কীভাবে অর্জন হবে?
রাজনৈতিক সমঝোতা ও বন্দোবস্তের কিছু বিষয় আছে যা দীর্ঘমেয়াদি ও সময়সাপেক্ষ। এগুলো রাতারাতি পরিবর্তনের মতো কোনো বিষয় নয়। তবে এসবের চেয়ে বড় কথা হলো, রাজনীতি নিয়ে সমাজ কী ধরনের সমস্যা চিহ্নিত করেছে? এগুলো সমাধানের সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ তৈরি হচ্ছে কিনা? সমাজ কর্তৃক চিহ্নিত একটি সমস্যা হলো ফ্যাসিজম। এর মানে সমাজের ওপর স্বৈরাচারী কায়দায় শাসন চাপিয়ে দেয়া। এটা কীভাবে বাদ দেয়া যায়? শুধু স্বৈরাচারী কাঠামো নয়, স্বৈরাচারী প্রক্রিয়া ও স্বৈরাচারী প্রবণতাও। এখানে অন্যতম বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে জবাবদিহিতার জায়গাগুলো নিশ্চিত ও সক্রিয় করা। ক্ষমতার ভারসাম্য এখানে একটি অন্যতম বিষয়। এটি কেতাবিভাবে সমাধানের বিষয় নয়। এ মুহূর্তের লক্ষ্য হচ্ছে, ক্ষমতার ভারসাম্যটা যেন অতি ক্ষমতায়িত কেন্দ্র না হয়। যেটা ফ্যাসিজমের আবার জন্ম দেবে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য আনা প্রয়োজন। সংসদ সদস্যদের নব্য জমিদারগিরিরও অবসান হওয়া জরুরি। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ জবাবদিহিতা ও প্রতিনিধিত্বের বিষয়কে আরো জোরদার করবে। স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করলে স্থানীয় জবাবদিহিতা জোরদার হবে। রাজনৈতিক বন্দোবস্তই একমাত্র বিষয় নয়। আরেকটি বিষয় হলো রাজনৈতিক নেতৃত্বগুলো কীভাবে তৈরি হচ্ছে? আমাদের শিক্ষাঙ্গনে তরুণদের থেকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব কীভাবে তৈরি হচ্ছে? তারা কী ধরনের ভিশন নিয়ে চিন্তা করছে? বড় ধরনের মনঃসংযোগগুলো তাদের কীভাবে তৈরি হচ্ছে এগুলোও ভাবার বিষয়। এ নেতৃত্ব তৈরির ক্ষেত্রে তরুণ পর্যায়ে নানা পদক্ষেপ আছে এবং রাজনৈতিক দলের মধ্যে থেকেও পদক্ষেপ থাকা দরকার। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তৃণমূল নেতৃত্বকে মূল্যায়ন ও লালন করার মানসিকতাও জরুরি।
রাজনীতি নিয়ে মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে রাজনীতিতে সুবাতাস বইবে কি?
রাজনীতি নিয়ে সমাজে অত্যন্ত নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে অনেক আগে থেকেই। রাজনীতি দুর্নীতি ও অনৈতিক ব্যবসার অন্যতম বাহন হিসেবে দাঁড়িয়েছিল। যে স্বৈরাচারী সরকারের পতন হলো তাদের সার্বিক মডেলটি ছিল লুটপাটের। কাজ না করে, অনৈতিকভাবে বা দুর্নীতি করে ধনী হওয়ার মাধ্যম ছিল রাজনীতি। সমাজে বিদ্যমান রাজনীতির এ ঘৃণ্য চর্চা থেকে কীভাবে মুক্ত হওয়া যায় এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখানে অবশ্যই কিছু রাষ্ট্রীয় সংস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে। দুর্নীতি দমন কমিশন, তথ্য কমিশনসহ যেসব কমিশন রয়েছে সেগুলো কার্যকর হতে হবে। বিগত সময়ে দেখেছি যে কমিশনগুলো সম্পূর্ণ কাগুজে বাঘ হয়ে ছিল। কমিশন করলেই হবে না, কমিশনগুলোর কর্মপ্রণালিও ওইভাবে বাস্তবসম্পন্ন করতে হবে। রাজনীতির সঙ্গে দুর্নীতির যে একটা গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে এবং যেটা নিয়ে জনমনে এখনো আশঙ্কা রয়েছে সেটাকে কীভাবে ভাঙা যায় তা রাজনীতিবিদসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে আলোচনা করাটা জরুরি। এ জায়গায় রাজনীতি কীভাবে হবে সেটা আমাদের দেখার বিষয়। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, রাজনীতি তথা রাষ্ট্র ও সমাজের সঙ্গে রাজনৈতিক আন্তঃসম্পর্ক। কারণ বাংলাদেশের ৫৩ বছরের ইতিহাসের অন্যতম একটি বার্তা থাকে, সেটা হচ্ছে সমাজের প্রতিটি অঙ্গে—নাগরিক সমাজ, নারী, কৃষক তরুণ প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, শ্রমিক, নারী উদ্যোক্তা প্রত্যেকেই কিন্তু সক্রিয়। তাদের নিজস্ব সক্রিয়তার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তারা এ ব্যাপারে সহায়তা করেছে এবং আগামীতে করবে। এই যে নাগরিক সক্রিয়তার পথগুলো অযৌক্তিক আমলাতান্ত্রিক কাঠামো, অর্থাৎ খবরদারি অথবা নিপীড়নমূলক কোনো আইন তৈরির মাধ্যমে তা রুদ্ধ করে দেয়া হয়েছিল।
আমলাতন্ত্র ও প্রশাসনিক সংস্কারও মানুষের একটা বড় দাবি। এ বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
বাংলাদেশে আমলাতন্ত্র একটি খবরদারির প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়িয়েছে। নাগরিকের সমস্যা সমাধানের চেয়ে ভোগান্তির কারণও এ আমলাতন্ত্র। খুবই সাধারণ কোনো কাজ থেকে এর নিদর্শন পাওয়া যায়। কেউ যদি একটা বেসামরিক সিভিল প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করতে যান, তাহলে তাকে কী পরিমাণ ভোগান্তিতে পড়তে হয় তা সহজেই অনুমেয়। পতিত সরকারের শেষের দিকে এমন এক অবস্থা হয়ে গিয়েছিল যে একটি ছোট্ট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নিবন্ধনেও গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে তদারকি করা হতো। অথচ জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলে এগুলো মিনিট পাঁচেকের কাজ। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, নতুন ব্যবসার নিবন্ধন একেবারে কমে গিয়েছিল। গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের যাচাই-বাছাইয়ের বিষয়গুলোও ওইসব সংস্থার ওপর অযৌক্তিক একটি চাপ তৈরি করেছিল। কারণ তাদের মূল কাজ হওয়া উচিত ছিল রাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক বিপদাপদ থেকে সুরক্ষা।
নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন আলাপ উঠছে। সুষ্ঠু নির্বাচনও তো এ সরকারের কাছে খুবই কাঙ্ক্ষিত বিষয়। আপনি কী মনে করেন?
নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মতো দেশে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার অন্যতম একটা মাধ্যম হচ্ছে নির্বাচন। সুষ্ঠু নির্বাচন শুধু বললেই হবে না। আমরা কতগুলো তিক্ত অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জেনেছি নির্বাচন কেমন হতে পারে। নির্বাচন কীভাবে আমাদের ক্ষমতাহীন করে ফেলতে পারে। সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা খুব জরুরি। এর মাধ্যমে জবাবদিহিতার মতো একটা কাজ হতে পারে। সুতরাং নির্বাচনের দিকে এগোনোর জন্য একটা রোডম্যাপ দরকার। এখানে যদি রাজনৈতিক রোডম্যাপ শব্দটি ব্যবহার করি তাহলে রাজনৈতিক রোডম্যাপের মধ্যে নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ থাকা দরকার। রাজনীতিতে দুর্নীতির সম্পর্কটা কীভাবে ভেঙে দেয়া যায় সেটার একটা কৌশল বা রোডম্যাপ দরকার। রাষ্ট্র তথা রাজনীতি ও সমাজের আন্তঃসম্পর্কের মধ্যে যে আমলাতান্ত্রিক বা নিপীড়নমূলক খবরদারি বিদ্যমান রয়েছে সেগুলো সরিয়ে দেয়ার একটা রোডম্যাপ দরকার। একই সঙ্গে নির্বাচনী রোডম্যাপ, রাজনীতি ও দুর্নীতির মধ্যে
ছেদকারী রোডমাপ দরকার। নাগরিক সমাজ যেন আমলাতান্ত্রিক নিপীড়নমূলক বা খবরদারি থেকে মুক্ত হয়ে তার নিজস্ব সক্রিয়তার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে পারে সেই সুযোগ তৈরি করা দরকার। সামগ্রিক অর্থে আমি মনে করি, এটা হচ্ছে রাজনৈতিক রোডম্যাপ যেটা এভাবে আলোচনায় আনা দরকার।
সরকার বিভিন্ন সংস্কার কমিশন করল—এ ব্যাপারে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
অন্তর্বর্তী সরকার বেশকিছু সংস্কার কমিশন গঠন করে এ নিয়ে কিছু কাজ করেছে। কিন্তু এই যে কিছু ন্যারেটিভ বা আলোচনার জায়গা তৈরি হলো তা খোলাসা করাও এখন খুব জোরালোভাবে জরুরি। জবাবদিহি নিশ্চিতের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দরকার। কিন্তু নির্বাচন বলতে শুধু যে জাতীয় নির্বাচন নয়—এটা মাথায় রাখতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনগুলো, বিশেষ করে প্রতীকনির্ভর স্থানীয় সরকার নির্বাচন ব্যবস্থার দিকে নজর রাখতে হবে। ২০১৪ সালে শেখ হাসিনা স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করে অত্যন্ত গর্হিত কাজ করেছেন। এ নির্বাচন নিয়ে জনসাধারণের একটা উৎসবের জায়গা ছিল, সেটা সম্পূর্ণ কলুষিত করে দিয়েছেন। সেটা থেকে মুক্ত হওয়া দরকার। দুর্নীতি কমানোর জন্য আলোচ্য প্রতিষ্ঠানগুলো দরকার। একই সঙ্গে কিন্তু স্বাধীন নির্ভীক নাগরিক কণ্ঠস্বরটাও খুব জরুরি। কিন্তু সেটি এখন সেভাবে নেই। সেই কণ্ঠস্বরটি অনুপস্থিত দেখছি।
Comments
Leave a Comment