আওয়ামী লীগকে নিয়ে টালমাটাল রাজনীতি
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ইতিমধ্যে ১০০ দিন পেরিয়ে গেছে। এই সময়ে মধ্যে অনেকগুলো বিষয় নিয়ে রাজনীতির মাঠ সরগরম। আগামী নির্বাচন কবে হবে, রাষ্ট্র সংস্কার কোন পথে এগোবে কিংবা জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যত্থানে যারা শহীদ হয়েছে তাদের সঠিক তালিকা কবে নাগাদ তৈরি হবে, আহতদের চিকিৎসার কি ব্যবস্থা হবে ইত্যাদি নানা প্রশ্নে রাজনীতির মাঠ এখন রীতিমতো উত্তপ্ত। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে ক্রমশ্য প্রধান বিষয় দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগের থাকা না থাকা। আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে, নাকি পারবে না?- এটি যেন এখন রাজনীতিতে ক্রমশঃ মুখ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এ নিয়ে টালমাটাল এখন বাংলাদেশের রাজনীতি। এ প্রশ্নে বিভক্ত রাজনৈতিক শিবির।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘দ্য হিন্দু’ সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যেহেতু বিএনপি আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে চায়, বিএনপি একটি বড় দল হিসাবে এই দাবি করেছে। এক্ষেত্রে তাদের (সরকারের) দিক থেকে কোন আপত্তি নেই। তার এই বক্তব্য বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হবার পরপরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অত্যন্ত দুইজন সমন্বয়ক এর তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। হাসনাত আবদুল্লাহ এবং সারজিস আলম দুইজনই তাদের ফেসবুকে গণহত্যার বিচার সম্পন্ন হওয়ার আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতির কোন সুযোগ নেই বলে উল্লেখ করেছেন। তারা বলেছেন, দরকার হলে তারা দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দেবেন। আজ উপদেষ্টামণ্ডলীর বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী নীতিগত ভাবে অনুমোদিত হয়েছে। এই সংশোধনীতে গণত্যার সাথে জড়িত রাজনৈতিক দলের বিচারের বিষয়টি সন্নিবেশিত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বিচারের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে পারবে। তবে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হবে কি হবে না?- তা এখনও অস্পষ্ট, অমীমাংসিত বিতর্ক।
৫ আগস্টের অভ্যত্থানের পর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দিল্লীতে চলে গেছেন। আওয়ামী লীগের অধিকাংশ শীর্ষ নেতাই এখন পালাতক। তাঁরা বিদেশে অবস্থান করছেন। একটি নেতৃত্ব শূন্য, হতশ্রী অবস্থায় সুপারিশ আওয়ামী লীগ। আর এই রকম এক পরিস্থিতির মধ্যে আওয়ামী লীগের কিছু কিছু কর্মী বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে বিক্ষোভ, সমাবেশ, প্রতিবাদ করছেন। ইতিমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে সন্ত্রাস দমন আইনে ছাত্রলীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগকে যেখানেই পাওয়া যাবে তাদেরকে গ্রেফতার করা হবে- এমন ঘোষণাও বিভিন্ন মহল থেকে দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও ছাত্রলীগ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট আকারে ঝটিকা মিছিল হলেও করছে। তাদের প্রতিবাদের কণ্ঠ ক্ষীণ হলেও প্রতিবাদ হচ্ছে। আওয়ামী লীগও নিজেদেরকে নানা ভাবে সংগঠিত করার চেষ্টা করছে। বিদেশ থেকে নেতারা কর্মীদের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ তৈরি করেছেন। কর্মীদের মধ্যে নেটওয়ার্ক স্থাপিত হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন। এ সমস্ত কথাগুলোকে তিনি রেকর্ড করে বাজারে ছেড়ে দেয়ারও নিদের্শনা দিচ্ছেন। তার এই সমস্ত বক্তব্য রাজনীতিতে নতুন উত্তাপ সৃষ্টি করেছে। এখন আওয়ামী লীগকে ঘিরে রাজনীতির মাঠে তিনটি প্রশ্ন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে সামনে এসেছে। প্রথম প্রশ্ন, আওয়ামী লীগ কি রাজনীতি করতে পাবে নাকি নিষিদ্ধ হবে? আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ প্রথম নেয়া হয়েছিল ৫ আগস্টের পরপরই। সেই সময় হাইকোর্টে একটি রীট আবেদন করা হয়েছিল। সেই সময় অ্যাটর্নি জেনারেল জানিয়ে ছিলেন যে, সরকার কোন রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার পক্ষে নয়। ফলে রীটটি ফেরত পাঠানো হয়। তারপরও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং আরো কিছু আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি উঠে। কিন্তু এই সময় বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয় যে, তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির নিষিদ্ধ করার পক্ষে নয়। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, কোন রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার দাবিকেই বিএনপি সমর্থন করে না বলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং মহাসচিব সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন যে, একটি রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হবে কি না, সেটি নির্ধারণ করবে জনগণ। ভোটের মাধ্যমেই রাজনৈতিক দলের পরিণতি চূড়ান্ত হবে। এটি বিএনপির একটি সুস্পষ্ট অবস্থান। এর ফলে রাজনীতিতে একটি ভিন্ন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বিএনপি আওয়ামী লীগকে সাথে নিয়ে নির্বাচন করতে চায়- এই বার্তাটি রাজনীতিতে এক অস্বস্তি সৃষ্টি করে। বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এই অবস্থানটিকে ইতিবাচক ভাবে নেয়নি। প্রতিদিনই কোন না কোন সমন্বয়ক এর প্রতিবাদ করছেন নানা ভাবে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে বিএনপির এই অবস্থানের নানা রকম সমালোচনা করা হলেও বিএনপি তার অবস্থানে অটল রয়েছে। জামায়াতের আমীরও সম্প্রতি লন্ডনে বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পক্ষে না জামায়াত।’ জাতীয় পার্টির রাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিষয়টি নিয়েও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হোঁচট খায়। বিএনপি জাতীয় পার্টির রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী এবং জাতীয় পার্টির অফিস ভাংচুর করারও বিরোধিতা করে। রাজনীতিতে এই মুহূর্তে প্রধান শক্তি বিএনপির ভিন্ন অবস্থান আওয়ামী লীগের জন্য একটা নতুন পটভূমি তৈরি করেছে। এর ফলে ঐক্যমতের ভিত্তিতেই আওয়ামী লীগকে এই মূহুর্তে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
আওয়ামী লীগকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখার দ্বিতীয় উপায় হলো আদালতের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা। সেটির জন্য প্রথমে একটি রীট পিটিশন এবং পরবর্তীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহরা একটি রীট পিটিশন করেছিলেন। কিন্তু পরের দিন তারা রীট আবেদনটি প্রত্যাহার করে নেন। অর্থাৎ রীট আবেদনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা বিষয়টি এখন আর থাকছে না। ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার দায়িত্ব গ্রহণের শুরুতে যেমন বলেছেন যে, ফ্যাসিবাদের বাংলাদেশে কোন রাজনীতি করার অধিকার নেই। সেই অবস্থান থেকেও তিনি এখন সরে এসেছেন। এর ব্যাখ্যাও তিনি দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, যেহেতু রাজনৈতিক দলগুলো চাইছে আওয়ামী লীগ নির্বাচন করুক, সেহেতু তাদের কোন বক্তব্য নেই। তবে এখনো আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি পরিষ্কার নয়। কারণ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যে সংশোধনী প্রস্তাবটি গৃহীত হলো এর ফলে আওয়ামী লীগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে নিষিদ্ধ হতে পারে। কিন্তু রাজনৈতিক ঐক্যমত ছাড়া তা কি সম্ভব?
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকেও আওয়ামী লীগকে রাজনীতির মাঠে রাখার দাবি উঠেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে মুখ্পাত্র ম্যাথু মিলার বলেছেন, তারা বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির অধিকার নিশ্চিত করতে চায়। অন্যদিকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এসে আওয়ামী লীগসহ সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন আগামী নির্বাচনে। সবকিছু মিলিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের থাকার বিষয়টি ক্রমশঃ পালে হাওয়া পাচ্ছে।
তৃতীয় যে প্রশ্নটি এসেছে, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করতে পারবে কি পারবে না? বিএনপি এখন দ্রুত নির্বাচনের দাবি উত্থাপন করছে। বিএনপির পক্ষ থেকে আগামী মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনের কথা বেশ জোরেশোরে বলা হচ্ছে। বিএনপির মধ্যে নির্বাচন নিয়ে এক অস্বস্তি এখন প্রকাশ্য রূপ লাভ করছে। বিএনপি মনে করছে, নির্বাচনের সময় যত পেছানো হবে, তত ফ্যাসিবাদের উত্থান হবে। বিএনপির অবস্থান খুব স্পষ্ট। বিএনপি দ্রুত নির্বাচন করে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে চায়। বিএনপির নেতারা মনে করেছেন, নির্বাচনের সময় যত পেছাবে, তত আওয়ামী লীগসহ তাদের ভাষায় ‘ফ্যাসিবাদী’ রাজনৈতিক শক্তি গুলো সংঘবদ্ধ হওয়ার সুযোগ পাবে। তারা নির্বাচনের মাঠে আসবে। আর এই কারণেই বিএনপি এখন নির্বাচনের দিকেই বেশি মনোযোগী। সেই নির্বাচনে তারা অপ্রস্তুত আওয়ামী লীগের মুখোমুখি হতে চায়। নির্বাচনের সময় যত পেছাবে, ততই আওয়ামী লীগ সংগঠিত হতে পারে বলে বিএনপির ধারণা।
বিএনপির অন্য একটি আশঙ্কাও রয়েছে। ইতিমধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি রাজনৈতিক উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যেটির মাধ্যমে সারা দেশের রাজনীতিতে একটি পদচিহ্ন রাখার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন সমন্বয়কের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে যে, যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। গণ-বিপ্লবের আকাঙ্খা রাজনীতির মাঠে বাস্তবায়িত হওয়া প্রয়োজন। তাদের সাথে বিএনপিরও এক ধরনের দূরত্ব ক্রমশ্য দৃশ্যমান হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পেছনে একটি ভিন্ন উদ্দেশ্য আছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ ধারণা করেন। তারা মনে করেন যে, সামনের দিনগুলোতে ছাত্রদের পক্ষ থেকে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের সৃষ্টি হবে। এই নতুন রাজনৈতিক দলটি রাজনীতির মাঠে বিএনপির জন্য চ্যালেঞ্জ হবে। বিএনপি এই শক্তিকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত নয়। বরং তারা আওয়ামী লীগকে অপ্রস্তুত রেখে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচন করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে।বিএনপির কোন কোন নেতার ধারণা এই ধরনের রাজনৈতিক শক্তির উত্থান হলে সেটা আরেকটা ‘কিংস পার্টি’ হবে, যেখানে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় নির্বাচনে ছাত্রদেরকে সামনে আনা হবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমাদের একটি তৃতীয় শক্তির আকাঙ্খা প্রকাশ্য বিষয়। এখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং অন্যান্য ক্রিয়াশীল ছাত্রদের দিয়ে সেই আকাঙ্খা বাস্তবায়নের চেষ্টা হতে পারে বলে কারো কারো ধারণা। আর এই কারণেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সোচ্চার অবস্থান ব্যক্ত করা হচ্ছে। তারা গণহত্যার ইস্যুকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি করেছে। কেউ কেউ মনে করেছেন, এর পেছনে সুশীল সমাজ এবং দক্ষিণপন্থিদের একটি মদদ রয়েছে। যারা বিএনপির একচ্ছত্র রাজনৈতিক আধিপত্যকে রুখে দিতে চায়। কাজেই এই জটিল রাজনৈতিক সমীকরণে আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচন করতে পারবে কি পারবে না সেটা নির্ভর করছে সম্পূর্ণ ভাবে রাজনীতির মাঠে কৌশল এবং শক্তির খেলা কে জয়ী হয় তার উপর।
চতুর্থত, আওয়ামী লীগের ভবিষৎ কি? বাইরে বিএনপি, সরকার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কি ভাবলো, না ভাবলো সেটি পরের বিষয়। আওয়ামী লীগ আসলে নিজেরা কিভাবে সংগঠিত হবে এবং আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে ফিরে আসার জন্য নিজেরা কতটুকু প্রস্তুত সেটি আসলে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন? ৫ আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগ তার ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ সময় অতিবাহিত করছে। আওয়ামী লীগ সংগঠন বলে কোন কিছু এখন নেই। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ যদি বাইরের শক্তি বা বিএনপির অভিপ্রায় কিংবা বাংলাদেশের রাজনীতির বিভক্তির উপর নির্ভর করে ফিরে আসতে চায় সেটি আওয়ামী লীগের জন্য আরেক ভুল। আওয়ামী লীগকে ফিরে আসতে হবে তার নিজেস্ব শক্তিতে। বাংলাদেশের যেকোন বাস্তবতায় আওয়ামী লীগের সমর্থকের সংখ্যা ২৫-৩০ শতাংশ। এই সমর্থকদেরকে আওয়ামী লীগ কিভাবে সংগঠিত করতে পারে? মামলা-হামলা, জেল-জুলুম উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগ আবার রাজপথে নিজেদেরকে সংগঠিত করতে পারবে কি না, আওয়ামী লীগের ভেতর যে সমস্ত দুর্নীতিবাজ নেতৃত্ব রয়েছে, তাদের দল থেকে অপসারণ করে স্বচ্ছ ইমেজের নেতাদেরকে সামনে এনে দলকে একটা নতুন আশার আলো দেখানো যাবে কিনা, তার উপর নির্ভর করছে আসলে আওয়ামী লীগরে ভবিষ্যৎ। যে কোন রাজনৈতিক দল যখন চাপে পরেছে তখন কেউ তাকে টেনে তোলেনি। বরং রাজনৈতিক দল নিজেস্ব সাংগঠনিক শক্তিতে উঠে দাঁড়িয়েছে। আপন প্রাণ শক্তিতেই রাজনৈতিক দলকে মহিমান্বিত হতে হবে। আর আওয়ামী লীগকে যদি রাজনীতি করতে হয়, আওয়ামী লীগকে যদি ঘুরে দাঁড়াতে হয়, তাহলে সেটি করতে হবে তার নিজেস্ব শক্তিতেই নিজেকে সংগঠিত করে। সেই পথ অনেক কঠিন পথ। আওয়ামী লীগ কি সেটি পারবে?
Comments
Leave a Comment