এক প্রবাসীর বাংলাদেশ ভ্রমনের অভিজ্ঞতা
অধ্যাপক ডা. কাজী মনিরুল ইসলাম থাইল্যান্ডে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক পরিচালক ও একজন প্রবাসী বাঙালী চিকিৎসক। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন তিনি। বাংলাদেশ ঘুরে তিনি নিজের অভিজ্ঞতা জানালেন এভাবে-‘প্রতিবছর আমি বাংলাদেশে যাই। এবারও গিয়েছিলাম গত ২৮ অক্টোবরে। ১৪ নভেম্বর যুক্তরাজ্যে ফিরে আসি। বাংলাদেশে গেলে আমি সবসময় গ্রামীণ এলাকায় ঘুরতে যাই, মানুষের সাথে কথা বলি এবং সেখানে কয়েকদিন থাকি, গ্রামীণ বাংলাদেশে ঘটতে যাওয়া অনন্য পরিবর্তন দেখতে ও অনুভব করতে। এবার আমি কোথাও যাওয়ার সাহস করিনি। আমার বন্ধুদের কারো সাথেও দেখা করিনি। শুধু ঢাকা ও গাজীপুরে জুলাই ও আগস্টে ঘটে যাওয়া ধ্বংসলীলা দেখতে গিয়েছিলাম। আমাদের তথাকথিত নতুন স্বাধীনতার কারণে, আইনশৃঙ্খলার উল্লেখযোগ্য অবনতি হয়েছে, কিশোর গ্যাংদের তান্ডব, জনতার বিচার (mob justice), চাঁদাবাজি, ছিনতাই, একের পর এক ছাত্র-শ্রমিকদের আন্দোলন এবং রাস্তা অবরোধ নিত্যদিনের রুটিনে পরিণত হয়েছে। আমি আমার মেডিকেল কলেজ দেখতে ময়মনসিংহ যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু গার্মেন্টস শ্রমিকের রাস্তা অবরোধের কারণে যেতে পারিনি। গত বছর সিলেট মেডিকেল কলেজ দেখতে গিয়েছিলাম। তাই, আমি বাসার বাহিরে খুব একটা য়ায়নি, বাসায় বসে আমার ভাই-বোন এবং অন্যান্য আত্মীয়দের সঙ্গে ভালো সময় কাটিয়েছি। বাসার কাছাকাছি বাজারে গিয়ে শুনলাম মানুষ বলছে জীবনযাত্রার খরচ দিন দিন আকাশ ছুঁয়ে যাওয়ায় জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে। দুর্নীতি থামেনি, শুধু হাত বদল হয়েছে। দুর্নীতিও পেয়েছে নিজস্ব নতুন স্বাধীনতা। মিথ্যা মামলা দিয়ে টাকা আদায় এখন নতুন ব্যবসায় পরিণত হয়েছে।
আমি একজন তরুণ উদ্যোক্তার সাথে কথা বলছিলাম। সে আমাকে বললো , দুর্নীতি কমেনি বরং দিন দিন বাড়ছে। ফ্যাসিস্টের সহযোগী আখ্যা পাওয়ার ভয়ে কেউ কোনো কিছুর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে সাহস করছে না। আজ যেন এভাবেই আমরা বাক স্বাধীনতা এবং সত্য বলার স্বাধীনতা পেয়েছি। দুর্নীতির সম্প্রতি একটি ঘটনার উদাহরণ দিল সেই তরুণ। তার এক বন্ধুর ম্যাট্রিক সার্টিফিকেটে তার নামের বানান ভুল করে লেখা হয়েছে। এনআইডি বা পাসপোর্টের জন্য সঠিক নাম যাচাইয়ে ম্যাট্রিক সার্টিফিকেট গুরুত্বপূর্ণ। তাই সে ম্যাট্রিক সার্টিফিকেটে তার নামের বানান ভুলের সংশোধন করতে যায় সংশ্লিষ্ট ঢাকার অফিসে। অফিস কর্মচারী অফিসে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময় ২৫,০০০ টাকা দাবি করে এবং তার ম্যাট্রিক সার্টিফিকেটের সংশোধন সংস্করণ পেতে তাকে আরও ২৫,০০০ টাকা দিতে হল!!
আমি ঢাকায় আমার একজন বন্ধুর সাথে কথা বলছিলাম। সে বললো কয়েকদিন আগে তারা ঢাকার একজন সিনিয়র স্টুডেন্ট কো-অর্ডিনেটরকে (সমন্বয়ককে) দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলার জন্য তাদের অফিসে আমন্ত্রণ জানায়। সমন্বয়কারী তাদের উদ্দেশে বলেন, “সমন্বয়কারীরা এখন কী করছেন বা বলছেন তা দেখে শিক্ষার্থীরা বিভ্রান্ত হচ্ছে। দিনে দিনে অনেক শিক্ষার্থী এবং তার মত কিছু কিছু সমন্বয়কারী নিজেদেরকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছেন। তারা কখনই ভাবেনি যে তারা সরকারে থাকবে, উপদেষ্টা হবে, বা সরকার বা উপদেষ্টারা কী করবে এবং কীভাবে পরিচালনা করা উচিত তার নির্দেশনা দেবে। তারা কখনও ছাত্র বা রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা, সংবিধান পরিবর্তন, বা জাতির পিতা বা মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করার কথা বলেননি বা পরিকল্পনা করেননি। দেখে মনে হচ্ছে কিছু ছাত্র সমন্বয়কারী মাস্টারমাইন্ডরা ছাত্র আর জনগনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামের নামে রাজনৈতিক খেলা খেলতে অনেক আগে পরিকল্পনা করেছে যা তাদের জানা ছিল না। চরমপন্থী ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলো প্রধান ভূমিকা পালন করছে দেখে তারা বিস্মিত। তিনি বলেন, একটি গণতান্ত্রিক জাতি গঠনের দাবিতে তারা সংগ্রামে যোগ দিয়েছিল, যেখানে সবার স্বাধীনতা নিশ্চিত ও সম্মান রক্ষা করা হবে। এই অনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য নয়।” তাই ভাবছি আমার কোথায় যাচ্ছি?
Comments
Leave a Comment