একাত্তরে জামায়াতের ভূমিকা: ইতিহাস যা সাক্ষী দেয়
সাম্প্রতিক সময়ে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি দাবি করেন, জামায়াতে ইসলামী এক পাকিস্তান চাইলেও একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিল না। কিন্তু ইতিহাস বলে জামায়াতে ইসলামী আমিরের এই বক্তব্য সঠিক নয়। আসুন দেখে নিই রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও লেখক মহিউদ্দিন আহমদ এর লেখা ‘জামায়াতে ইসলামী উত্থান বিপর্যয় পুনরুত্থান’ গ্রন্থটি কি সাক্ষ্য বহন করে। আজ থাকছে তৃতীয় পর্ব।
দৈনিক আজাদ, ২৪ নভেম্বর
ছাত্র সমাজের প্রতি ডাক: হিন্দুস্থানী হামলার বিরুদ্ধে রুখিয়া দাঁড়ান। পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের পূর্বাঞ্চল শাখার সভাপতি জনাব আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সাধারণ সম্পাদক মীর কাসেম আলী গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে হিন্দুস্থানী হামলার বিরুদ্ধে রুখিয়া দাঁড়ানোর জন্য দেশের ছাত্র সমাজের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। তাছাড়া ছাত্র সংঘের প্রতিটি কর্মীর প্রতি পাকিস্তানের প্রতি ইঞ্চি জমি রক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানাইয়াছেন।
দৈনিক আজাদ, ২ ডিসেম্বর
পূর্ব পাকিস্তানিদের উপর আস্থা স্থাপনের আবেদন- গোলাম আযমের ৩ দফা:
(১) পশ্চিম পাকিস্তানকে ভারত হইতে রক্ষা কর;
(২) পূর্ব পাকিস্তানের দেশপ্রেমিকদেরকে যথাযথ অস্ত্রসজ্জিত কর; এবং
(৩) তাহাদের প্রতি পূর্ন আস্থা স্থাপন কর।
অন্তর্ঘাতী অনুচরদের ন্যায় আমাদের রাজাকার এবং অন্যান্য দেশপ্রেমিকদেরও একই ধরনের ক্ষমতাসম্পন্ন অস্ত্রসজ্জিত করিতে হইবে বলিয়া তিনি আহ্বান জানান।
দৈনিক আজাদ, ৭ ডিসেম্বর
দেশ বিধর্মীর দ্বারা আক্রান্ত হইলে মুসলমানদের জন্য জিহাদ বাধ্যতামূলক-মওদূদী
জামায়াত ইসলামীর আমির মাওলানা আবুল আলা মওদূদী গতকাল্য বলেন যে, যখন কোনো ইসলামীর আমির মাওলানা দেশ বিধর্মী শক্তি দ্বারা আক্রান্ত হয়, তখন দেশের প্রত্যেক সক্ষম মুসলমান এমনকি অন্য দেশ হইতে সফরে আগত মুসলমানের জন্যও জিহাদ বাধ্যতামূলক হইয়া পড়ে। ইহাই শরিয়তের বিধান। মাওলানা মওদূদী একদল ছাত্রের সহিত কথাবার্তা বলিতেছিলেন। ছাত্রদের মনোবলের প্রশংসা করিয়া তিনি তাহাদের জানবাজ বাহিনীতে যোগদানের পরামর্শ দিয়াছেন।
৫
পাকিস্তান সরকার সেনাবাহিনীকে সাহায্য ও প্রশাসন সচল রাখার কাজে সাহায্য করার জন্য তৈরি করেছিল রাজাকার বাহিনী। তাদেরকে পোশাক, ভাতা ও অস্ত্র দেওয়া হয়। রাজাকার বাহিনীর ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবে গঠিত হয় আলবদর ও আলশামস বাহিনী। তাদের হাতে অনেকেই নিহত হন। নিহতদের পরিচয় হয় ভারতীয় চর কিংবা দুষ্কৃতকারী হিবেবে। নিহতদের অনেকেই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। অন্যান্য সাধারণ নাগরিক কিংবা স্বাধীন বাংলাদেশের সমর্থক, তখনকার পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে রাজাকাররে তৎপরতার একটা সম্যক চিত্র উঠে এসেছে।
দৈনিক সংগ্রাম, ৫ সেপ্টেম্বর
রাজাকার ও বদরবাহিনীর কৃতিত্ব: ৬ জন ভারতীয় চর নিহত, বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার
দৈনিক সংগ্রাম, ৮সেপ্টেম্বরে রাজাকার ও মুজাহিদদের সফল অভিযান: প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র আটক
দৈনিক সংগ্রাম, ১২ সেপ্টেম্বর: রাজাকার ও মুজাহিদদের বিরাট সাফল্য : বহু সংখ্যক ভারতীয় চর নিহত, অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার
দৈনিক সংগ্রাম, ২৭ অক্টোবর: যশোরের গ্রামে ১২ জন দুষ্কৃতকারী হত্যা ও দুজন গ্রেফতার
দৈনিক সংগ্রাম, ৩০ অক্টোবর: প্রদেশে রাজাকারদের সফল অভিযানে ১৪ জন ভারতীয় চর খতম
দৈনিক সংগ্রাম, ৮ নভেম্বর: শামস ও বদরবাহিনীর বীরত্ব ও সাহসিকতায় ভারতীয় চরেরা নাজেহাল
দৈনিক সংগ্রাম, ১১ নভেম্বর: আলবদর বাহিনীল অভিযান: চট্টগ্রামে ৪০ জন দুষ্কৃতকারী গ্রেফতার
দৈনিক আজাদ, ৫ আগস্ট: বরিশালে ছাত্র সংঘের উদ্যোগ জনসভা, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নির্মূল করার সংকল্প ঘোষণা
দৈনিক আজাদ, ১৯ আগস্ট: রাজাকার ওপুলিশের হাতে খুলনার পল্লীতে ৬০ জন ভারতীয় দালাল নিহত
দৈনিক আজাদ, ২৫ আগস্ট: যশোরের পল্লীতে রাজাকার বাহিনীর হাতে ‘মুক্তিফৌজের’ ৩৯ জন নিহত
দৈনিক আজাদ,৩১ অক্টোবর: রাজাকার বাহিনীর তৎপরতা- ৩০ জন ভারতীয় চর হত্যা
দৈনিক আজাদ, ৩ নভেম্বর: আলশামস-এর তিনটি সফল অভিযান
দৈনিক আজাদ, ২৬ নভেম্বর: রাজধানীতে বদরবাহিনীর মিছিল-হাতে নাও মেশিনগান, খতম কর হিন্দুস্থান
দৈনিক আজাদ ১১ ডিসেম্বর: গুজব সুষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি প্রদান করিয়া আলবদর আয়োজিত পথসভায় বক্তৃতা করিতেছেন আলবদর প্রধান জনাব মুজাহিদী (ছবি)
উল্লেখ্য যে, ১৯৭১ সালের ১৫ মে ঢাকায় ইসলামী ছাত্র সংঘের পূর্ব পাকিস্তান শাখার একটি বৈঠকে দলের কর্মীদের নিয়ে আলাদা একটি রাজাকার বাহিনী গঠনের প্রস্তাব গৃহীত হয়।
১৬ মে শেরপুর জেলার ৪৭ জন ছাত্র সংঘ কর্মীকে সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে আলবদর নাম দেওয়া হয়। এর কমান্ডার ছিলেন কামরান। ৩ বেলুচ রেজিমেন্টের মেজর রিয়াদ হোসেন ছিলেন এর উদ্যোক্তা।
চলবে (আগামীকাল থাকছে চতুর্থ পর্ব)
Comments
Leave a Comment