Post Thumbnail

পুলিশ স্বাভাবিক হবে কবে?


৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের সাথে সাথে ভেঙে পড়ে দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি। যেখানে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার দায়িত্ব পুলিশের, সেখানে পুলিশ বাহিনী নিজেরাই কর্মস্থল থেকে পালিয়ে যায়। দায়িত্ব পালনে অপরাগতা প্রকাশ করে। দেশ চলতে থাকে পুলিশবিহীন। এসময় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তৎপর ছিল সেনাবাহিনী। এরই মধ্যে ৮ আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণ করে শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই সরকারের প্রধান এবং অন্যতম অগ্রাধিকার বিষয় ছিল আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি করা। কিন্তু এরই মধ্যে তিন মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এখনো সমাজে নানা ধরনের অস্থিরতা, অরাজকতা, চুরি, ছিনতাইয়ের ঘটনা অহরহ ঘটে যাচ্ছে। মানুষ তার শান্তির ঘুমকে বির্সজন দিয়েছেন। সড়ক-মহাসড়কের চাঁদাবাজি, মহানগর শহরগুলোতে ট্রাফিক জ্যামে মানুষ অতিষ্ঠ। আর এর অন্যতম কারণ হলো পুলিশ প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা। পুলিশ কাজে ফিরলেও ফেরেনি তাদের কর্ম স্পৃহা, কাজের চঞ্চল্যতা। এখনো কাটেনি আতঙ্কের ঘোর। উল্লেখ্য যে, ৫ আগস্টে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের ফলে সারা দেশের বিভিন্ন থানা, পুলিশের স্থাপনা সহ পুলিশ সদস্যদের উপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। ফলে পুলিশ নিজের জীবন বাঁচাতে আড়ালে চলে যায়। তাদের মনোবল ভেঙে যায়। সারা দেশে অবকাঠামোগত ভাবে থানা স্টেশনগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জানা গেছে, গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সারা দেশের সর্বমোট ৬৩৯টি থানার মধ্যে আগুন ও ভাঙচুরে দেশের ৪৫০ থানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে ঢাকার ৫০ থানার মধ্যে পুড়ানোসহ নানাভাবে ২১টি থানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অস্ত্রাগার, মালখানা, গাাড়ি ও মামলার আলামত পুড়ে গেছে, লুট হয়েছে। বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার হলেও এখনো অনেকগুলো উদ্ধার হয়নি। সহিংসতায় অন্তত ৪৪ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গণ-অভ্যুত্থানে পুলিশের উপর হামলার ঘটনয় পুলিশ সদস্যরা এখনো মানসিকভাবে বিধ্বস্ত, এক ধরনের ট্রমার মধ্যে আছে। থানা, ফাঁড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেসব পুলিশি কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা নেমে এসেছিল, পর্যায়ক্রমে তা সক্রিয় করা হচ্ছে। আস্তে আস্তে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরপর পুলিশের মধ্যে ব্যাপক রদবদল করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর পদে দায়িত্বে থাকা বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। পুলিশের এই ব্যাপক রদবদলের ঘটনাও স্বাভাবিক কার্যক্রমকে প্রভাবিত করেছে। উর্ধ্বতন  এছাড়াও পুলিশের কার্যক্রমে স্বাভাবিক গতি না আসার আরেকটি অন্যতম কারণ হলো সারাদেশে পুলিশে ব্যাপকভাবে বদলির ঘটনা। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, মহানগর থেকে প্রতিটি রেঞ্জ ও ইউনিটে ব্যাপক রদবদল হয়েছে। এই বদলি এখনো অব্যাহত রয়েছে। কনস্টেবল থেকে অতিরিক্ত আইজিপি পর্যন্ত বদলি করা হয়েছে। আইজিপি, রেঞ্জ ডিআইজি, মেট্রোপলিটন কমিশনার ও জেলার পুলিশ সুপার পদে এসেছে নতুন মুখ। থানায় থানায় যোগ দিয়েছেন নতুন পরিদর্শক। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে কনেস্টেবল প্রায় সবাই বদলির তালিকায় পড়েছেন। 

তথ্যমতে, সারাদেশে পোশাকধারী দুই লাখ দুই হাজার পুলিশের বিপরীতে রদবদল করা হয়েছে ৪৫ হাজার ৪২ সদস্যকে। সে হিসাবে প্রায় ২৫ শতাংশ পুলিশের চেয়ার বদলে গেছে। অল্প সময়ে এত সংখ্যক পুলিশ সদস্যের কর্মস্থল বদলের ঘটনা নজিরবিহীন। পুলিশে এককভাবে সবচেয়ে বড় ইউনিট হলো ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। যেখানে অন্তত ৩২ হাজার সদস্য কাজ করেন। এখানেই এ পর্যন্ত এখানকার ১৮ হাজার সদস্যকে বদলি করা হয়েছে। ফলে ডিএমপি কর্মরত অধিকাংশ পুলিশ সদস্যই নতুন। রাজধানীর মতো জায়গায় নতুন পরিবেশে কাজের ধরন নিয়ে তাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিশেষ করে অপরাধ দমনে পুলিশ সদস্যদের নিজস্ব আলাদা সোর্স থাকে। কিন্তু সারা দেশে ব্যাপক রদবদলের কারণে নতুন কর্মস্থলে পুলিশ সদস্যরা নানারকম প্রতিকূলতার মুখোমুখি হচ্ছে। যা প্রভাব পড়েছে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে। হঠাৎ বদলিতে নতুন কর্মস্থলে গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা সবকিছু গুছিয়ে উঠতে পারেননি এখনো। আবার বলপ্রয়োগে নিষেধাজ্ঞা থাকায় চলমান পরিস্থিতিতে মাঠ পুলিশ কিভাবে অভিযান চালাবে এর সুস্পষ্ট নির্দেশনা না পেয়ে চুপ মেরে আছে থানা পুলিশ। রাস্তায় নেমে অবরোধ-বিক্ষোভ করে সৃষ্ট যানজট ঠেকাতে পুলিশের ভূমিকা অনেকটা নিরব দর্শকের মতো। রাজধানীর সড়কে দেখা গেছে, রিক্সা চালকরা পর্যন্ত পুলিশকে কোন রকম ভয় করছে না ৫ আগস্টের পরে। তারা মূল সড়কেও রিক্সা চালাচ্ছে অবাধে, কোন বাঁধাহীন ভাবে। এরকম পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী পুলিশ প্রশাসনকে সহায়তা দিচ্ছে বৈকি কিন্তু এটাই স্থায়ী সমাধান নয়। সড়কে সুশৃঙ্খলা ফেরানো সহ দেশের সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের ভূমিকাই মূখ্য। কিন্তু সেই পুলিশ বাহিনী এখনো ট্রমার মধ্যে। কবে আবার তারা স্বাভাবিক কর্ম গতিতে ফিরবে?


Comments

Leave a Comment


Related Articles