Post Thumbnail

কর্মীদের বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে আওয়ামী লীগ?


শান্ত সিংহ: ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয় টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের। যদিও আওয়ামী লীগের দাবি এটি (গণ-অভ্যুত্থান) ছিলো তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। একটি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাদেরকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এটি (গণ-অভ্যুত্থান) ষড়যন্ত্র হোক কিংবা যাই হোক না কেন ছাত্র-জনতার একটি গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। এই গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতাই পালিয়ে গেছেন। যাই হোক না কেন ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে এটিই বাস্তব সত্য এবং এটিকে অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু লক্ষনীয় বিষয় হলো আওয়ামী লীগ এটাকে স্বীকার করছে না, বাস্তবতাকে মেনে নিচ্ছে না। বরং দলটির মধ্যে এখনো অহমবোধ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে কোন আত্মসমালোচনা নেই, কোন অনুশোচনা নেই। 

আওয়ামী লীগ এই গণ-অভ্যুত্থানকে ষড়যন্ত্র বলুক কিংবা যাই বলুক না কেন, বাস্তবতা হলো একটি গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে এবং এই পরিস্থিতির জন্য তাঁরাই দায়ী। নিজেদের কতগুলো কৃতকর্মের জন্যই আজকে এই বাস্তবতা মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী এই দলটি। বিশেষ করে বিগত ১৫ বছরে দলের গুটি কয়েকজন দুর্নীতিবাজের কারণে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এমন জনরোষ তৈরি হয়েছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কয়েকজন নেতা এবং মন্ত্রীর সীমাহীন দুর্নীতির কারণে পুরো দলকে আজ পালিয়ে যেতে হয়েছে। বিগত ১৫ বছরে দলের সাংগঠনিক অবস্থাও ছিলো অন্তত ভঙ্গুর। ত্যাগী পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের জায়গা দখল করে নিয়েছিলো একদল অনুপ্রকেশকারী হাইব্রিড, চাটুকার এবং আদর্শহীন কিছু ব্যক্তি। যাঁরা মনোনয়নে আধিপত্য বিস্তার করেছিলো। আর উপেক্ষিত ছিলো ত্যাগী পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা। দলের এসমস্ত অনুপ্রকেশকারী হাইব্রিড, চাটুকার নেতারা শুধু নিজের আখের গুছাতেই ব্যতিব্যস্ত ছিলো। যার পরিণতি এখন পুরো দলকেই ভোগ করতে হচ্ছে। এটা নিয়ে বিভিন্ন মহল, গোষ্ঠী এবং তৃণমূল থেকেও বারবার অভিযোগ করা হলেও দলটি সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ করেনি।

আওয়ামী লীগের এই মহাবিপর্যয়ের পিছনের দলটির অঙ্গ সংগঠনকেও দায়ী করছেন কোন কোন মহল। বিশেষ করে বিগত ১৫ বছর দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের স্বেচ্ছাচারিতা, টেন্ডার বাণিজ্য, হল বাণিজ্য, সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর অমানবিক নির্যাতন বা তাদের উপর ছাত্রলীগ যেভাবে দাসত্ব কায়েম করেছে তা পুরো ছাত্র সমাজকে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ করেছে, একত্রিত করেছে। ক্যাম্পাসগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে রীতিমতো আতঙ্কের নাম ছিলো ‘ছাত্রলীগ’। কোটা আন্দোলনের সময়ও সংগঠনটির বিতর্কিত ভূমিকা সর্বজন স্বীকৃত। কিন্তু এতোকিছুর পরও সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বা তাদের অভিভাবক সংগঠন আওয়ামী লীগ তাদের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনীয় নয়। বরং দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা উস্কানি ছড়াচ্ছে। 

পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রায় সবাই পালিয়ে গেছেন। গণমাধ্যমের প্রকাশিত খবরে জানা যায় অধিকাংশ নেতা ভারতে অথবা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিরাপদ অবস্থানে রয়েছেন। দুর্নীতি আর লুণ্ঠনের উপার্জন দিয়ে বেশ আরাম-আয়েশে সময় কাটাচ্ছেন তারা। কিন্তু বড্ড বিপদে পড়েছেন দলের কর্মীরা। নেতাদের কৃতকর্মের জন্য তাদের বিভিন্ন ভোগান্তি মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। কোথাও কোথাও জনরোষের শিকার হচ্ছেন তাঁরা। অথচ বিগত ১৫ বছরের মধ্যে এদের অনেকে আওয়ামী লীগের হালুয়া-রুটির কোন ভাগই পায়নি কিংবা সেই চেষ্টাও তাঁদের ছিলো না। তারা আদর্শিক ভাবেই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতো, আওয়ামী লীগকে সমর্থন করতো। অথচ তাঁরাই এখন সবচেয়ে বড় বিপদে। এমনিতেই যখন তাঁরা কোণঠাসা তখন আবার বিদেশের মাটিতে কিংবা আত্মগোপনে থেকে কর্মীদের মধ্যে উস্কানি ছড়াচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তাঁরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কর্মীদের প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছেন। কিন্তু নিজেরা ঠিক নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করছেন। এটি যেন কর্মীদের বাঘের মুখেই ফেলা দেয়ার সামিল। আজকের কথাই ধরা যাক। আজ ১০ নভেম্বর, শহীদ নূর হোসেন দিবস। দিবসটি উপলক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন কর্মসূচি দিয়েছে। আওয়ামী লীগও তাদের কর্মসূচি ঘোষণা করে। আজ বিকাল ৩টায় রাজধানীর গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে শহীদ নূর চত্তরে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয় দলটি। এতে করে চরম বিপাকে পড়েছে তৃণমূলের কর্মীরা। দলটির এমন কর্মসূচি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ বিভিন্ন মহলে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। দলের গুটি কয়েক কেন্দ্রীয় নেতা এবং মন্ত্রীদের সীমাহীন দুর্নীতির কারণে যেখানে কর্মীরা এখন এক চরম অনিশ্চিয়তার মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করছেন সে সময় এরকম অপরিপক্ক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে তীব্র সমালোচনা করছেন অনেকে। গত কয়েকি দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক সাধারণ কর্মীর গ্রেপ্তার কথা গণমাধ্যমে এসেছে। খোদ রাজধানীতেই অর্ধশতাধিক আওয়ামী লীগ কর্মীকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে ডিএমপি। এর দায় কী নেতারা নিবে? ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর এমনিতেই কর্মীরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে, পালিয়ে বাঁচারও উপায় নেই তাদের। এরকম পরিস্থিতি দলের এমন নিদের্শনা বা সিদ্ধান্তকে খাল কেটে কুমির আনার মতো বলে মনে করছেন কেউ কেউ। অনেকে প্রশ্ন রাখছেন বাস্তবতা না মেনে কর্মীদের এমন নিদের্শনা দিয়ে তাদেরকে বাঘের মুখে ফেলে দিচ্ছেন কিনা নেতারা? নেতাদের এমন আচরণ কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করছেন অনেকে। বরং নেতৃবৃন্দের উচিত ছিলো তাদের কৃতকৃর্মের আত্মমূল্যায়ন করা। বিগত সময়ে ভুলগুলোকে চিহ্নিত করে সংগঠনকে শক্তিশালী করা, সাংগঠনিক ভিত্তিকে মজবুত করার উপর গুরুত্বারোপ করা। কিন্তু আওয়ামী লীগ কী সে পথে হাটছে?


Comments

Leave a Comment


Related Articles