Post Thumbnail

অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাস এবং ঘটনা প্রবাহ


ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন শেখ হাসিনা। এর পর গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। পাহাড় সমান প্রত্যাশা নিয়ে যাত্রা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারের। আগামীকাল ৮ নভেম্বর তিন মাস অতিক্রম করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গত ৮ আগস্ট রাতে বঙ্গভবনে শপথ গ্রহণ করে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে এই সরকার। এর আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। এরপর হেলিকপ্টারে করে দেশ ছাড়েন। যদিও শেখ হাসিনার পদত্যাগ করা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বিভিন্ন সূত্রের বরাদ দিয়ে দেশের গণমাধ্যমগুলো বলছে, শেখ হাসিনা বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগ জমা দেন। এরপর সেখান থেকেই তিনি দেশ ছেড়েছেন। তবে রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় দাবি করেছেন, ‘শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগই করেননি। সে সময়টুকু পাননি তিনি।’ গত ১৩ আগস্ট দৈনিক কালের কণ্ঠে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারেও তিনি একই দাবি করেন। তবে ১১ আগস্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন দাবি করেন শেখ হাসিনার পতদ্যাগের বিষয়টি ‘উপদেষ্টা পরিষদ’ নিশ্চিত। তিনি (শেখ হাসিনা) পদত্যাগ করেছেন। পরে শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিতর্কিত ইস্যু নিয়ে ফের বোমা ফাটান ‘মানবজমিন’ পত্রিকার একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট। পত্রিকাটির রাজনৈতিক ম্যাগাজিন 'জনতার চোখ' এ রাষ্ট্রপতির একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। যেখানে রাষ্ট্রপতি দাবি বলেছেন, তিনি শেখ হাসিনার ‘পদত্যাগপত্র’ তন্ন-তন্ন করে খুঁজে পাননি। তবে ২১ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির প্রেস উইং থেকে গণমাধ্যমে এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে মীমাংসিত বিষয়ে নতুন করে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অস্থিতিশীল কিংবা বিব্রত করা থেকে বিরত থাকার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি। শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে বিতর্ক হতে পারে বা থাকতে পারে তবে বাস্তবতা হলো তিনি দেশ ছেড়ে ভারতে চলে গেছেন। এর মধ্য দিয়ে তাঁর টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে অবসান ঘটে। এর আগে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জনগণের নিরঙ্কুশ ভোট নিয়ে তিনি ক্ষমতায় বসেছিলেন। যদিও শেখ হাসিনার শাসনামলে ২০১৪, ২০১৮ এবং সর্বশেষ ২০২৪ এর জাতীয় নির্বাচন নিয়ে গ্রহণযোগ্যতার বড় প্রশ্ন আছে। কিন্তু তারপরও অপ্রতিরোধ্য ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে ২০২৪ সালে এসে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন তিনি।

শেখ হাসিনার পদত্যাগ, দেশজুড়ে বিজয় উৎস

৫ আগস্ট দুপুর ২টা নাগাদ পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। এর পরপরই দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান তিনি। শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং ভারতে পালিয়ে খবরে উল্লাসে মেতে ওঠে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা। পথে পথে বের হয় বিজয় মিছিল; দখলে নেন গণভবন, জাতীয় সংসদ ভবন। সরকার পতন আন্দোলনের বিজয় উৎসে মেতে ওঠে গোটা দেশ। এ সময় গণভবন থেকে ব্যাপক লুটপাতের ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার কেউ কেউ যে যা পারে গনভবন থেকে নিয়ে যায়।

রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সেনাপ্রধানের বৈঠক

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেশত্যাগের পর দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস; জাতীয় পার্টির জি এম কাদের, মুজিবুল হক চুন্নু, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ; হেফাজতে ইসলামের মাওলানা মামুনুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, খেলাফত মজলিশের মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, হামিদুর রহমান আজাদ প্রমুখ। তবে বৈঠকে আওয়ামী লীগের কেউ ছিল না বলে নিশ্চিত করেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান।

জাতির উদ্দেশ্যে সেনাপ্রধানের ভাষণ

বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটের দিকে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। এ সময় তিনি ভাঙচুর-হত্যা-মারামারি-সংঘর্ষ থেকে বিরত থাকার আহবান জানান। জাতির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা একটু ধৈর্য ধরেন আমাদের একটু সময় দেন। আমরা সবাই মিলে সব সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম হব। আপনারা আর সংঘাতের পথে যাবেন না। শান্তি-শৃঙ্খলার পথে ফেরত আসেন। আমাদের দেশের অনেক ক্ষতি হচ্ছে, অর্থ-সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে, লোকজন মারা যাচ্ছে। এগুলো থেকে আমরা বিরত হব। আমাদের সাহায্য করেন। আমি সব দায়িত্ব নিচ্ছি।’ 

এর আগে শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবরের ঠিক আগে আগে আইএসপিআর এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জানানো হয় যে দুপুর ২টায় সেনাপ্রধান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিবেন। আইএসপিআর থেকে বলা হয়, জনসাধারণকে সহিংসতা পরিহার করে ধৈর্য ধারণ করার অনুরোধ করা হলো।

বিএনপি মহাসচিব ও জামায়াত আমীরসহ রাজনৈতিক নেতারা বঙ্গভবনে

সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এর সাথে বৈঠকের পর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে দেখা করতে বঙ্গভবনে যান বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।

বঙ্গভবনে অন্য যারা যান তারা হলেন- বিএনপির মির্জা আব্বাস, আসাদুজ্জামান রিপন, গণতন্ত্র মঞ্চের প্রধান সমন্বয়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, হেফাজত নেতা মাহমুদুল হক, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হক।

২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা দেয়ার ঘোষণা

শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ঐদিন রাতে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকারের রূপরেখা পেশ করার ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমরা একটি অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকারের প্রস্তাব করবো। সেই জাতীয় সরকারে অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-নাগরিকদের অংশ থাকবে এবং নাগরিক সমাজসহ বিভিন্ন পেশাজীবী ও বিভিন্ন পক্ষ রয়েছে। সবার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকারের রূপরেখা ও সেই সরকারে কারা কারা থাকবেন তাদের নাম ঘোষণা করবো।

খালেদা জিয়ার মুক্তি

পরিবর্তিত পরিস্থিতির দ্বিতীয় অর্থাৎ ৬ আগস্ট বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হয়। এ ছাড়া গত ১ জুলাই ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও বিভিন্ন মামলায় আটককৃতদের মুক্তি দেওয়া শুরু হয়।

এর আগে আওয়ামী লীগ শাসনামলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুর্নীতির দুই মামলায় সাজা পেয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দী হন। দুই বছরের বেশি সময় তিনি কারাবন্দি ছিলেন। পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এক নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা ২০২০ সালের ২৫ মার্চ স্থগিত করে তাকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেয়। তখন থেকে ছয় মাস পরপর মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে যায় সরকার। 

সারা দেশে ব্যাপক লুটপাত ও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা

গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার পতনের পর সারা দেশে লুটপাত এবং সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ৫ আগস্ট বিকাল থেকেই এ সমস্ত হামলার খবর আসতে থাকে। যশোর, নোয়াখালী, ঢাকার ধামরাই, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা, নাটোর, মেহেরপুর, দিনাজপুর, চাঁদপুর, শরীয়পুর, খুলনা, ফরিদপুর, রংপুরসহ সারা দেশে অন্তত ২৯টি জেলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে।

দুটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের সংগঠন, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আগস্টের ৯ তারিখ লেখা এক খোলা চিঠিতে জানান যে, তখন পর্যন্ত শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সারাদেশে ৫২ টি জেলায় কমপক্ষে ২০৫ টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক প্রেস কনফারেন্স চিঠিটি পড়ে শোনান।

[সূত্র: প্রথম আলো, ৬ আগস্ট; বিবিসি বাংলা, ৭ আগস্ট; আজকের পত্রিকা, ৭ আগস্ট; কালবেলা, ৭ আগস্ট; ভয়েস অব আমেরিকা, ১৬ আগস্ট]

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও ধানমন্ডি কার্যালয়ে ভাঙচুর-আগুন

সরকার পতনের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং ধানমন্ডি ৩ নম্বরে দলটির সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এছাড়াও ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িতেও হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় আশপাশের ভবনেও আগুন দেয়া হয়। 

কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের উল্টো পাশে ১৯ বঙ্গবন্ধু অ্যভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়। ২৫ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে যুবলীগ কার্যালয়। আওয়ামী লীগের আরও কয়েকটি সংগঠনের কার্যালয় সেখানে। যেগুলোতেও ভাঙচুর করা হয়। প্রায় একই সময়ে আগুন দেওয়া হয় তেজগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের ঢাকা জেলা কার্যালয়েও। প্রায় কাছাকাছি সময়ে ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয় যশোরের আওয়ামী লীগ নেতা শাহিন চাকলাদারের মালিকানাধীন একটি বিলাসবহুল হোটেলে। সেখানে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ২০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছে।

কারাগার থেকে বন্দী পলায়ন

সৃষ্ট পরিস্থিতির সুযোগ কাজে লাগায় কারাগার বন্দী থাকা আসামীরাও। সরকার পতনের পর ৭ আগস্ট দুপুরে কুষ্টিয়া জেলা কারাগার থেকে ১০ থেকে ১৫ জন কয়েদি পালায়। জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজা বিবিসি বাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। 
[সূত্র: বিবিসি বাংলা, ৭ আগস্ট, ২০২৪]

হামলার মুখে পুলিশ

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সবচেয়ে ‘নাজুক’ পরিস্থিতিতে পড়ে বাংলাদেশ পুলিশ। দেশের বিভিন্ন থানা এবং পুলিশ হামলার শিকার হয়। সারা দেশের অন্তত চার শতাধিক থানায় হামলার ঘটনাও ঘটে। সিরাজগঞ্জের একটি থানাতেই সাধারণ মানুষ হামলা চালিয়ে ১৩ পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করে। সরকার পতনের পর প্রথম কয়েক দিন পুলিশ সদস্যদের ‘চরম আতঙ্ক’ নিয়ে রীতিমতো পালিয়ে ও আত্মগোপনে থাকতে হয়। ঢাকার কোথাও ট্রাফিক পুলিশ দেখা যায়নি এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তর বন্ধ ছিল। 

১৮ আগস্ট পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম শাখা থেকে জানানো হয়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সংঘাতে ৪৪ পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০ জুলাই থেকে ১৪ আগস্টের মধ্যে এসব পুলিশ সদস্য মারা গেছেন। সবচেয়ে বেশি ২৫ পুলিশ সদস্য মারা গেছেন ৫ আগস্ট। আগের দিন ৪ আগস্ট মারা গেছেন ১৫ জন। এ ছাড়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০ জুলাই দুজন, ২১ জুলাই এক ও ১৪ আগস্ট এক পুলিশ সদস্য মারা গেছেন। [সূত্র: প্রথম আলো, ১৮ আগস্ট, ২০২৪]

চারদিন সরকারহীন বাংলাদেশ

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর চারদিন (৫-৮ আগস্ট) সরকারহীন ভাবে চলে বাংলাদেশ। শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অর্ন্তবর্তী সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করা হলেও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হয় ৮ আগস্ট রাতে। কার্যত কোন সরকার না থাকার ফলে প্রশাসন, সরকারের বিভাগের মধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে কোন নির্দেশনা ছিল না। সারা দেশে অনেক সহিংসতা ও হামলার ঘটনা ঘটলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের কোন ভূমিকা ছিল না।

প্রশাসনে অচলাবস্থা

৬ আগস্ট সরকারি কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয় খুললেও কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের হাতেগোনা কয়েকজন কর্মকর্তা অফিস করেন। এসব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকার বা নির্দেশনা দেয়ার মতো কেউ ছিল না। ঢাকার বাইরে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কেউ কেউ অফিস করলেও বেশির ভাগই নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে অফিস করেননি। আইএসপিআর এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ৬ আগস্ট থেকে সকল অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ঘোষণা করা হলেও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলেনি।

ডাকাতি ঘিরে আতঙ্ক

রাজধানীসহ সারা দেশে রাত নামলেই ডাকাত আতঙ্কে ভোগেন মানুষ। রাত হলেই বিভিন্ন এলাকায় ডাকাত ডাকাত বলে মসজিদের মাইক থেকে ভেসে আসে ঘোষণা। অনেক এলাকায় বসানো হয় পাহারা। পুলিশ মাঠে না থাকায় রাতভর চলে ‘নাগরিক টহল’। ঢাকার মিরপুর, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, বাসাবো, নন্দীপাড়া, রামপুরা গোড়ান, বনশ্রী, শাঁখারীবাজার, কাঁঠালবাগান এলাকায় ডাকাতের কথা বেশি শোনা যায়। অন্যান্য এলাকায় ডাকাতির ঘটনা কমে এলেও রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সেটা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা

শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা দেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ৬ আগস্ট ভোররাতে এক ভিডিওতে এই রূপরেখার ঘোষণা দেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। ভিডিওটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদের ফেসবুকে প্রচার করা হয়। ভিডিওতে নাহিদের পাশে আসিফ ছাড়াও আরেক সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার ছিলেন।

দেশে ফেরেন ড. ইউনূস, ‘এক পরিবার’ হয়ে ওঠার ঘোষণা

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করতে দেশে ফেরেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ৮ আগস্ট দুপুরে এমিরেটস এয়ারলাইনসের এক ফ্লাইটে প্যারিস থেকে ঢাকায় আসেন তিনি। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ড. ইউনূসকে বরণ করেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। এর আগে গত ২১ জুলাই প্যারিস অলিম্পিকে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশ নিতে প্যারিসে যান শান্তিতে নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ। ঢাকায় বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় সারা বাংলাদেশ ‘এক পরিবার’ হয়ে ওঠার কথা বলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, সারা বাংলাদেশ একটা বড় পরিবার। এই পরিবারে আমরা একসঙ্গে চলতে চাই। আমাদের সঙ্গে দ্বিধাদ্বন্দ্ব যা আছে সরিয়ে ফেলতে চাই। 

অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ গ্রহণ

গত ৮ আগস্ট রাত ৯টা ২১ মিনিটের দিকে বঙ্গভবনে শপথ নেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা। প্রথমে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরে শপথ বইয়ে সই করেন তিনি। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। ড. ইউনূসের পর শপথ নেন সরকারের ১৩ জন উপদেষ্টা। তিন জন ঢাকার বাইরে থাকায় সেদিন অনুপস্থিত ছিলেন।

উপদেষ্টারা হলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক  ড. আসিফ নজরুল, মানবাধিকারকর্মী আদিলুর রহমান খান, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল হাসান আরিফ, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন, পরিবেশ আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, নির্বাচন পর্যবেক্ষক শারমিন মুর্শিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুকী আজম, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান সুপ্রদীপ চাকমা, চিকিৎসক বিধান রঞ্জন, ইসলামি চিন্তাবিদ আ ফ ম খালিদ হাসান, উন্নয়নকর্মী ফরিদা আখতার, গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরজাহান বেগম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, বিধান রঞ্জন, সুপ্রদীপ চাকমা ও ফারুকী আজম।

পরে ১৬ আগস্ট উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত হন আরও চারজন। তারা হলেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, সাবেক সচিব মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

সচিবালয়ে অস্থিরতা

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই সচিবালয়ে এক অস্থিরতার সম্মুখীন হন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পরপরই পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তারা সরব হয়ে উঠেন। তারা তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রতিদিনই সচিবালয়ে দৌড়ঝাঁপ বা শোডাউন শুরু করেন। বিশেষ করে বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তারাই সবচেয়ে বেশি সোচ্চার হন। তারা নিয়মিত পদোন্নতির জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি অনুবিভাগে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। এ তালিকায় বিসিএস ১৩ থেকে শুরু করে ২৯তম ব্যাচ পর্যন্ত পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তারা রয়েছেন।

অন্যদিকে এসময় ‘বাংলাদেশ সচিবালয় বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী সংগঠনের’ ব্যানারে সোচ্চার হন ১০ম-২০তম গ্রেডের একদল কর্মচারী। তারা সচিবালয়ের ভেতরে বিক্ষোভ করেন। 

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিক্ষোভ

সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ৯ আগস্ট চার দফা দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন সংখ্যালঘুরা। মন্ত্রণালয় গঠন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা কমিশন গঠনসহ বেশকিছু দাবিতে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত টানা আন্দোলন করেন তারা। পরবর্তী সময়ে ১৩ আগস্ট দুপুরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার সরকারি বাসভবন যমুনায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের ৪০ জন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতারা প্রধান উপদেষ্টার কাছে আট দফা দাবি তুলে ধরেন। প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে দাবি পূরণের আশ্বাস দেয়া হলে সংখ্যালঘুরা তাদের আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করেন।

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যেতে বাধা, মারধর

শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা জানাতে বাধা দেয়া হয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের। এদিন আওয়ামী লীগের কর্মসূচি রুখে দেয়ার ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এর অংশ হিসেবে তারা রেজিস্ট্যান্স উইক পালন শুরু করে। আওয়ামী নেতা-কর্মীদের প্রতিরোধ করতে ভোর থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ এর আশপাশে সায়েন্স ল্যাব, জিগাতলাসহ বেশকিছু পয়েন্টে অবস্থান নেন শিক্ষার্থী ও কয়েকটি রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্যরা। এদিন যারাই ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য গিয়েছিলেন তারা সবাই বাধার মুখোমুখি হন। কেউ কেউ মারধরের শিকার হন। আগের দিন সন্ধ্যায় ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মোমবাতি প্রজ্বনন করতে গেলে হামলার শিকার হন অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী। পরের দিন ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গেলে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকীকে বাধা দেয়া হয় এবং তার প্রাইভেটকার ভাঙচুর করা হয়ে।

সচিবালয়ের ভেতর শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা-২০২৪ বাতিলের দাবিতে গত ২০ আগস্ট সচিবালয়ের ভেতরে ঢুকে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। যা নজরহীন। এভাবে বাইরে থেকে কোন আন্দোলনকারীদের ভেতরে ঢুকে বিক্ষোভ দেখানোর নজীর নেই। এমনকি ছাত্র জনতার আন্দোলনের সময়ও সচিবালয়ে এভাবে প্রবেশের ঘটনা ঘটেনি। এ ঘটনায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। পরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে পরীক্ষা বাতিল করা হয়।

সমন্বয়কদের মধ্যে মতবিরোধ ও পদত্যাগ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। কিন্তু ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ঢাকার বাইরে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বয়কদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। এ মতবিরোধের জেরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ জন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়কসহ সারা দেশে ২৫ জন সমন্বয়ক পদত্যাগ করেন। এ সময় পদত্যাগকারী সমন্বয়করা কমিটির বাকি সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, ব্যক্তি স্বার্থে সংগঠনের নাম ব্যবহার, সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধরসহ নানান অভিযোগ তোলেন। 
[সূত্র: বণিক বার্তা, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪]

রাত পর্যন্ত সচিবালয়ে অবরুদ্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন নামেন আনসার সদস্যরা। শিক্ষার্থীদের মতো আন্দোলনের এক পর্যায় তারা সচিবালয়ের ভেতরে ঢুকে পরেন। এতে সচিবালয়ের ভেতরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ২৫ আগস্ট রাত পর্যন্ত অবরুদ্ধ হয়ে পরেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। একটা সময় আনসার সদস্যের সাথে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে রণক্ষেত্রে রূপ নেয় সচিবালয় এলাকা।

দেশজুড়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ

৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর থেকেই সারা দেশ জুড়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে। তবে এরই মধ্যে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নেতাকর্মীদের এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে কঠোর বার্তা দিয়েছেন। যারা চাঁদাবাজির সাথে জড়িত হবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক এবং আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন তিনি।

দক্ষিণাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা

আগস্টের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু হয় আকস্মিক বন্যা। এতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে কুমিল্লা, ফেনী, লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন জেলা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবীদের দ্বারা চলে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম। ২২ আগস্ট থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণত্রাণ সংগ্রহের আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে। এতে যোগ দেয় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। একই সঙ্গে সাহায্যের হাত দেয় সারা দেশের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও শিক্ষার্থীরা।

রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক

গত ৩১ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত হয় এই মতবিনিময় সভা। এতে অংশ নেয় বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, গণফোরাম, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), জাগপা, কল্যাণ পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাসদ।

এর আগে গত ১২ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপি, ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, শাহ আলমের নেতৃত্বে সিপিবি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বে গণতন্ত্র মঞ্চ, আন্দালিব রহমান পার্থের নেতৃত্বে বিজেপি, মাওলানা সৈয়দ ফয়জুল করীমের নেতৃত্বে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরীর নেতৃত্বে এবি পার্টি, নুরুল হক নূরের নেতৃত্বে গণ অধিকার পরিষদ, হারুন চৌধুরীর নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, ববি হাজ্জাজের নেতৃত্বে এনডিএম আলাদা আলাদাভাবে মতবিনিময় করে।

সচিবদের সঙ্গে প্রথম বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা

গত ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর গত ৪ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সব পর্যায়ে সংস্কার কর্মসূচি নিয়ে বাস্তবায়ন করতে সচিবদের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টা। এর আগে গত ১২ আগস্ট নিজের অধীন থাকা মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা।

আওয়ামী লীগকে রাজনীতি না করতে দেয়ার সিদ্ধান্ত

জুলাই এর বিপ্লবের নিহতের ঘটনায় সম্পূর্ণ বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। গত ৫ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

ড. ইউনূসের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের বৈঠক

শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা। ৩ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে শতাধিক কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলে ছিলেন স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ ও মীর নাসির হোসেন, বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম এবং বিদেশি ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফআইসিসিআইর সাবেক সভাপতি নাসের এজাজ বিজয়।

ঢাকায় জিন্নাহর মৃত্যুবার্ষিকীতে পালন

গত ১১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে পাকিস্তানের জাতির জনক মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর ৭৬তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়। যা স্বাধীন বাংলাদেশে একটি বিরল ঘটনা। এসময় উপস্থিত বক্তারা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহকে তাদের জাতির পিতা আখ্যা দিয়ে, যেকোনো মূল্যে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেন। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাতের দিন ৫ আগস্টকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস হিসেবে আখ্যা দেন। তারা বলেন, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ না থাকলে পাকিস্তান সৃষ্টি হতো না, আর পাকিস্তান না থাকলে বাংলাদেশ সৃষ্টি হতো না।

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের নতুন মোড়!

অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের পরপরই বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনীতিক সম্পর্কের নতুন মোড় নেয়! প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের পর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অনেক দেশের মতো শুভেচ্ছা জানিয়েছে পাকিস্তানও। বাংলাদেশে পাকিস্তানের দূতাবাসেরও বেশ তৎপরতা দেখা গেছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার দেখা করেছেন বর্তমান সরকারের উপদেষ্টাদের সাথে। দেখা করেছেন বিএনপির নেতাদের সাথেও। একই সাথে বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা ফি বাদ দিয়েছে পাকিস্তান। সরাসরি ফ্লাইট চালু করার আগ্রহ দেখিয়েছে। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে দুদেশের শীর্ষ নেতার সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে।

পোশাক শিল্পে অস্থিরতা

গত জুলাই থেকে দেশের তৈরি পোশাক শিল্পে অস্থিরতা বিরাজ করছে। অর্ন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরও এই অস্থিরতা বিরাজমান রয়েছে। কয়েক দফায় মালিক-শ্রমিক-সরকার বৈঠক হলেও এখনো কয়েকটি কারখান বন্ধ রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে একাধিক গ্রুপের মধ্যে আশুলিয়ায় সংঘর্ষ হয়েছে। ভাংচুর, হামলা, লুট ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ  এবং নিহতের ঘটনাও ঘটেছে।

পার্বত্য অঞ্চল অস্থিরতা

খাগড়াছড়িতে চোর সন্দেহে পিটুনিতে এক বাঙালি যুবকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এই পরিস্থিতিরি জন্য একে অপরকে দায়ী করছে পাহাড়ি ও বাঙালি সংগঠনগুলো। পাহাড়ি সংগঠনগুলোর দাবি, পার্বত্য শান্তিচুক্তির সঠিক বাস্তবায়ন না হলে পাহাড়ের এই সংকট সহজে কাটবে না। যদিও পার্বত্য অঞ্চলের একটি বাঙালি সংগঠন হঠাৎই পাহাড় অশান্ত হওয়ার পেছনে অন্য রাজনৈতিক কারণ থাকতে পারে বলে দাবি করেছে।

৫৮৯ জনের পাসপোর্ট বাতিল

হাসিনা সরকারের সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে ইস্যুকৃত বিশেষ প্রাধিকারভুক্ত লাল পাসপোর্ট বাতিল এবং সংরক্ষিত ব্যক্তিগত তথ্য (ডাটা) জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া বাতিল পাসপোর্ট ব্যবহার করে তারা যাতে বাংলাদেশ ত্যাগ বা তৃতীয় কোনো দেশ ভ্রমণ করতে না পারেন সে বিষয়ে কঠোর নজরদারির নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও তাদের পরিবারের সদস্য মিলিয়ে এ পর্যন্ত ৫৮৯ জনের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে।

গত ১৫ বছরের সব অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল, জমা দেওয়ার নির্দেশ

বেসামরিক জনগণকে গত ১৫ বছরে দেওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে গোলাবারুদসহ আগ্নেয়াস্ত্র থানায় জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। গত ২৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার ফয়সল হাসান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, বিগত ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত যেসব আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বেসামরিক জনগণকে দেওয়া হয়েছে তাদের প্রদান করা লাইসেন্স স্থগিত করা হলো। একই সঙ্গে ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গোলাবারুদসহ আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন গঠন

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ছাত্র আন্দোলনে শহীদ মুগ্ধর ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধকে সাধারণ সম্পাদক করে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ গঠন করা হয়েছে। ১২ সেপ্টেম্বর বিকেলে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। 

গণপিটুনি: দুই মাসে নিহত ৩৩

দেশে গত দুই মাসে ৩৩ জনকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে গত ১৮ সেপ্টেম্বর একদিনে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুজনকে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে যে সহিংসতা শুরু হয়েছিল তা এখনো চলছে। এখনো মানুষের মধ্যে সহনশীলতা ফিরে আসেনি। সুযোগ পেলেই মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। চলতি বছর ১৫ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ৩৩ জনকে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হত্যাকাণ্ড হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল নামের এক যুবককে গণপিটুনিতে হত্যা এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে পিটিয়ে হত্যা।

বাধ্যতামূলক অবসর, ওএসডি এবং রদবদল

অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের পর পর প্রশাসনের সর্বস্তরে ব্যাপক রদবদল শুরু হয়েছে। তৃণমূল থেকে শুরু করে শীর্ষ পদে ব্যাপক রদবদল করা হয়। বিশেষ করে দুই দফায় ৫৯ টি জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া গত সরকারের ঘনিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। কাউকে কাউকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত (ওএসডি) কর্মকর্তা করা হয়েছে। এছাড়াও গত সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া সকল চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ ধাপে ধাপে বাতিল করা হয়েছে।

৬ সংস্কার কমিশন গঠনের ঘোষণা

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠনের কথা জানান। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন আবদুল মূয়ীদ চৌধুরী। আর সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে প্রথমে বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিকের নাম ঘোষণা করা হলেও পরে তা পরিবর্তন করে অধ্যাপক আলী রীয়াজকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে এসমস্ত কমিশন গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

সশস্ত্র বাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা

সেনাবাহিনীর পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীকে সারাদেশে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি বিমান ও নৌবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত অফিসাররাও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। মন্ত্রণালয়ের (প্রেষণ-২ শাখা) সিনিয়র সহকারী সচিব জেতি প্রুর সই করা প্রজ্ঞাপনে সশস্ত্র বাহিনীর (সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও তদূর্ধ্ব সমমর্যাদার) কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদেরও এ ক্ষমতা প্রদান করা হয়। প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে পরবর্তী ৬০ দিন পর্যন্ত তারা এ ক্ষমতা পাবেন। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ফৌজদারি দণ্ডবিধি ১৮৯৮-এর ১২(১) ও ১৭ ধারা অনুযায়ী সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ

গত ৫ সেপ্টেম্বর এক সাংবাদিক সন্মেলনের মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ পাঁচ নির্বাচন কমিশনার পদত্যাগ করেছেন। এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবীব খান ও মো. আলমগীর উপস্থিত ছিলেন। অন্য দুই কমিশনার রাশেদা সুলতানা ও মো. আনিছুর রহমান উপস্থিত ছিলেন না। এর আগে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি শপথ নিয়েছিল কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন।

জাতিসংঘের অধিবেশনে ড. ইউনূস

বাংলাদেশের সরকার প্রধান হিসেবে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অংশ নিয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এই সফরে তিনি বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের সাথে বৈঠকও করেছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ ১২টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সাইডলাইনে ৪০টি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকেও অংশ নেন। নানা কারণে প্রধান উপদেষ্টার এই সফরটিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা।

কূটনীতিতে ইলিশ বিতর্ক

ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানের মুখে হাসিনা সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেয়। দায়িত্বগ্রহণের তিনদিন পর ১১ আগস্ট বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী এবার পূজায় প্রতিবেশী দেশ ভারতে ইলিশ রপ্তানি না করার ঘোষণা দিয়েছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ–বিষয়ক উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। কিন্তু দেড় মাসের মাথায় সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে অন্তর্বর্তী সরকার। দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ভারতে ইলিশ মাছ রপ্তানির অনুমোদন দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই ভারতে ইলিশ রপ্তানির পক্ষে-বিপক্ষে মতামত দিয়েছেন। ভারতে ইলিশ রপ্তানি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো বির্তক চলে।

মার্কিন প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফর

শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর গত ১৪ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফর করেছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করা এবং অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে বাংলাদেশের পাশে থাকার বার্তা দেওয়া ছিলো দেশটির প্রতিনিধি দলের অন্যতম উদ্দেশ্য। যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব ও অর্থ দপ্তরের সহকারী মন্ত্রী ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলে পররাষ্ট্র দপ্তরের সহকারী মন্ত্রী ডোনাল্ড লু ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার (ইউএসএআইডি) উপ-সহকারী প্রশাসক অঞ্জলি কর ও যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ ছিলেন। 

নতুন চার দলের রাজনৈতিক নিবন্ধন

ড. ইউনূসের অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নতুন চারটি রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পেয়েছে। দলগুলো হলো-নাগরিক ঐক্য (কেটলি প্রতীক), বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদ (ট্রাক প্রতীক), গণসংহতি আন্দোলন (মাথাল প্রতীক), আমার বাংলাদেশ পার্টি-এবি পার্টি (ঈগল প্রতীক)।

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করতে আন্দোলন

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে আন্দোলন করেছে ৩৫ বছর প্রত্যাশীরা। গত ৩০ সেপ্টেম্বর কয়েক শ তরুণ এ দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারি বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেন। দাবিতে আন্দোলনকারী চাকরিপ্রত্যাশীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ব্যবহার করে। পরবর্তীতে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর করে প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

দ্বিতীয় দফায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে ড. ইউনূস

৫ অক্টোবর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবার দ্বিতীয় দফায় সংলাপ করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহণকারী দলগুলো হলো বিএনপি, জামায়াত, গণতন্ত্র মঞ্চ, গণঅধিকার পরিষদ, সিপিবি, বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন এবং এবি পার্টি।

ঢাকায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সফর

ড. ইউনূসের অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম প্রথম কোন সরকার প্রধান হিসেবে ঢাকা সফর করেছেন। গত ৪ অক্টোবর তিনি দুপুর আড়াইটায় তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। ঢাকা সফরকালে তিনি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।
 
সহকারী কমিশনার তাপসী তাবাসসুম উর্মি ইস্যু

অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি বক্তব্যে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন লালমনিরহাটের সহকারী কমিশনার তাপসী তাবাসসুম উর্মি। প্রথমে তাকে ওএসডি করা হয়, পরে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। একই সঙ্গে উর্মির বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে মানহানির মামলার আবেদন করা হয়েছে। 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন

হাইকোর্টে অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে সদ্য নিয়োগ পাওয়া বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারকে চেয়ারম্যান করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে সরকার। ট্রাইব্যুনালে সদস্য হিসেবে আছেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

সুপ্রিম কোর্ট ঘেরাও: ১২ বিচারপতির অপসারণ

সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে দুর্নীতি ও আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর হিসেবে কাজ করার অভিযোগে বিচারপতিদের অপসারণে সুপ্রিয় কোর্ট ঘেরাও করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

জানা যায়, সকালে নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠা হাইকোর্টের ১২ বিচারপতিকে চায়ের আমন্ত্রণ জানান প্রধান বিচারপতি। তাদের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া তারা আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর হিসেবেও কাজ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এরমধ্যে তাদের ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।

রাষ্ট্র সংস্কারে আরও ৪ কমিশন

রাষ্ট্র সংস্কারে আরও চারটি কমিশন গঠনের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে সরকার। এসব কমিশন হলো- স্বাস্থ্য কমিশন, গণমাধ্যম কমিশন, নারী বিষয়ক কমিশন ও শ্রমিক অধিকার কমিশন।

এর মধ্যে স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে কাজ করবেন ড. একে আজাদ খান। গণমাধ্যম সংষ্কার কমিশনের প্রধান করা হয়েছে কামাল আহমেদকে। নারী বিষয়ক কমিশনের প্রধান হিসেবে কাজ করবেন শিরিন হক। আর শ্রমিক অধিকার সংস্কার কমিশনের দায়িত্ব পেয়েছেন সৈয়দ সুলতানউদ্দিন আহমেদ।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ শুরু

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে চলা হত্যাকাণ্ডে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ শুরু হয়েছে গত ১৭ অক্টোবর। এসময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদার, ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্য বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মহিতুল হক এনাম চৌধুরী ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন।

শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের নামে পরোয়ানা

জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলন দমনের চেষ্টায় ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী’ অপরাধের দুই অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ অক্টোবর বিচারপতি গোলাম মুর্তজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

‘অগ্নিকন্যা খ্যাত’ মতিয়া চৌধুরীর মুত্যু

গত ১৬ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী মারা গেছেন। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পরের দিন মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁর স্বামী বজলুর রহমানের কবরে শায়িত করা হয়। তবে দাফনের আগে বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিয়া চৌধুরীর প্রতি রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানোর কোনো আয়োজন ছিল না।

৭ মার্চ ও ১৫ আগস্ট সহ ৮ জাতীয় দিবস বাতিল

ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোকসহ আটটি দিবস বাতিল করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।  গত ১৬ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক আদেশে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এতে ওই সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে প্রতিপালনের জন্য সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এর আগে গত সেপ্টেম্বর মাসে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাতিল হওয়া আটটি দিবসের মধ্যে রয়েছে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম দিবস ও জাতীয় শিশু দিবস, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ভাই শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী, ৮ আগস্ট শেখ হাসিনার মা বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস, ১৮ অক্টোবর শেখ হাসিনার ছোট ভাই শেখ রাসেল দিবস, ৪ নভেম্বর জাতীয় সংবিধান দিবস, ১২ ডিসেম্বর স্মার্ট বাংলাদেশ দিবস।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ইউনেসকো ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে বৈশ্বিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এরপর শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে প্রদত্ত ভাষণের দিনটিকে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ সরকার। দিবসটিকে ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত হিসেবে ঘোষণা করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে।

তৃতীয় দফায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠক

গত ১৯ অক্টোবর তৃতীয় দফায় আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে বৈঠক করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এদিন গণফোরাম, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, লেবার পার্টি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, বিজেপি ও ১২ দলীয় জোটসহ কয়েকটি দল বৈঠকে অংশগ্রহণ করে।

সংসদের ক্ষমতা বাতিল, বহাল সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল

উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণে সংসদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারপতি অপসারণ-সংক্রান্ত সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীতে বর্ণিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ব্যবস্থা সংবলিত ৯৬ অনুচ্ছেদের (২), (৩), (৪), (৫), (৬), (৭) এবং (৮) পুনর্বহালের জন্য বলা হয়েছে। 

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ২০ অক্টোবর এই রায় দেন। ফলে এখন থেকে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমেই উচ্চ আদালতের বিচারপতি অপসারণ প্রক্রিয়া কার্যকর করতে হবে। সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রধান বিচারপতি ও পরবর্তী জ্যেষ্ঠ দু’জন বিচারপতিকে নিয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠিত হবে।

শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে ফের বিতর্ক

শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে ফের নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন বলেছেন, ‘তিনি শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু তাঁর কাছে এ-সংক্রান্ত কোনো দালিলিক প্রমাণ বা নথিপত্র নেই।’ সাক্ষাৎকারটি পত্রিকাটির রাজনৈতিক ম্যাগাজিন সংস্করণ ‘জনতার চোখ’-এ প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে এই বিতর্ক শুরু হয়। রাষ্ট্রপতির এমন মন্তব্যের পর দেশজুড়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা আলোচনা চলতে থাকে।

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি: বঙ্গভবন ঘেরাও, নানা গুঞ্জন-আলোচনা

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে বঙ্গভবনের সামনে টানা দুদিন বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এদিন আন্দোলনকারীদের চেয়ে উৎসুক জনতার বেশি ভিড় দেখা গেছে। বিক্ষোভ ঘিরে বঙ্গভবনের প্রধান ফটকের সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, সেনা, র‍্যাব, এপিবিএন ও বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়। দেওয়া হয় অতিরিক্ত কাঁটাতারের নিরাপত্তা ব্যারিকেড। ২৩ অক্টোবর সকাল থেকে বঙ্গবভনের সামনে রাষ্ট্রপতি অপসারণের দাবিতে ছাত্র-জনতার উপস্থিতি ছিল। এরআগে রাত সোয়া ৯টার দিকে ‘বিপ্লবী ছাত্র-জনতার’ ব্যানারে কিছু আন্দোলনকারী পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে এলাকা ত্যাগ করে। একই দিনে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা, বাহাত্তরের সংবিধান বাতিলসহ পাঁচ দফা দাবি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এরকম পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করবেন নাকি তাঁকে অপসারণ করা হবে, পদত্যাগ করলে তিনি কার কাছে পদত্যাগ করবেন, এব্যাপারে সংবিধানে কি বলা আছে, দেশে সাংবিধানিক সংকট তৈরি করবে কিনা ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে দেশজুড়ে গুঞ্জন-আলোচনা চলে।

ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা 

আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে ২৩ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করে গত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হত্যা, নির্যাতন, গণরুমকেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নসহ নানা ধরনের জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল এবং এ সম্পর্কিত প্রামাণ্য তথ্য দেশের সব প্রধান গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এবং কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় সংগঠনটির নেতাকর্মীদের অপরাধ আদালতেও প্রমাণিত হয়েছে। 

রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টার সাথে বিএনপির বৈঠক

রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। ২৩ অক্টোবর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেয় বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। এতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালেহউদ্দিন আহমেদ।

বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য  বলেন, 'দেশে যেন কোনো সাংবিধানিক সংকট তৈরী না হয় সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।' পরবর্তীতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাষ্ট্রপতির ইস্যুতে ‘হটকারী সিদ্ধান্ত’ না নেয়ার জন্য আহ্বান জানান। এছাড়া দলটির পক্ষ থেকে এই ইস্যুটিতে নতুন একটি ষড়যন্ত্র হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।


Comments

Leave a Comment


Related Articles