Post Thumbnail

সাংবাদিকরা পালাবে কেন?


শান্ত সিংহ: ৫ আগস্ট ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর পলাতক রয়েছেন দেশের বেশ কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিক। জানা গেছে এসমস্ত সাংবাদিকদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। কারো কারো বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এর আগে সাংবাদিকদের একটি অংশকে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। পরে তাদের কারো কারো নামে গণহত্যা, হত্যা চেষ্টার মামলা করা হয়। বিশেষ করে ২৪ জুলাই গণভবনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে এসমস্ত সাংবাদিকরা সরাসরি ভাবে ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন এবং গণহত্যায় উস্কানি দিয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে ৫ আগস্টের পর তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আর এরপর থেকেই বেশ কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিক পলাতক রয়েছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সাংবাদিকরা পালাবে কেন?

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ বা হয়রানি পৃথিবীতে নতুন কিছু নয়। পৃথিবী জুড়ে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন নিপীড়ণের অভিযোগের শেষ নেই। বহু দেশে সাংবাদিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করে যাচ্ছেন। কোথাও সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে জিম্মির শিকার হচ্ছেন। গাজায় সাংবাদিকরা মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত সংবাদ সংগ্রহ করছেন। একজন সাংবাদিকের কাজে হুমকি আসবে, সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে তিনি প্রতিকূলতার শিকার হবেন, তাঁকে হয়রানি করা হবে, তিনি একটি পক্ষের রোষানলে পড়েন কিন্তু এরপরও তাকে তার কাজ করে যেতে হবে, দায়িত্বে একনিষ্ঠ থাকতে হবে- এটাই সাংবাদিকতা এবং এই পেশার সৌন্দর্য। কিন্তু বড় আশ্চর্যের যে বাংলাদেশে এর ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। ৫ আগস্টের পর কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিকের পলায়নের ঘটনা পৃথিবীতে বিরল। 

দেশ ছেড়ে পালানোর সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল হক বাবু, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, একাত্তর টিভির হেড অব নিউজ শাকিল আহমেদ এবং একাত্তর টিভির বিশেষ প্রতিনিধি ফারজানা রূপা। বর্তমানে তারা কারাগারে।

এদিকে দু দফায় ৪৯ জন সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল করেছে তথ্য অধিদপ্তর (পিআইডি)। একই সঙ্গে ২৮ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা এ নতুন কিছু নয়। এ সমস্ত হয়রানিমূলক মামলা, বিভিন্ন ধরনের হুমকি ইত্যাদি নিয়েই তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে হয়। বিশ্ব জুড়ে এমন অনেক নজির আছে যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তারা আইনের মুখোমুখি হয়েছেন, তদন্ত সাপেক্ষ ওই সমস্ত মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে এসমস্ত মামলা খারিজ হয়েছে বা তারা অব্যাহতি পেয়েছেন। কিন্তু ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর দেখা গেল কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার কারণে তারা পালিয়ে গেছেন। অথচ তাদের সাথে আরও অনেকের নামে এ ধরনের হয়রানিমূলক মামলা হয়েছে কিন্তু তারা পলায়ন করেননি। তারা ঠিকই তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। আইনগত ভাবে মামলা মোকাবিলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, কেউবা মামলা লড়ছেন। ফলে সঙ্গত কারণেই বিভিন্ন মহলে এ ব্যাপারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। তাদের এই পলায়ন কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে? প্রশ্ন উঠেছে তারা কি সত্যিই অপরাধের সাথে জড়িত? যদি তেমনটা না হয় তাহলে তারা তাদের বিরুদ্ধে আণিত অভিযোগের মুখোমুখি না হয়ে পালাবে কেন? তারা যদি সত্যি সত্যি নিরপরাধ হয়ে থাকে তাহলে আদালতে সেটা নিশ্চিয় প্রমাণিত হবে। কিন্তু এ সমস্ত সাংবাদিক মামলা হবার পরপরই, কেউ কেউ ৫ আগস্টের ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পরই পালিয়ে গেছেন। ফলে জন সাধারণের মধ্যে সাংবাদিকদের সম্পর্কে এক ধরনের নেতিবাচক ধারণা তৈরী হচ্ছে। একজন সাংবাদিক যদি মনে করেন তার কাজ কারো পক্ষে বা বিপক্ষে যাই হোক না কেন কিন্তু তার অবস্থান সঠিক মনে করছেন তাহলে সে পালাবেন কেন? তার অবস্থান যদি সঠিক হয় তাহলে তার উচিত যে কোন পরিস্থিতি তাকে মোকাবিলা করা কিংবা এর পরিণতি ভোগ করা। কিন্তু পালিয়ে যাওয়া একজন সাংবাদিকের নৈতিকতার পরিপন্থি কাজ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে এটা ঘটেছে। দেশে সাংবাদিকতা পেশা যে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে তার একটি বড় উদারহণ হল এই সাংবাদিকদের পালিয়ে যাওয়া।

 

 


Comments

Leave a Comment


Related Articles