Post Thumbnail

হ্যালোইন কি আর কেনই বা উৎযাপন করা হয়


তাশরিফা তৃষা: হ্যালোইন এর যাত্রা শুরু হয় আজ থেকে প্রায় ২ হাজার বছর আগে কেলটিক অঞ্চলের প্যাগান বা পোত্তলিকদের মাধ্যমে। সেই সময়ে আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, যুক্তরাজ্য এবং উত্তর ইউরোপের কিছু অংশ কেলটিক অঞ্চল হিসেবে পরিচিত ছিলো। কেলটিকরা ৩ দিন ধরে সামহেইন নামে একটি অগ্নি উৎসব পালন করত। যার অর্থ ছিলো মৃত্যু এবং পূণর্জন্মকে উৎযাপন করা।  

কেলটিকদের ছিলো একটি চক্রাকার বর্ষপঞ্জি যা শীত এবং গ্রীষ্ম দুটি অংশে বিভক্ত ছিলো। শীতকালকে তারা অন্ধকার ঋতু এবং গ্রীষ্মকালকে তারা আলোকিত ঋতু মনে করত। গ্রীষ্মের শেষ এবং শীতের শুরু এই সময়টাতেই তারা অগ্নি উৎসবে মেতে উঠত। আইরিশ শব্দ ‘সামহেইন’ এর ইংরেজি অর্থ হলো সামার’স এন্ড বা গ্রীষ্মের শেষ। 

যেকোনো উৎসবে সাধারণত আমরা নতুন চকচকে কাপড় পড়ে নিজেদের সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে থাকি কিন্তু কেলটিকদের ধারণা মতে অক্টোবরের ৩১ তারিখ খুবই ভয়ংকর একটি রাত। এই রাতে সমস্ত প্রেতাত্মারা তাদের নতুন সদস্য সংগ্রহ করার জন্য পৃথিবীতে আসে। তারা যেন মানুষদের কোন ক্ষতি করতে না পারে তাই তারা নিজেরা নোংরা, কুৎসিত ও ভয়ংকর কাপড় পড়ে ভুতের মুখোশে নিজেদের সাজায়। সারারাত নির্ঘুম কাটানোর জন্য তারা আগুণ জ্বালিয়ে তার চারপাশে ঘুরত। এভাবেই তারা সামহেইন উৎযাপন করত। সামহেইনকে তারা মৃতদের রাত বা শয়তানের রাতও বলে থাকত।

৪৩ খ্রিষ্টাব্দে রোমানরা কেলটিক অঞ্চল দখল করার পর থেকে সেখানে খ্রিষ্টান ধর্ম বিস্তার লাভ শুরু হয় এবং কেলটিকদের বিভিন্ন রীতিনীতি দমন শুরু হয়। অনেক এলাকায় কেলটিকদের সহজে খ্রিষ্টান ধর্মে দীক্ষিত করার জন্য তাদের প্যাগান ধর্মের রীতিনীতিকে খ্রিষ্টান ধর্মের রূপে উপস্থাপন করা হয়। তখন সামহেইন উৎসবের নাম রাখা হয় ‘অল হলোস ইভ’ বা পবিত্র সন্ধ্যা। কালের বিবর্তনে এই হলোস ইভ একসময়ে হ্যালোইন হিসেবে পরিচিতি পায়। 

আমেরিকায় ব্রিটিশ উপনিবেশ স্থাপনের প্রাক্বালে হ্যালোইন উৎযাপন নিষিদ্ধ ছিলো কারণ তখনও হ্যালোইনকে প্যাগান বা মূর্তিপূজা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ১৯ শতকের মাঝামাঝি প্রচুর আইরিশ এবং স্কটিশ অভিবাসী আমেরিকায় আসে এবং তাদের আগমনের সাথে সাথে আমেরিকায় হ্যালোইন জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে যা পরবর্তীতে ছুটির দিন হিসেবেও ঘোষিত হয়।  

অতীতে আইরিশ ও স্কটিশরা ভূত বা প্রেতাত্মা তাড়ানোর হাতিহার হিসেবে বিভিন্ন জিনিসে ভূতের মুখমণ্ডল এঁকে তাতে আগুন জ্বেলে দিত যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হতো মিষ্টি কুমড়া।

বিংশ শতাব্দীতে এসে হ্যালোইনকে বাণিজ্যিকরণ করা হয় অর্থাৎ হ্যালোইনকে কেন্দ্র করে বিক্রি শুরু হয় বিভিন্ন কস্টিউম, মুখোশ, ক্যান্ডি, মোমবাতি ইত্যাদি। বিভিন্ন হলিউড হরর মুভিতেও হ্যালোইনের ব্যাপক প্রচার চালানো হয়। বর্তমানে, ইউরোপ আমেরিকার পাশাপাশি পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও হ্যালোইন নিয়ে মাতামাতি দেখা যায়। বাংলাদেশও নেই পিছিয়ে। রাজধানীতে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা মেতে উঠে হ্যালোইন পার্টিতে। অবাক করা হলেও সত্য যে বিশ্বের সবচেয়ে রক্ষণশীল মুসলিম দেশ সোদি আরবেও পালিত হয় হ্যালোইন উৎসব।  

হ্যালোইনকে সবাই খ্রিষ্ট ধর্মের উৎসব মনে করলেও এটি আসলে কেলটিকদের উৎসব। খ্রিষ্টান ধর্মের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। খ্রিষ্টান ধর্মের নেতা পোপ ফ্রান্সিসও বলেছেন সবাই হ্যালোইনকে একটি সাধারণ উৎসব মনে করলেও এটি আসলে অন্ধকার জগতের ছদ্মবেশ। জাদুবিদ্যার অনুসারীরা ৩১ শে অক্টোবরকে শয়তানের নববর্ষ হিসেবে পালন করে থাকে।

আর এভাবেই প্রতি বছর ৩১ শে অক্টোবর ২ হাজার বছর আগের কেলটিক প্যাগানদের আঞ্চলিক উৎসব সামহেইন বর্তমানে সারাবিশ্বে হ্যালোইন হিসেবে পালিত হয়।


Comments

Leave a Comment


Related Articles