Post Thumbnail

সচিবালয়ে আগুন: দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা?


বুধবার দিবাগত মধ্যরাত ১টা ৫২ মিনিটে আগুন লাগে দেশের সবচেয়ে সুরক্ষিত এলাকা বাংলাদেশ সচিবালয়ে। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, আগুনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভবনের আট ও নয়তলা। সেখানে থাকা নথিপত্র পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সচিবালয়ের এই ভবনে রয়েছে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি মন্ত্রণালয়ের দপ্তর। অন্তর্বর্তী সরকারের দুই তরুণ উপদেষ্টা নাহিদ হোসেন ও আসিফ মাহমুদের দপ্তরও এই ভবনে। সচিবালয়ের এই ভবনে রয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দপ্তর। আরও আছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়সহ সরকারের আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর। যদিও এখন পর্যন্ত এই ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে জানা যায়নি। আগুনে সূত্রপাত সম্পর্কেও জানা যায়নি। তবে সচিবালয়ের এই অগ্নিকান্ড জনমনে নানা রকম প্রশ্ন তৈরি করেছে। এটি একটি নিছক দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা তা নিয়ে নানা রকম আলোচনা। 

বিষয়টি নিয়ে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের আইডিতে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে বলেন, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের বিগত সময়ে হওয়া অর্থলোপাট, দুর্নীতি নিয়ে আমরা কাজ করছিলাম। কয়েক হাজার কোটি টাকা লুটপাটের প্রমাণও পাওয়া গিয়েছিল। ফলে নাশকতার বিষয়টিও উড়িয়ে দিচ্ছেন না কেউ কেউ। ইতিমধ্যে আগুন লাগার ঘটনার কারণ উদ্‌ঘাটন করতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের পরই আসলে পরিষ্কার হবে এটি কি শুধুই দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা সচিবালয়ের এই অগ্নিকান্ডের ঘটনা জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। কেউ এটিকে দুর্ঘটনা বলছেন আবার কেউ একে নাশকতা বলছেন। যদিও এর স্বপক্ষে কোন পক্ষই তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করেনি। তদন্তেই এর সঠিক কারণ জানা যাবে। 

উল্লেখ্য যে, গত কয়েক মাস ধরেই সচিবালয়ের ভেতর এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিশেষ করে গত সপ্তাহ থেকে সেটি আরও বেড়ে যায়। বিভিন্ন দাবিদাওয়া, আন্ত:ক্যাডার বৈষম্যের অভিযোগ, পদোন্নতি, জনপ্রশাসন সংস্কার ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে সচিবালয়ে এক ধরনের অস্থিরতা লক্ষ্য করা গেছে। সর্বশেষ গতকাল জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীকে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দেয় বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড। কিন্তু এই বিষয়গুলোর সাথে অগ্নিকান্ডের ঘটনাকে সম্পৃক্ত করার কোন যৌক্তিক কারণ নেই। এর স্বপক্ষে কোন তথ্য প্রমাণও নেই। তবে বিষয়গুলো সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিরি উন্নতি হবে না ততক্ষণ পর্যন্ত এধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনাগুলো ঘটতেই থাকবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ। সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতির জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির উপর জোর দিচ্ছেন তারা।


Comments

Leave a Comment


Related Articles