Post Thumbnail

যেভাবে অনুষ্ঠিত হবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন


রাত পোহালেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এবারের নির্বাচনকে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম সন্ধিক্ষণ হিসেবে অভিহিত করছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতিসহ মিত্র রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক এবং বিশ্ব ব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রে দেশটির এত দিন ধরে চলা দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থানের জন্য কঠিন পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে আগামীকাল ৫ নভেম্বরের  নির্বাচনকে। সারা বিশ্বের নজর এখন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের দিকে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। রবং অন্যান্য যে কোনও বারের চেয়ে এবার মার্কিন নির্বাচনের বেশি হাওয়া লেগেছে বাংলাদেশে। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পট পরিবর্তন এবং ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্ট ঘিরে এই আগ্রহ অন্য দিকে মোড় নিয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশ একটি পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে৷ শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আসা অন্তর্বর্তী সরকার নানা ধরনের সংস্কার কার্যক্রমের উদ্যোগ নিয়েছে৷ আছে নির্বাচনের তাগিদ৷ ড. ইউনূসের সরকারকে শুরু থেকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন৷ ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস নির্বাচনে জিতলে সেই সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষকেরা৷ কিন্তু রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প জিতলে কী হবে? এই সমর্থন কি চলে যাবে? অন্তর্বর্তী সরকার কি মার্কিন চাপে পড়বে? ট্রাম্প জিতলে আওয়ামী লীগের জন্য কি রকম সুবিধা হবে ইত্যাদি নিয়ে চর্চা হচ্ছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা পরিবর্তন হলে বাংলাদেশ নিয়ে দেশটির তেমন কোনও বৈদেশিক নীতির পরিবর্তন হবে না বলেই মনে করছেন কূটনীতিক বিশ্লেষকেরা। যদি ট্রাম্পের ওপর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটা বড় প্রভাব আছে বলে সর্বজন স্বীকৃত। এ নিয়ে বেশ চর্চাও রয়েছে। ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের এখন যে সম্পর্ক তাতে ট্রাম্প জিতলে নরেন্দ্র মোদি তাকে প্রভাবিত করতে চাইবেন৷ বিশ্লেষকদের মতে তার ফল এমন হবে না যে, ট্রাম্প হাসিনা সরকারকে আবার বসাতে চাইবে৷

ট্রাম্পের বক্তব্য ও বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট

ট্রাম্প সম্প্রতি তার এক্স বার্তায় লিখেছেন, ‘আমি বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর বর্বরোচিত সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি৷ দেশটিতে দলবদ্ধভাবে তাদের ওপর হামলা ও লুটপাট চালানো হচ্ছে৷ বাংলাদেশ এখন পুরোপুরিভাবে একটি নৈরাজ্যকর অবস্থার মধ্যে রয়েছে৷’

বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, সরকার পরিবর্তন হলেও মার্কিন বিদেশ নীতিতে সাধারণত বড় ধরনের পরিবর্তন হয় না৷ তবে ডেমোক্র্যাট আর রিপাবলিকানদের রাজনীতিতে পার্থক্য আছে৷ আছে নিজস্ব চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গিও৷ সেই বিবেচনায় কমলা হ্যারিস ও ট্রাম্পের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে৷ বাংলাদেশকে তা বিবেচনায় রাখতে হবে৷

আবার কেউ কেউ বলছেন, ‘আবারো ডেমোক্র্যাটরা ক্ষমতায় এলে, কমলা হ্যারিস মার্কিন প্রেসিডেন্ট হলে বাংলাদেশে বর্তমানে যে সরকার আছে তাদের জন্য সুবিধা হবে৷ তাদের সংস্কার কাজ, নির্বাচন এগুলো করা সহজ হবে৷ কারণ আগে থেকেই জো বাইডেন সমর্থন দিয়ে রেখেছেন৷’ এক্ষেত্রে ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে ইউনূস সরকারের সাথে মার্কিন প্রশাসনের এই সুসম্পর্ক নাও থাকতে পারে। 

এদিকে ভারতীয় উপমহাদেশে বাংলাদেশকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত মুখোমুখি হয়ে গেছে৷ ট্রাম্প নির্বাচিত হলে তার পরিবর্তন হবে৷ মোদি ফ্যাক্টর কাজ করবে৷ কারণ ট্রাম্প আর মোদির মধ্যে সম্পর্ক অনেক ভালো৷ সেক্ষেত্রে কারো কারো মতে, ট্রাম্প জিতলে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একটি ফ্যাক্টর হবেন৷ আর ট্রাম্পের সঙ্গে তার সম্পর্কের জন্য তিনি চাইবেন বাংলাদেশ নিয়ে ট্রাম্প যেন তার চিন্তায় চিন্তা করেন৷ যদিও সেটা পুরোপুরি হবে না৷ তারপরও মোদি যে চেষ্টা করবেন সেটা বলাই বাহুল্য।

যেভাবে হবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট মার্কিন

সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট নয়, বরং মার্কিন প্রেসিডেন্ট কে হবেন, তা নির্ধারণ করে ‘ইলেকটোরাল কলেজ’। ইলেকটোরাল কলেজ নামের ব্যবস্থায় ৫৩৮ জন ইলেকটর নির্বাচিত হন। তারাই শেষমেশ নির্ধারণ করবেন, যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হবেন।

ইলেকটোরাল কলেজে ৫০টি অঙ্গরাজ্যের নির্দিষ্টসংখ্যক প্রতিনিধি থাকবেন। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উভয় কক্ষ মিলিয়ে রাজ্যটির যত প্রতিনিধি, সেটাই হলো তার ইলেকটরদের সংখ্যা।

হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভসে (কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ) একটি রাজ্যের প্রতিনিধি সংখ্যা নির্ভর করে রাজ্যটির জনসংখ্যার ওপর। অপর দিকে সিনেটে প্রতি রাজ্যের দুটি করে আসন থাকে। সব মিলিয়ে ৫০টি রাজ্যের ৪৩৫ জন রিপ্রেজেন্টেটেটিভ ও সেই সঙ্গে ১০০ জন সিনেটর। এ ছাড়া ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ার তিনজন ইলেকটর। সব মিলিয়ে ৫৩৮টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট। জনসংখ্যার দিক থেকে ক্যালিফোর্নিয়ায় সবচেয়ে বেশি ৫৪টি ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে। অপর দিকে ভারমন্টের সর্বসাকল্য তিনটি ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে। নির্বাচনে জিততে হলে কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে সংখ্যাগরিষ্ঠ বা অন্তত ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট পেতে হবে।

নির্বাচনে প্রভাবশালী দল কারা

মার্কিন রাজনীতিতে সবচেয়ে প্রভাবশালী দল মাত্র দুটি-রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টি। সাধারণত এই দুই দলের যেকোনো একটি দল থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। অবশ্য ছোট ছোট কিছু রাজনৈতিক দল যেমন লিবার্টারিয়ান, গ্রিন, ইন্ডিপেনডেন্ট পার্টি–তারাও কখনও কখনও প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী মনোনয়ন ঘোষণা করে। রিপাবলিকান পার্টি একটি রক্ষণশীল দল হিসেবে পরিচিত। এ দলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট ছিলেন আব্রাহাম লিঙ্কন, জর্জ ডাব্লিও বুশ ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। অপরদিকে ডেমোক্রেটিক দল তুলনামূলকভাবে উদারনৈতিক রাজনৈতিক দল। দলটি থেকে উল্লেখযোগ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট ছিলেন জন এফ কেনেডি, বিল ক্লিনটন, বারাক ওবামা এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

কোন অঙ্গরাজ্যে কতটি ইলেক্টোরাল ভোট

বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়ায় ৫৫টি, টেক্সাসে ৩৮টি, ফ্লোরিডায় ২৯টি, নিউইয়র্কে ২৯টি, পেনসিলভানিয়ায় ২০টি, ইলিনয়ে ২০টি, ওহাইওতে ১৮টি, জর্জিয়ায় ১৬টি, মিশিগানে ১৬টি, নর্থ ক্যারোলাইনায় ১৫টি, নিউজার্সিতে ১৪টি, ভার্জিনিয়ায় ১৩টি, ওয়াশিংটন ডিসিতে ১২টি, ইন্ডিয়ানায় ১১টি, টেনেসিতে ১১টি, অ্যারিজোনায় ১১টি, ম্যাসাচুসেটসে ১১টি, মিনেসোটায় ১০টি, উইসকনসিনে ১০টি, মিসৌরিতে ১০টি, ম্যারিল্যান্ডে ১০টি, সাউথ ক্যারোলাইনায় ৯টি, কলোরাডোয় ৯টি, আলাবামায় ৯টি, কেন্টাকিতে আটটি, লুইজিয়ানায় আটটি, ওরিগনে সাতটি, কানেকটিকাটে সাতটি, ওকলাহোমায় সাতটি, কানসাসে ছয়টি, আইওয়াতে ছয়টি, আরকানসাসে ছয়টি, নেভাদায় ছয়টি, ইউটায় ছয়টি, মিসিসিপিতে ছয়টি, নেব্রাস্কায় পাঁচটি, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ায় পাঁচটি, নিউ মেক্সিকোতে পাঁচটি, আইডাহোতে চারটি, রোড আইল্যান্ডে চারটি, হাওয়াইতে চারটি, নিউ হ্যাম্পশায়ারে চারটি, মন্টানায় তিনটি, নর্থ ডাকোটায় তিনটি, ভারমন্টে তিনটি, মেইনে চারটি, ডেলাওয়ারে তিনটি, ওয়াইওমিংয়ে তিনটি, সাউথ ডাকোটায় তিনটি, আলাস্কায় তিনটি এবং ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়াতে তিনটি ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে।

ইলেক্টোরাল কলেজের সুবিধা-অসুবিধা

সুবিধা:
• ছোট অঙ্গরাজ্যগুলি প্রার্থীদের কাছে গুরুত্ব পায়। • প্রার্থীদের গোটা দেশ ঘোরার দরকার হয় না, গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যগুলির প্রতি নজর দিলেই চলে। • কর্মকর্তারা একটি অঙ্গরাজ্যের সমস্যা সহজে চিহ্নিত করতে পারেন, ফলে পুনর্গণনা সহজ হয়।

অসুবিধা:

• সাধারণ মানুষের ভোটে জয়ী প্রার্থীও নির্বাচনে হেরে জেতে পারেন। • ভোটারদের একাংশের মনে হয়, তাঁদের ব্যক্তিগত ভোটের কোনো মূল্য নেই। • কথিত ‘সুইং স্টেট’গুলির হাতে অত্যধিক ক্ষমতা।

 


Comments

Leave a Comment